২১-র নির্বাচন : হিন্দুর অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই

বঙ্গে তিনি আসিতেছেন।তাহারই দূরাগত অস্পষ্ট পদধ্বনি শোনা যাইতেছে।দিকে দিকে,দলে দলে,জনে জনে, সাজো সাজো,গোছাও গোছাও,ধরো ধরো…ব্যস্ততা পরিলক্ষিত হইতেছে।শীতের অবসানের হাত ধরিয়া সূর্যদেবের উত্তাপ বাড়িতেছে ক্রমশ।সেই সাথে বঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপও ঊর্ধ্বমুখী হইতেছে।আপামর বঙ্গবাসীর মনে তাহার আগমনের বার্তা পৌঁছাইতেছে।সেই সাথে তাঁহাদের মনে ভয়ও বাড়িতেছে।তাঁহারা অজানা ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়িতেছেন।

তিনি আসিতেছেন…আসিতেছেন…

বঙ্গের বৃহত্তম রাজনৈতিক “দুর্গোৎসব” ভোট আসিতেছে !! ইহা যেন-তেন ভোট নহে।পাতিজাতের পঞ্চায়েত বা সমবায় সমিতির একটি আসনের উপ-নির্বাচন নহে ! আসিতেছে খাঁটি অভিজাত খানদানের সম্পূর্ণ ভাবে বিধানসভা ভোট ! যাহাতে জিতিতে পারিলেই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে গিয়া আগামী পাঁচ বৎসরের জন্য জাকাইয়া বসা যায় ! আর বসিতে পারিলে তো কথাই নাই ! সবকিছুই নিরুদ্বিঘ্নে নিদ্রা দিতে দিতে করা যাইবে ! তাই আতিপাতি চুনোপুঁটি হইতে শুরু করিয়া বৃহত্তর রোহিত মৎস্য পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দল মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শি দখলের স্বপ্নে বিভোর হইয়া উঠিয়াছেন ! তবে সকলেই জানেন যে,স্বপ্নে বিভোর হইলেই স্বপ্ন সফল হইবে না। তাই রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ও মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শি দখলের আকাঙ্খী সকলেই নিজ নিজ গুণকীর্তন,ভেল্কিবাজি,দল বদল,গিরগিটির মতো রঙ বদল এবং নিরীহ ভোটারের মন জয় করার জন্য নানাবিধ বাচনিক কসরৎ প্রদর্শন করিতেছেন ! করাইতেছেন ! নেতাগণ হস্তজোড়ে ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাইয়া নিজ নিজ ত্রুটি স্বীকার করিতেছেন।তিনি পুনরায় জিতিলে ভোটারের কি কি সুযোগ সুবিধা হইবে তাহার লম্বা তালিকাও গড়গড় করিয়া মুখস্ত শুনাইতেছেন ! একদা এক নেতা কহিয়া ছিলেন, “আমি পাঁচ বৎসর অন্তর একবার, ভোটের আগে একবার করিয়া ভোটারের সামনে হাতজোড় করিয়া দাঁড়াই।আর ভোটার পাঁচ বছর ধরিয়া আমার সামনে হাতজোড় করিয়া দাঁড়ায় !”

   বঙ্গে মমতা তথা তৃণমূল দশ বৎসর ক্ষমতায় রহিয়াছে।এতদিনে মনে পড়িয়াছে জনগণ সরকারী সুবিধা পান নাই।তাই "দুয়ারে সরকার" বা "পাড়ায় পাড়ায় সমাধান" লইয়া বুথে বুথে দৌড়াইতেছে মমতার তৃণমূল।জনতা যে তাঁহার উপর হইতে কৃপাদৃষ্টি সরাইতেছেন,তাহা মমতা এবং তাঁহার স্তাবকবৃন্দ বিলক্ষণ বুঝিয়াছেন। এই দশ বৎসরে রাজ্যের কী কী উন্নতি হইয়াছে,তাহা জনতা নিজ পাড়ার অভিজ্ঞতা দিয়াই বুঝিয়াছে।নারীর সম্ভ্রম গিয়াছে।অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন নারী ! যাহার নাম আবার মমতা !! ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সুবিচার পান নাই।হিন্দুর ধর্মীয় অধিকার খর্ব হইয়াছে।কখনও-বা  হিন্দুদের সেই অধিকার পুরোপুরি ছাড়িতে হইয়াছে।বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজা করার অধিকার রক্ষার দাবিতে পুলিশের লাঠির আঘাতে কিশোরীর মাথা ফাটিয়াছে।অথচ শিক্ষাঙ্গণে সরস্বতী পূজা আবহমান কাল ধরে ভারতবর্ষে চলিয়া আসিতেছে।তৃণমূলী শাসন কালে রাজ্যে কুড়িটিরও বেশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হইয়াছে। যাহাতে বরাবরের মতো হিন্দুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে।প্রশাসন তাহাদের পাশে দাঁড়ায় নাই।তাহার মন্দির ধূলিস্যাৎ হইয়াছে।তাহার ঘরের নারীরা সম্ভ্রম হারাইয়াছে।

 মুসলিম-তোষণ রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর একটি ঘোষিত কর্মসূচী।ক্ষমতায় আসিয়াই তিনি ঘোষণা করিয়া ছিলেন যে,তিনি মুসলমানদের জন্য আলাদা হাসপাতাল বানাইবেন ! তিনি প্রকাশ্যেই কহিয়াছেন, মুসলিম ভোটার-রূপ 'দুধেল গরু'-র লাথি খাইতে  তিনি প্রস্তুত আছেন ! নির্বাচনে জেতা একজন মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে ইহা শোভনীয় কতটা ! 

 রাজ্যের বিরোধীরা কহিয়া থাকেন যে,তৃণমূলীরা উপর হইতে নীচে পর্যন্ত সকলেই দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত ! মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় রঙ নীল-সাদার রাজ্যের একমাত্র ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নাকি তাঁহার কোনো ঘনিষ্ঠ জন।তাই সরকারি সবকিছুতেই নীল-সাদা রঙ বাধ্যতামূলক করা হইয়াছে ! তাঁহারা ইহাও অভিযোগ তুলেন যে,করোনা-কালে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রতিটি কোভিড টেস্টের জন্য ঐ ঘনিষ্ঠ জনকে চার শত টাকা করিয়া "কাট মানি" দিতে হয়।যে-সব প্রতিষ্ঠান ইহা দিতে চায় নাই বা দিতে অপারগ হইয়াছে,তাহাদের কোভিড টেস্টের লাইসেন্স কাড়িয়া লওয়া হইয়াছে। বা অন্যান্য অজুহাতে টেস্ট বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হইয়াছে --এইরুপই অভিযোগ করেন রাজ্যের বিরোধীরা।

রাজ্যবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলী শাসক কী কী করিয়াছেন তাহা যথেষ্ঠ গবেষণার বিষয় ! এবং সময় সাপেক্ষও বটে ! এই বিষয়ে গবেষণা করিলে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে আর “টুকলি” করিয়া ‘ডক্টরেট’ বা ‘পি.এইচ.ডি.’ করিতে হইত না ! এবং লোকে তাঁহাকে “টুকলি-মন্ত্রী”-ও কহিত না !!

  দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তীর পর,বঙ্গে যে কয়টি নির্বাচন হইয়াছে,সেগুলিতে মূলত রাজনৈতিক ইস্যুগুলিই প্রাধান্য পাইয়াছে। তাহা সে কংগ্রেসের জমিদারতন্ত্রই হৌক।সিপিএমের লোক ক্ষ্যাপানো কৃষক-শ্রমিক-মজুরদিগকে কারখানার মালিক বানানোর হুজুগে প্রপাগন্ডাই হোক,বা ২০১১ সনে তৃণমূলীদের সিপিএম-বিরোধীতা করিয়া ক্ষমতা দখলই হৌক--সবই ছিল রাজনৈতিক বিষয়কেন্দ্রীক।রাজ্যের উন্নয়ন-অবনয়ন ইত্যাদি লইয়া।

