একবার এক পলিতকেশ প্রথিতযশা অধ্যাপককে ছাত্ররা প্রশ্ন করেন তিনি পিএইচডি করেননি কেন? অধ্যাপক উত্তর দিয়েছিলেন তার ‘ফেলা কাগজের ঝুড়ির’ কাগজেও একটা পিএইচডি হতে পারে। তিনি আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু। আধুনিক ভারতীয় বিজ্ঞান সাধকদের মধ্যে অগ্রগণ্য, সর্বাগ্রগণ্য বললেও হয়তো অতিশয়োক্তি হয় না।
১৮৯৪ সালের আজকের দিনে (পয়লা জানুয়ারি) এই ভারতীয় বিজ্ঞান সাধক জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে হিন্দু স্কুল, পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে, ১৯১৬ সালে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ এ লেকচারার পদে বসু যোগদান করেন। এর পাঁচ বছর পর ১৯২১ সালে সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে রিডার হিসেবে অধ্যাপনা এর কাজ শুরু করেন।
১৯২৪ সাল, এক ভারতীয় অধ্যাপক এর একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ পড়ে মুগ্ধ হলেন স্বয়ং আইনস্টাইন। সম্পূর্ণ অপ্রচলিত, ভিন্ন, এক গণনা পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি প্রমাণ করেছেন প্লাঙ্কের কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ সংক্রান্ত সূত্র। তার কাজ অনুমোদন করেনি পদার্থবিদ্যার বিখ্যাত জার্নাল ‘ফিজিকস জার্নালস’। কিন্তু আইনস্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন সেই কাজের গুরুত্ব। জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে সেটিকে প্রকাশ করেন ‘ৎসাইটশ্রিফট ফুর ফিজিক’ নামক সাময়িকীতে। সেই কাজ এখন পরিচিতি পেয়েছে ‘বোস আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিকস’ নামে।
প্রবন্ধটি সত্যেন্দ্রনাথ কে আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি ও পরিচিতি এনে দেয় তিনি ইউরোপে ‘এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফি ল্যাবে’ কাজ করার সুযোগ পান এই সময় তিনি সান্নিধ্যে আসেন মেরি কুরি, ডি ব্রগলি, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মতো প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের।
এ হেন মানুষ মনে প্রানে ছিলেন আদ্যন্ত দেশপ্রেমিক। অনুশীলন সমিতির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন। সারা জীবন নিরলসভাবে কাজ করেছেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার পথ সুগম করতে।
সত্যেন্দ্রনাথের কাজের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল এলেও দুর্ভাগ্যবশত তিনি থেকে গিয়েছেন উপেক্ষিত।
নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পল ডিরাক বিশ্ব জগতের ‘মূল কণা’গুলির একটি গোষ্ঠীর নাম বসুর নামানুসারে রাখেন ‘বোসন’। যতদিন পদার্থবিদ্যার চর্চা থাকবে ততদিন এই ভারতীয় বিজ্ঞানীর নাম অমর হয়ে থাকবে এই ‘কণা’ গুলির মধ্যে।
~ অর্পণ কৃষ্ণ মিত্র।