বাংলার গর্ব কানাইলাল দত্ত

কানাইলাল দত্ত (৩১ আগস্ট ১৮৮৮ – ১০ নভেম্বর ১৯০৮) ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী ছিলেন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের মধ্যে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হওয়া নরেন্দ্রনাথ গোস্বামীকে হত্যা করার জন্য তার ফাঁসি হয়।

কানাইলাল দত্ত ১২৯৫ বঙ্গাব্দে জন্মাষ্টমী তিথিতে চন্দননগরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চুনীলাল দত্ত ও মাতার নাম ব্রজেশ্বরী দেবী। পিতা বোম্বাইতে হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন। কানাইলাল শৈশবে বোম্বাইয়ের গিরগাঁও এরিয়ান এডুকেশন সোসাইটি স্কুলে এবং পরবর্তী সময়ে চন্দননগর ডুপ্লে বিদ্যামন্দিরে (বর্তমান কানাইলাল বিদ্যামন্দির) অধ্যয়ন করেন। ১৯০৮ সালে হুগলি মহসীন কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বিপ্লব ও রাজদ্রোহিতার অভিযোগে কারারুদ্ধ হওয়ায় ইংরেজ সরকার তাকে ডিগ্রি প্রদানে বাধা দেয়, কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সে বাধা উপেক্ষা করে তাকে ডিগ্রি প্রদান করে।

চন্দননগরের ডুপ্লে কলেজের অধ্যক্ষ চারুচন্দ্র রায়ের কাছে কানাইলাল বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষা নেন এবং অস্ত্রচালনা শিক্ষা করেন। চন্দননগরে স্বীয় চেষ্টায় অনেকগুলি বিপ্লবী সমিতি গড়ে তোলেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় চাকরিচ্যুত বাঙালি কেরাণীদের জন্য স্বদেশী সাহায্যভাণ্ডার গড়ে তোলেন। বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সাথে ছাত্রাবস্থাতেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার। বি.এ. পরীক্ষা দিয়ে কলকাতার বিপ্লবী দলের কার্যকলাপে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য তিনি প্রথমে মনোনীত হয়েছিলেন।

কিংসফোর্ড হত্যার চেষ্টায় কানাইলালের পরিবর্তে প্রফুল্ল চাকীর সঙ্গে ক্ষুদিরাম বসু মজঃফরপুর যাত্রা করেন। তখন কানাইলাল বারীন ঘোষের দলের সঙ্গে কলকাতায় বোমা তৈরির কাজে যোগ দেন। ১৯০৮ সালের ২ মে তিনি উত্তর কলকাতার ১৫ নম্বর গোপীমোহন দত্ত লেন থেকে মানিকতলা বোমা মামলায় অস্ত্র আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।

কানাইলাল দত্ত রাজসাক্ষী নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী ওরফে নরেন গোঁসাইকে হত্যা করতে মনস্থির করেন। এইসময় নরেন গোঁসাইকে পুলিশ কড়া নিরাপত্তায় জেলের ভেতরে রেখেছিল। বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র ঘোষ চাতুর্যের সাথে তাকে একটি রিভলভার যোগাড় করে দেন। অসুস্থতার অজুহাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বিশ্বাসঘাতক নরেন গোঁসাইকে অপর বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সহযোগিতায় জেলের ভেতরেই ৩১ আগস্ট ১৯০৮ সালে হত্যা করেন তিনি। বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়।

তিনি দণ্ড রোধের জন্যে উচ্চতর আদালতে আপিল করার দৃঢ় বিরোধিতা করেছিলেন, তাই আবেদন করা হয়নি। ১০ নভেম্বর, ১৯০৮ তারিখে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন। অপর বিপ্লবী সত্যেন বসুও ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হন।

শৈশব থেকেই কানাইলালের শারীরিক অসুস্থতা কিছু বেশিই ছিল। কিন্তু ফাঁসির আগে তার ওজন বেড়ে গিয়েছিল প্রায় ষোলো পাউন্ড এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

ক্ষুদিরাম বসুর পরে তিনিই ফাঁসিমঞ্চে প্রাণ উৎসর্গ করা প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ। তার কর্ম ও বীরোচিত মৃত্যু সমগ্র জাতিকে উদ্ধুদ্ধ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.