   কিন্তু, ২০২১ সনের বঙ্গীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন ইস্যু ভিত্তিক হইবে।রাজনৈতিক দলগুলি নানারূপ বাধ্যবাধকতার কারণে বঙ্গের উন্নয়ন-অবনয়ন-জীবন জীবিকা লইয়া কহিবেন।একটু সতর্ক দৃষ্টি রাখিলেই অনুভব করা যাইতেছে যে,এবারের নির্বাচন হইবে হিন্দু-মুসলিম ধর্ম ভিত্তিক।একদিকে হিন্দুর জীবন-ধর্ম-মাতৃজাতির মানসম্মান অন্যদিকে ইসলামের বিস্তারবাদ ! একদিকে হিন্দুকে ইসলামে ধর্মান্তরীত করা।হিন্দুকে বঙ্গচ্যুত করা।অন্যদিকে বঙ্গকে বাংলাদেশের সহিত জুড়িয়া লইয়া বৃহত্তর ইসলামিক স্টেট গড়া।
হিন্দুদিগের চিন্তনের সময় আসিয়াছে যে,প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান,তৎপরে বাংলাদেশ হইতে বিতাড়িত হইয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হওয়া ! এইবার যদি বঙ্গ হইতে বিতাড়িত হন,কোথায় আশ্রয় লইবেন ? পশ্চিম বা অধুনা পাকিস্তানে নাকি অধুনা বাংলাদেশে ? হিন্দুদের ভাবনায় সময় আসিয়াছে কি, নাকি নাসিকায় ঘৃত মর্দন করিয়া আরেকটু সুখনিদ্রা দিয়া লইবেন !!
পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের সহিত জুড়িয়া দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক দূরই আগাইয়া গিয়াছে।খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কান্ডে দেশের গোয়ান্দাগণ ইহার হদিশ পান।তৎপরবর্তীকালে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীতার নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়কালে মৌলবাদীরা রাজ্যের বৃহত্তর অংশকে দীর্ঘদিবস বিচ্ছিন্ন করিয়া রাখিয়াছিল।তৃণমূলী-মুসলিমপ্রেমী রাজ্য প্রশাসন কিছুই করিতে পারে নাই।

ফসলের ভূমিতে আগাছাকে বাড়িতে দিলে যাহা হয়,বঙ্গের অবস্থাও তাহারই অনুরূপ হইয়াছে।কংগ্রেস-বামফ্রন্ট-তৃণমূল ভোটের স্বার্থে মুসলমানদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়া তাহার বৃদ্ধিতে সর্ব প্রকারে সাহায্য করিয়াছে।

বিষবৃক্ষে ফল ধরিতে শুরু করিয়াছে !

রাজ্যের রাজধানী কলিকাতা-সহ শহরতলী ও অন্যান্য বড়ো শহরগুলির দিকে দৃষ্টি দিউন,দেখিবেন চারিপাশ দিয়া মুসলিমগণ জনসংখ্যায় বেড়িয়া ধরিয়াছে।মানব শরীরে মাংস-অস্থি পাঁজরের মধ্যে যেরূপ হৃদপিন্ড ধুকপুক করে,তদ্রূপ শহরগুলির মধ্যভাগে হিন্দুগণ খাবি খাইতেছেন ! রাতের অন্ধকারেই হউক বা রৌদ্রালোকিত দিবাভাগেই হউক অকস্মাৎ যদি অস্ত্র হাতে "আল্লাহু আকবর" বলিয়া কেহ হিন্দুদিগের উপর লম্ফ দিয়া পড়ে, সেইক্ষণে হিন্দুগণ কী করিবেন ? কদাচ ইহা ভাবিয়া দেখিয়াছেন কী ? "হরি হরি,আহাঃ মরি মরি,প্রেমসিন্ধু হে"--বলিয়া সাফল্যের সহিত পৃষ্ঠপ্রদর্শন পূর্বক পলাইবেন, নাকি বঙ্কিমচন্দ্রের "আনন্দমঠ"-এর 'সন্তান সেনা'দের মতো "হরে মুরারে মধুকৈটভারেঃ" বলিয়া শত্রু নিধনে ঝাঁপাইয়া পড়িবেন ? যাহা করিতে চান,হিন্দুগণ পূর্বেই তাহা স্থির করিয়া রাখুন।না-হইলে গৃহে আগুন লাগিলে পুষ্করণী খুঁড়িতে বসিতে হইবে।আর ততক্ষণে ঘরগৃহস্থালী-জীবন-ধর্ম সবই অগ্নিশুদ্ধ হইয়া যাইবে।নোয়াখালি বলুন,১৯৪৬-এর 'গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং' বলুন, বা তৃণমূলী জমানার বাদুরিড়া,ধুপগুড়ি যাহাই বলুন হিন্দুগণ মরিয়াছে বেশি ! গ্রামের দিকে ইতিমধ্যেই অনেক গ্রাম হিন্দু শূন্য হইয়াছে। ২০২১-এর নির্বাচনে পুনরায় ইসলামপন্থী কোনো রাজনৈতিক দল বা মুসলমানগণ নিজস্ব দল গঠন করিয়া পশ্চিমবঙ্গের হৃদপিন্ডরূপ শাসনযন্ত্র যদি দখল করিতে পারে,হিন্দুদের অবস্থা কেমন হইবে ভাবিয়া দেখুন!

  বঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসন ব্যাবস্থা দখল করিবার নিমিত্তে মুসলিম ধর্মগুরুদের মধ্যে বিশেষ চঞ্চলতা পরিলক্ষিত হইতেছে।যদিচ তাহা সাধারণ মুসলিমদের অনেকেই ভালচোখে দেখিতেছেন না।ইহা নিয়া মাঝে মধ্যেই ধর্মগুরুদের প্রতি বিরক্তিসূচক মন্তব্য বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে দেখা যাইতেছে।তবে সাধারণ মুসলিমদিগের মতের উপর নির্ভর করিয়া তো আর মুসলিম ধর্মগুরুগণ চলিতে পারেন না!চলা শোভনীয়ও নহে ! সাধারণ মুসলিমগণ তাঁহাদের ধর্মগুরুর আসনে বসাইয়াছেন,তাঁহারা মানেন বলিয়া ধর্মগুরুগণ সম্মান পান--এই সত্যটি ধর্মগুরুগণ হয়ত ভুলিয়া গিয়াছেন।ভুলিয়া যাওয়াই মঙ্গলের!না-হইলে ইসলামি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হইবে কীরূপে ! 
   যাহাই হউক...

“হায়দ্রাবাদী” ইসলাম ধর্মগুরু এবং রাজনীতিক আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পশ্চিমবঙ্গে আসিয়া বঙ্গীয় ইসলাম ধর্মগুরু আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকি-র সহিত ইতিমধ্যেই ভোটে লড়া ও ক্ষমতা দখলের নিমিত্তে শলা করিয়া গিয়াছেন বলিয়া জানা গিয়াছে।রাজ্যের আরেক ধর্মগুরু সিদ্ধিকুল্লা চৌধুরী যিনি তৃণমূলী বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী তিনি ওয়াইসির উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে কহিয়াছেন যে, “হায়দ্রাবাদী ধর্মগুরুকে বঙ্গে আসিবার প্রয়োজন নাই।তৃণমূলই বঙ্গীয় মুসলমানদিগের মঙ্গলামঙ্গল ভালো বুঝিবে।”

  আবার আরেকটি সংবাদও কানাঘুষায় শোনা যাইতেছে যে,আব্বাস সিদ্ধিকির পক্ষ হইতে নাকি জনৈক মতুয়া জননেতাকে প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে আব্বাস সিদ্ধিকিকে সমর্থনের জন্য।যদি তাঁহারা বঙ্গের কুর্শি দখলের মতো বিধায়ক সংখ্যা পান,তাহা হইলে উক্ত মতুয়া জননেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে অভিষিক্ত করিবেন সিদ্ধিকিরা ! এই সংবাদের প্রামাণ্য দলিল-দস্তাবেজ-ভিডিও-অডিও অর্থাৎ যাহাকে কয় 'পাথুরে প্রমাণ',তাহা যদিও জনসমক্ষে আসিয়াছে কি না,তাহা হলফ করিয়া বলা যাইতেছে না।তবে কওয়া যাইতেই পারে যে, 'যাহা রটে তাহার কিছুর ঘটে বটে!'

   দেশ ভাগের সময় যে-সকল হিন্দুগণ জীবন-ধর্ম-সম্ভ্রম রক্ষার জন্য পূর্ব পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশ হইতে বিতাড়িত হইয়া ভারতে আশ্রয় লইতে বাধ্য হইয়াছেন,তাহাদের মধ্যে সিংহভাগই মতুয়া মতাবলম্বী।এখন তাঁহাদের মনে মুসলিমদের অত্যাচারের ঘটনা দগদগে ক্ষতের মতো জাগিয়া আছে।ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় সেই দুঃসহ ঘটনার বিষয় অহরহ বলিয়া যান।অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হইল বঙ্গবাসী মতুয়াদের বেশির ভাগই মুসলিমপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি তাঁহাদের সমর্থন,সহমর্মীতা লক্ষিত হয়।বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক ভানভীর মোকাম্মেল তাঁর 'জীবন ঢুলি' সিনেমায় নমঃশুদ্র তথা মতুয়াদের উপর মুসলমানদিগের নির্মম অত্যাচারের কাহিনী বিশ্বাসযোগ্য ভাবে দেখাইয়াছেন।অথচ সেই-মতুয়াদের অনেক নেতানেত্রীর সহিত মুসলমানদিগের ধর্মগুরু বা রাজনৈতিক নেতাদিগের বেশ সখ্যতা রহিয়াছে।উভয়দিগের সোস্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে পরস্পরকে দেখা যায়!ইহার গূঢ় রহস্য কী,তাহা সাধারণ মতুয়াগণ জানেন কিনা,তাহা তাঁহারাই বলিতে পারিবেন !
   কেন্দ্রীয় তথা বিজেপি সরকার উদ্বাস্তু-শরণার্থী হিন্দুদিগের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন করেছে।অথচ মৌলবাদীদের সহিত তাল মিলাইয়া অনেক শরণার্থী হিন্দুগণ রাজনৈতিক কারণে উক্ত আইনের বিরোধীতা করিয়া চলিয়াছেন। তাঁহাদের মধ্যে কি বাম,কি তৃণমূল,কি কংগ্রেস সকলেই স্বমহিমায় আছেন!প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীগণের তো কোনোরূপ মানসিক দুর্বলতা,দায়বদ্ধতা  ছিলনা এই ধরণের একটি আইন প্রনয়নের।বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর নিজ রাজ্য গুজরাটে শরণার্থী সংক্রান্ত সমস্যা নাই।প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির দায়বদ্ধতা রহিয়াছে।তাহা হিন্দুর প্রতি।সনাতন ধর্মের প্রতি।শুধুমাত্র মতুয়া বা নমঃশুদ্রদিগের জন্য এই আইন প্রণিত হয় নাই।
    অন্যদিকে,মতুয়ারা কেহ কেহ নিজদিগে দলিত হিন্দু ভাবেন।উচ্চ বর্ণীয় হিন্দুরা তাঁহাদের প্রতি নাকি নানা অত্যাচার,নির্যাতন,অপমান করিয়া থাকেন।বিজেপি সেই উচ্চ বর্ণীয়দের দল।তাই বঙ্গে যেনতেন প্রকারেন বিজেপির অনুপ্রবেশ হতে তাঁহারা দিতে নারাজ!প্রয়োজনে তাঁহারা অ-বিজেপি মনোভাবী যে-কোনো রাজনৈতিক দলের সহিত এই মতুয়াগণ সখ্যতা গড়িতে আগ্রহী।তৃণমূলী বা বামপন্থী মতুয়ারা ভাবিয়া দেখেন না যে,তৃণমূলটা যে পরিবার বা ব্যক্তির সম্পত্তি এবং দলের প্রথম সারির নেতারা সবই উচ্চ বর্ণীয় হিন্দু ! বামেরাও তাহাই।শুধু বিজেপি-ই উচ্চ বর্ণীয় তথা ব্রাহ্মণদের দল !! মতুয়া বুদ্ধিজীবীগণ তাই সাধারণ মতুয়াদের বিজেপি হইতে সাবধান থাকিতে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখিতে বারংবার সতর্ক করিয়া চলিয়াছেন ! তাঁহারা ভাবেন না যে,রাজ্যে অ-বিজেপি ইসলামী শাসন বা ইসলামপন্থী কোন দল ক্ষমতায় আসিলে মতুয়াদিগের অবস্থা কী রূপ ভয়াবহ হইবে! যদি কিনা মতুয়ারা নিজদিগে হিন্দু ভাবেন বা হিন্দু হইয়াই থাকিতে চান ! ইহা হইতে পরিষ্কার ভাবে যে বিষয়টি সামনে আসিতেছে তাহা হইল মতুয়া বুদ্ধিজীবীগণ নিজদের স্বার্থ পূরণের জন্য হিন্দু ভোটগুলি ভাঙিয়া দিয়া বিজেপি-কে বেকায়দায় ফেলা এবং মুসলিম মনোভাবী বা মুসলিমদের সুবিধা করিয়া দেওয়া!

