আজ কালীঘাটে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। লোকসভা ভোটে কুড়িটি আসনে শোচনীয় পরাজয়ের পর এই প্রথম তার চুলচেরা বিশ্লেষণে বসছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ডাকা হয়েছে ৪২ জন প্রার্থীকেই, ডাকা হয়েছে জেলা সভাপতি পর্যবেক্ষক তথা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের। এই বৈঠকে কি সমস্ত “ফেল” করা নেতাদের সরানো হবে দায়িত্ব থেকে ? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলে। কুড়িটি আসন হারলেও তৃণমূলের গায়ে সবচেয়ে বেশি লাগছে ১২৯ টি বিধানসভায় বিজেপির এগিয়ে থাকা। উত্তরবঙ্গের ৬টি লোকসভা আসনের মধ্যে একটিও জিততে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। এই আসনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই দায়িত্বে ছিলেন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল, কলকাতায় বসে পর্যবেক্ষক নাকি জেলা সভাপতিদের থেকে বেশি সক্রিয় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে। কলকাতায় বসেই জঙ্গলমহল সামাল দিতেন মুখ্যমন্ত্রী সাংসদ ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর,পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর সবেতেই উঠেছে গেরুয়া ঝান্ডা। কেবলমাত্র ঘাটালে অভিনেতা দেব নিজস্ব কারিশমায় তৃণমূলের আসনটি ধরে রেখেছেন। এছাড়াও কোপ পড়তে পারে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ওপরেও। উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচটি আসনের মধ্যে দুটি ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। ব্যারাকপুরে অর্জুন সিং ও বনগায় শান্তনু ঠাকুর জয়ী হয়েছে পদ্ম প্রতীকে। হুগলি জেলার সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বেজায় চাপে। হুগলি জেলার ৩টি আসনের মধ্যে একটি জিতে নিয়েছে বিজেপি। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের দুবারের সংসদের রত্না দে নাগকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন অভিনেত্রী তথা বিজেপির মহিলা নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে মাত্র আড়াই হাজার ভোটে কোনওরকমে জয় পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার। বর্ধমান পূর্ব ও পশ্চিমের ৩ টি আসনের মধ্যে দুটিতে জিতেছে বিজেপি। আসানসোলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয় ও বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রবীণ নেতা সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া পদ্ম প্রতীক নিয়ে আবারো সংসদে যাচ্ছেন। বর্ধমান ও হুগলিতে জেলা সভাপতিদের দায় থাকলেও এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে অরূপ বিশ্বাসকে। এই লোকসভা ভোটের ফলাফল তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের কার্যত কোমর ভেঙে দিয়েছে বলেই দাবি করেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস সাসপেন্ড করেছে মুকুলের পুত্র তৃণমূলের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়কে। তাঁর পথ ধরেই বিজেপি নেতৃত্বের দাবি প্রায় শ’খানেক তৃণমূল বিধায়ক এবার বিজেপিতে যোগ দেবেন। এমন ভাঙনের মুহূর্তে তৃণমূল নেত্রী কী কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন ? এখন সেটাই দেখার!

নীল রায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.