গত বারের মার্জিনকে ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর সামনে, তাঁর কেন্দ্রে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলেও, সংগঠক অভিষেকের মার্কশিটে জুটল শূন্য।
দলের তরফে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক অভিষেক। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার পর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই আসন ধরে রাখার। কিন্তু সারা জঙ্গলমহলের মতো বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর এবং পুরুলিয়াতেও উড়ল গেরুয়া ঝাণ্ডা। জেতা আসন হারতে হল তৃণমূলকে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই প্রশ্ন, প্রার্থী অভিষেক জিতলেও, সংগঠক অভিষেক ডাহা ফেল করলেন নাক কি?
জঙ্গলমহলের জনসমর্থন পুনরুদ্ধারে মুখে রক্ত তুলে পরিশ্রম করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত এক বছরে, একের পর এক জেলা সফর করেছেন। সমান্তরাল ভাবে অভিষেক গিয়ে সাংগঠনিক ক্ষততে প্রলেপ দিতেন। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার একাধিক ব্লকে সভাপতি বদল করেছিলেন অভিষেক। বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুরে প্রার্থীও বদল করেছিল তৃণমূল। কিন্তু জয় এল না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণভিত্তিতে ধসের পর তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় উঠে এসেছিল নিচু তলার নেতাদের লাগামহীন দুর্নীতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করজোড়ে আবেদন করেছিলেন, “আমাদের ভুল বুঝবেন না।” এই ভোটেও বাঁকুড়া, পুরুলিয়া মুখ ফেরালো তৃণমূলের থেকে। আটকাতে পারলেন না অভিষেকও।
পুরুলিয়া আসনে তৃণমূল যখন প্রচার তুঙ্গে তুলে দিয়েছে, তখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি। জনসভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত ব্যঙ্গের সুরে বলেছিলেন, “বিজেপি নামক দলটি এখনও প্রার্থী বেছে উঠতে পারল না। এরা নাকি আবার বাংলা দখল করার স্বপ্ন দেখছে!” অনেকের মতে, পোড় খাওয়া মুকুল রায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, পুরুলিয়ায় মাহাতোদের মধ্যে থেকেই প্রার্থী করতে হবে। কারণ মুকুলবাবুর ব্যাখ্যা ছিল, ৫২ সালের নির্বাচন থেকে এই কেন্দ্রে মাহাতো ছাড়া অন্য কেউ জেতেননি। তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম—সবারই প্রার্থী মাহাতো। মুকুলবাবু দিল্লি বিজেপি-কে বুঝিয়েছিলেন, পঞ্চায়েতের সমর্থনের প্রতিফলন যদি লোকসভায় ঘটাতে হয়, তাহলে এই ফর্মূলাতেই এগোতে হবে। কার্যত মুকুলের মাস্টার স্ট্রোকের কাছে হারতে হল অভিষেকের সংগঠনকে।
দ্য ওয়াল-এ কয়েক মাস আগেই লেখা হয়েছিল এ বার বহু বিধায়ক তথা মন্ত্রীকে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল। বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুরে তাই করেছিল বাংলার শাসকদল। বিধায়ক শ্যামল সাঁতরাকে বিষ্ণুপুরে এবং বর্ষীয়ান নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। এমনকী অভিষেকের ঘনিষ্ঠ প্রার্থী মানস ভুঁইয়াকেও হারতে হয়েছে মেদিনীপুর আসনে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে। কিন্তু তাতেও আটকানো গেল না ধস। তাসের ঘরের মতো ভাঙল তৃণমূল। যা দেখে অনেকেই বলছেন, ডায়মন্ড হারবার অভিষেকের মুখে হাসি ফোটালেও, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া তাঁর কপালে ভাঁজ ফেলেছে। বেশ গভীর ভাঁজ।