 প্রবাদ আছে যে,পশু-পক্ষী-কীট-পতঙ্গের আচার আচরণ দেখে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যায়।তেমনই পণ্ডিত চাণক্য কহিয়াছেন যে,দেশের দুষ্কৃতকারীরা যদি শাসকের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়া উঠে তো বুঝিতে হইবে শাসক তাঁহার শাসনকার্য যথাযথ পালন করিতেছেন।দেশের প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রতি মৌলবাদী-বিচ্ছিন্নতাবাদী-সুবিধাবাদীরা একযোগে খড়্গহস্ত হইয়াছেন।প্রধানমন্ত্রী তাহা হইলে নিজ রাজকার্য যথাযথ পালন করিতেছেন ? নাকি বিজেপি তাঁহাকে বাধা দিতেছে? 

 বর্তমান প্রধানমন্ত্রী,প্রধানমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব লইবার আগে নিজ রাজ্যে পনের বৎসর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।প্রধানমন্ত্রীর আসনে আছেন সাত বৎসর হইতে চলিল।এই দীর্ঘ সময়কালে নিশ্চিত ভাবেই তিনি নানাবিধ অপকর্ম করিয়া থাকিবেন!তাহাতেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তিনি চক্ষুশুল!এতদিনেও তাঁহার আত্মীয় স্বজনের বাটিতে চলন্ত সিঁড়ি বসাইতে পারেন নাই!যাহা বঙ্গীয় তৃণমূলী কোনো নেতার বাটিতে দৃশ্যগোচর হয়।তাঁহাদের সম্পদ বাড়ে নাই!তাঁহারা স্বর্ণ পাচার করিতে গিয়া ধরা খান নাই!জনৈক তৃণমূলীর স্ত্রী ধরা খাইয়াছেন।প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে পুলিসকে ডিউটির পোষাকে তাঁবেদারী করিতে দেখা যায় নাই বা তাঁহাকে জুতা পরাইয়া দিতে দেখা যায় নাই।যাহা এই রাজ্যে সচরাচর দেখা যায়।প্রধানমন্ত্রীর বৃদ্ধা মা-কে সাধারণ এক বৃদ্ধার মতো অটো চড়িয়া যাতায়াত করিতে দেখা যায়।নোটবন্দীকালে তাঁহাকে দেখা গিয়াছে সাধারণের মতো ব্যাঙ্কের সারিতে দাঁড়াইয়া নোট ভাঙাইতে।প্রধানমন্ত্রীর মা হিসাবে কোনোরূপ সুবিধা তিনি লন নাই।

