দুজনের মধ্যে সম্পর্ক কোনওদিনই বন্ধুত্বের নয়। দুজনের অনুগামীর দলও আলাদা। নির্বাচনে তৃণমূলের হতাশাজনক ফলের পর পরষ্পরের প্রতি আরও আক্রমণাত্মকহয়ে উঠলেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত ও বিধাননগরের বিধায়ক ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু।
সব্যসাচী বলছেন, সুজিত ‘ফেল‘ করেছেন। তাই তাঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া উচিত।
কীসে ‘ফেল‘ করেছেন সুজিত?
বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধাননগর বিধানসভায় ১৮ হাজার ভোটে বিজেপি-র থেকে পিছিয়ে তৃণমূলের প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার। কাকলি জয়ী হলেও সেই জয়ের পিছনে ছিল সব্যসাচীর বিধানসভা কেন্দ্রে পাওয়া ২৫ হাজারের লিড।
সব্যসাচী বলেন, “বারাসাত কেন্দ্রে নিজেকে কাণ্ডারী ভেবেছিলেন সুজিত। যিনি নিজেকে কাণ্ডারী বলে নিজের বিধানসভায় লিড দিতে ব্যর্থ হন, ১৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকেন, তাঁকে দল হয়তো রাখবে না।“ তাঁকে দলের না রাখাই উচিত বলে সাফ জানান সব্যসাচী।
পাল্টা আক্রমণ করে সুজিত বসু বলেন, “ওর কথায় আমি উত্তর দিতে চাই না। আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই কে কী বলছেন, তা নিয়ে আমি ভাবতেও চাই না, মাথা ঘামাতেও চাই না। সব্যসাচী নিজে বিধাননগরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সেই ওয়ার্ড-সহ আরও বেশ কটি ওয়ার্ডে দল অনেকটা পিছিয়ে ছিল।“
নির্বাচনের দিন কাকলিকে সব্যসাচীর কথা বলাতে তিনি বলেছিলেন “হু ইজ় হি”। কিন্তু সেই সব্যসাচীর বিধানসভা কেন্দ্রেই সবচেয়ে বেশি, ২৫ হাজার লিড পেয়েছেল কাকলি। সেই প্রসঙ্গে সব্যসাচী বলেন “কাকলি আমার সম্পর্কে হু ইজ় হি বললেও আমি পরে আইসক্রিম খাইয়েছিলাম। আর সুজিতের কেন্দ্রে কেন ১৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে গেলেন, তা সুজিতকে জিজ্ঞাসা করুন। সুজিত তো নিজেকে কাণ্ডারী ভেবেছিলেন, সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যিনি নিজেকে কাণ্ডারী বলে নিজের বিধানসভায় হেরে গেছেন, তাঁকে দল হয়তো রাখবে না। সেটাই হওয়া উচিত।”
কাকলি ও সব্যসাচীর মধ্যেও সম্পর্ক কোনওকালে তেমন মধুর নয়। সেটা ভোটের দিন কাকলির মন্তব্য থেকেও স্পষ্ট। তবে কাকলি শুধু বিধাননগর কেন্দ্রেই নয়, ২০ হাজার ভোটে পিছিয়ে গেছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কেন্দ্র হাবরাতেও।
এমনিতেই বেশ কয়েক মাস ধরে তৃণমূল নেতৃত্ব সব্যসাচীকে বাঁকা চোখে দেখেন। তাঁর বাড়িতে মুকুল রায়ের লুচি-আলুর দম খেতে যাওয়া নিয়ে কম তোলপাড় হয়নি। ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরা তাঁকে নিয়ে সুজিতের ক্লাব শ্রীভূমিতে মিটিংও করেছিলেন। দোলের দিন সব্যসাচীকে ভারত মাতা কি জয় স্লোগান দিতেও দেখা যায়। অনেকেই ভেবেছিলেন সব্যসাচী বিজেপিতে গেলেন বলে। কিন্তু ফল বেরোনোর পর দেখা গেল তিনি আড়ালে থেকে দলের হয়ে কাজ করে গেছেন।
এ বার সুজিতকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া উচিত, সব্যসাচীর এই মন্তব্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কী ভাবে নেবে, সেটাই দেখার।