টার্গেট একুশ: বঙ্গবাসীর মন পেতে বাঙালিয়ানায় জোর দিচ্ছে বিজেপি

‘বহিরাগত এবং অবাঙালি’ তত্ত্বকে সামনে রেখে তৃণমূল যে ভাবে লাগাতার আক্রমণ করছে বিজেপিকে, তার প্রত্যুত্তর দিতে প্রস্তুত হচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে ‘আদ্যন্ত বাঙালিয়ানা’র(BJP in Bengal) মোড়কে নিজেদের মোড়ার চেষ্টা করছে তারা। খাদ্যাভাস থেকে বাংলা ভাষার ব্যবহারে বিশেষ নজর দিচ্ছেন দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়রা৷

বঙ্গে বিজেপির প্রসার বেড়েছে, তা লোকসভার নির্বাচনে ফলাফলে প্রমানিত। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদলের প্রতি ভোটাররা ক্ষোভ উগরে দিলেও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালি ‘সেন্টিমেন্ট’ও একটা বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। বাংলা ভাষা, বাঙালির কৃষ্টি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার উৎসব (BJP blending in bengali culture)রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এই বাঙালি ‘সেন্টিমেন্ট’ই বিধানসভা ভোটের অঙ্ক জটিল করতে পারে।

এবছর বিজয়া সম্মিলনীতেও বাঙালিয়ানা’র প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বঙ্গ বিজেপি৷ খাবারের মেনুতেও সেই সচেতন প্রয়াসের ছবি স্পষ্ট ছিল। বিজয়ায় বাঙালি বাড়িতে সাধারণত যা দিয়ে অভ্যাগতদের আপ্যায়ন করা হয়, সেই ঘুগনি, নাড়ু, ছাঁচের সন্দেশের মতো খাবার রাখা হয়েছিল। সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

তবে শুধু খাদ্যাভ্যাসে নয়, দল নানা ক্ষেত্রে এখনও বাঙালিয়ানা প্রশ্নের সম্মুখীন। বাংলা ভাষা ব্রাত্য, এই নিয়েও অভিযোগ রয়েছে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। কলকাতায় রাজনৈতিক সভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার জন্য খুব কম লোকই থাকেন। দলের অভ্যন্তরে এই নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মাতৃভাষার ভাবাবেগে আঘাত লাগলে সাধারণ মানুষের গেরুয়া প্রীতি হোঁচট খেতে পারে। এমনিতে ‘গুটখা’ সংস্কৃতি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরাও সোচ্চার। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, এই সমস্যার সমাধানে এখন বিশেষ নজর দিচ্ছেন অমিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷

পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই পাঁচ রাজ্য থেকে দলের পাঁচজন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-কে এ রাজ্যে পাঠিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রত্নাকর, ভিখুভাই দলসনিয়া, সুনীল বনশল, পবন রানা এবং রবিন্দর রাজুরা এ রাজ্য এসে ঘাঁটি গেঁড়েছেন। পাশাপাশি, আট মন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ান, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, নিত্যানন্দ রাই, অর্জুন মুণ্ডা, নরোত্তম মিশ্র, কেশবপ্রসাদ মৌর্য, মনসুখ মাণ্ডবীয় এবং প্রহ্লাদ সিংহ পটেলকে পাঠানো হয়েছে এ রাজ্যের সর্বত্র রাজনৈতিক প্রচার চালানোর জন্য। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্র ভাগ করে দেওয়া হয়েছে আট মন্ত্রীর মধ্যে।

বিজেপি সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি অভিজাত হোটেলে দলীয় বৈঠকে এই ১৩ জনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ। বলেছেন, দলীয় কর্মী এবং ভোটারদের মন জয় করতে বাংলা শেখার চেষ্টা করতে হবে। অভ্যাস করতে হবে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসও। জানা গিয়েছে, অমিত শাহের নির্দেশ পেয়েই বাংলা ভাষা এবং বাঙালির খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করার অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন ওই ১৩ জন। যেমন, ভিখুভাই ইতিমধ্যেই বাংলায় কিছু কথা বলতে পারছেন। বই জোগাড় করে বাংলা বর্ণমালা শেখাও শুরু করেছেন তিনি। পাঁচ সাধারণ সম্পাদক নিজের নিজের কাজের এলাকায় ভাড়াবাড়িতে বা কোনও নেতার বাড়িতে আস্তানা গেড়েছেন। ইদানিং দেখা যাচ্ছে, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতারা এখন বাংলায় টুইট করছেন৷ শুধু তাই নয়, ভাঙা বাংলাতেও রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠ করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে৷

মূলত হিন্দি বলয়ের দল হিসেবে বিজেপির যে পরিচিতি, তা থেকে বেরিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যেও কি তাদের গ্রহণযোগ্যতা এখন বাড়তে পারে? বিজেপি সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা অনেকেই বলছেন, ত্রিপুরার সাফল্য দলটিকে তার ‘বাঙালিয়ানার উত্তরাধিকার’ ফিরে পেতেও সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.