প্রধানমন্ত্রীর অপকর্ম আরও আছে।তিনি দেশের মধ্যে আরেকটি দেশের আতুড়ঘর ভাঙিয়া একদেশ বানাইয়াছেন।পাকিস্তান ও চীনের আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিয়াছেন।অরুণাচলের চীন সীমান্তে আধুনিক মানের যুদ্ধ বিমানঘাঁটি বানানোর সাহস দেখাইয়াছেন।ব্রক্ষ্মপুত্র নদের উপর যুদ্ধোপযুগী সেতু নির্মাণ করাইয়াছেন।দীর্ঘকাল কংগ্রেসী শাসনকালে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি ছিল অবহেলিত।তাহারা কেন্দ্রীয় কংগ্রেস শাসকদের নিকট হইতে বিমাতৃসুলভ আচরণ পাইয়া আসিয়াছে।বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসিয়াই আহ্বান করিয়াছেন ‘লুক ইস্ট’ প্রকল্পের।যাহাতে দীর্ঘকালের অবহেলার ক্ষত পূর্বের রাজ্যগুলির বক্ষ হইতে দ্রূত নিরাময় হয়।যে ক্ষত ও ক্ষোভের সুযোগ লইয়া দেশবিরোধীরা মাথাচাড়া দিতে না পারে। ভয়াবহ করোনাকালে স্তব্ধপ্রায় অর্থনীতির সময়ও তিনি সাহায্যের জন্য কারুর নিকট হাত পাতেন নাই।বরঞ্চ ফ্রান্স হইতে সর্বাধুনিক যুদ্ধ বিমান রাফায়েল আনিয়া দেশের শত্রুদের নিদ্রা উড়াইয়া দিয়াছেন।কর্মহীন ভারতবাসীকে আয়ের সুযোগ করিয়া দেবার জন্য কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার সাহায্য ঘোষণা করিয়াছেন!ইত্যকায়…ইত্যকায়…তাঁহার অপকর্ম কহিয়া শেষ করা যাইবে না!!

তো অখন্ড ভারত গঠনের কাজ বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর শত্রু থাকিবেই।তাই বিজেপি-কে বঙ্গের মসনদে আসিতে দেওয়া বুদ্ধিমানের কর্ম নহে!তাহা বাতুলের শোভা পায়!বঙ্গে বিজেপি-র আগমণ রোধ করিতে,হিন্দু ভোট ভাঙাইতে তৃণমূল,বাম,কংগ্রেস,আসাদ-আব্বাস-মতুয়া সবাই একতাবদ্ধ হইতে চাহিতেছে।হিন্দুর একাত্মতা নানা প্রলোভন,ফাঁকফোকড় বাহির করিয়া ভাঙিতে চাহিতেছে।ইতিমধ্যেই মন-বুদ্ধি-বিবেক বিসর্জনকারী,'ভাড়ায় খাটা', 'স্বঘোষিত' বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবীগণ মাঠে নামিয়া পড়িয়াছে হিন্দুর ঐক্য ভাঙিতে! দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁহারাও হিন্দু।অন্তত নাম-পদবী দেখিয়া তাহাই মনে হয়।

২০২১-এর বঙ্গীয় নির্বাচন তাই হিন্দুর জীবন-ধর্ম-নারীর সম্ভ্রম-অস্তিত্ব রক্ষার ভোট! হিন্দুগণ আবহমান কাল ধরিয়া বিপদে পড়িলেই মাতৃশক্তির আরাধনা করেন।তৃণমূলী জমানায় সেই মাতৃশক্তির সম্ভ্রম ভূলুন্ঠিত হইয়া চলিয়াছে।ইসলামী অপশক্তি যদি রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় কোনোরূপ ভাবে অংশ লইতে পারে,কী ভয়ঙ্কর অবস্থা হইবে ভাবুন একবার!মুসলমানের হিন্দু নীপিড়ন কী ভয়ানক তাহার অনেক উদাহরণ সম্মুখে রহিয়াছে।

তাই সকল হিন্দুকে একতাবদ্ধ হইতে হইবে।

    ।। সুজিত চক্রবর্তী ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.