একই দিনে শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডেই করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করবে কলকাতা পুরসভা। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশের সঙ্গে শহরের সাফাইকর্মীদের মতো প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধাদের টিকাকরণের প্রথম তালিকায় রাখা হয়েছে। এর পর পঞ্চাশোর্ধ কো-মর্বিডিটি আছে এমন প্রবীণ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের করোনার টিকা দেবে পুরসভা। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে চিকিৎসার সমস্ত বন্দোবস্ত করবে তারা৷
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ভ্যাকসিনেশনের কাজ শুরু হতে পারে সারাদেশে। তার আগে প্রস্তুত রাজ্য সরকার। প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা পুরসভাও। মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার এই সংক্রান্ত বিশেষ বৈঠক হয়। প্রত্যেকটি হেলথ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌমিত্র ঘোষ। সেইসঙ্গে নবান্নের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুরসভার বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ভ্যাকসিনের জন্য কোভিড-যুদ্ধে সামনের সারিতে থাকা পুরকর্মীদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি, রবিবারের মধ্যে প্রত্যেকটি বিভাগকে সেই কর্মীদের অন্তত ৮০ শতাংশের তালিকা পুরসচিবের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে কলকাতা পুরসভা একটি টাস্কফোর্স তৈরি করেছে বলেও জানা গিয়েছে। আগামী শুক্রবার সেই টাস্কফোর্সের বৈঠক হওয়ার কথা।
পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এদিন জানিয়েছেন, “শহরের প্রতিটি পাড়ায় টিকাকরণের নেটওয়ার্ক আমাদের প্রস্তুত। এমনকী, ওয়ার্ডভিত্তিক কোল্ড স্টোরেজ চেন রয়েছে। প্রয়োজন পড়লে আরও ফ্রিজার ভাড়া করা হবে।” তিনি জানিয়েছেন, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যে স্বাস্থ্যকর্মী, জঞ্জাল সাফাইকর্মীরা সামনের সারিতে থেকে মাঠে নেমে কাজ করেছেন, তাঁদের আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের ফিল্ডকর্মীরাও অগ্রাধিকার পাবেন। টিকাকরণ কর্মসূচি চলার সময় পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের ছুটি বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
মঙ্গলবারই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসক ও পুরসভাগুলির কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত এই তালিকা তৈরি করতে বলে দেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম দফায় বিনা পয়সায় কোভিড যোদ্ধাদের এই ভ্যাকসিন দিতে চায়। রাজ্য সরকার কোভিড যোদ্ধাদের একটা তালিকা তৈরি করেছে। আমরা চাই নিখুঁত হোক সেই তালিকা।’ বৈঠকে মুখ্যসচিব আরও জানান, এখনও কয়েকদিন সময় রয়েছে। পুরকর্মী, সাফাই কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী, রেভিনিউ কর্মী–যাঁরাই কোভিড যুদ্ধে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন তাঁদের একজনের নামও যেন বাদ না-পড়ে। এই তালিকা ভালো করে পরীক্ষা করে সরকারি পোর্টালে আগামী দু’-একদিনের মধ্যেই তুলে দিতে হবে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের তালিকা তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়েছে। সেই সঙ্গে সব পুরকর্মীরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, ভ্যাকসিন বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পরই স্বাস্থ্য দফতরের রেফ্রিজারেটেড বা ভ্যাকসিন ভ্যানে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় সেগুলি বাগবাজারে মেডিক্যাল স্টোরে নিয়ে গিয়ে রাখা হবে। জেলাগুলিতে স্বাস্থ্য দফতরে যে সব ডিস্ট্রিক্ট রির্জাভ স্টোর রয়েছে, সেগুলিতেও পরে ভ্যাকসিন রাখা হবে। এগুলিতে -৩ ডিগ্রি বা -৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো তাপমাত্রা রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ড্রাই আইসও ভ্যাকসিনের সংরক্ষণে ব্যবহৃত হবে। ভ্যাকসিন যাবে কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেও।