ব্রিটেন ফেরত ২০ জন করোনার নতুন স্ট্রেন নিয়ে দেশে ঢুকেছেন। যার মধ্যে একজন কলকাতার। জানা গিয়েছে, ব্রিটেন থেকে কলকাতা ফেরত মোট সাতজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সে পাঠানো হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল ওই সাতজনের শরীরে নতুন মিউট্যান্ট ভাইরাস ঢুকেছে। যার মধ্যে একজনের নমুনায় ব্রিটেন-স্ট্রেন তথা নতুন ভাইরাল স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে বলে খবর। এও জানা গেছে, সংক্রামিত যুবক কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তারের ছেলে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, গত ২৫ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিটেন থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেছিলেন মোট ৪৩৭১ জন যাত্রী। যাঁদের মধ্যে ১০৪ জন ছিলেন এ রাজ্যের বাসিন্দা। ৮৩ জন কলকাতার।
গত ২২ ডিসেম্বর ব্রিটেন ফেরত কলকাতার দুই যাত্রীর শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন কিনা জানতে ওই দু’জনের নমুনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সে পাঠানো হয়। দু’জনের একজন ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসকের ছেলে। তাঁকে মেডিক্যাল কলেজেরই কোভিড কেয়ারে ভর্তি রাখা হয়েছিল। অন্যজনকে পাঠানো হয় রাজারহাট চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের কোভিড ওয়ার্ডে। দুজনেরই নমুনায় পাওয়া ভাইরাল স্ট্রেনের জিনোম সিকুয়েন্স বা জিনের গঠন বিন্যাস বের করা হয়। তাতেই ধরা পড়ে একজনের শরীরে ঢুকেছে ব্রিটেন-স্ট্রেন তথা বি.১.১.৭ মিউট্যান্ট স্ট্রেন। গতকাল রাত অবধি রাজ্য স্বাস্থ্যভবনের তরফে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। তবে আজ স্বাস্থ্যভবনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের শরীরে নতুন স্ট্রেনই রয়েছে।
ব্রিটেন ফেরত ওই যুবক কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনতিও সে দিন বিমানে যে ২২২ জন যাত্রী ছিলেন তাঁদের সকলেরই রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর টেস্ট করানো হচ্ছে। সাতদিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে সকলকেই। আরটি-পিসিআর টেস্টে যেহেতু অনেক সময়েই করোনার নতুন স্ট্রেন ধরা পড়ে না, তাই সামান্য সন্দেহ হলেই নমুনা জিনোম সিকুয়েন্সের জন্য পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
২৫ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর অবধি ব্রিটেন থেকে ৩৩ হাজার মানুষ ফিরেছেন দেশে। তাঁদের মধ্যে ১১৪ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর টেস্ট করিয়ে গতকাল অবধি ৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছিল যাঁদের শরীরে ব্রিটেন-স্ট্রেন (বি.১.১.৭) তথা করোনার নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেনের সন্ধান মিলেছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, সেই সংখ্যা এখন বেড়েছে। আরও ১৪ জনের শরীরে নতুন স্ট্রেন খুঁজে পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন ভর্তি রয়েছেন, বেঙ্গালুরুর নিমহ্যান্সে, দু’জন হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজিতে, এক জন পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে, আটজন দিল্লির এনসিডিসিতে এবং একজন কল্যাণীর এনআইবিজিতে।
বড়দিন থেকেই পার্ক স্ট্রিট, সল্টলেক সহ কলকাতার একাধিক জায়গায়, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলিতে ভিড় উপচে পড়েছিল। এত মানুষের জমায়েত দেখে মাথায় পড়েছিল প্রশাসনের। নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সে জন্য বর্ষবরণের রাতে মেলামেশায় লাগাম টানতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। জানানো হয়েছে, বছর শেষে বর্ষবরণে যাতে কোথাও বাড়তি জমায়েত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে রাজ্য সরকারকে। প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাতে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় সবাই। আদালত জানিয়েছে, উৎসবের মরসুম শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বছর শেষে অনেক মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। অনেক জায়গায় উৎসবের পরিবেশ। সংবাদমাধ্যমেও প্রতিনিয়ত এই ছবি ধরা পড়ছে। এভাবে জমায়েত করায় করোনা বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। এছাড়া এই জমায়েত থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও অনেক বেশি থাকছে। কারণ অনেক জায়গায় মাস্ক ছাড়াই অনেককে রাস্তায় বেরতে দেখা যাচ্ছে। তাই রাজ্য সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, যাঁরা রাস্তায় বের হবেন তাঁরা যেন অবশ্যই মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার করেন। এছাড়া কোথাও যাতে জমায়েত না হয় তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে।