প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে অটলবিহারী বাজপেয়িকে নিজের মার্গনির্দেশক হিসেবে অনুসরণ করে এসেছেন। বাজপেয়িজি ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির শিখরপুরুষ, ভারতের প্রকৃত ভূমিপুত্র, ভারতরত্ন, দৃঢ় কণ্ঠের অধিকারী। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ি বিশ্বাস করতেন, ভাষার মাধ্যমে এই বৃহৎ এবং বৈচিত্র্যময় ভারতের সকল মানুষকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। তিনি আরও বুঝেছিলেন, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে ভারতের সামগ্রিক উন্নতির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব।
ঠিক তেমনই নরেন্দ্র মোদি তাঁর বিভিন্ন প্রশাসনিক উদ্যোগের মাধ্যমে সেই একই চিন্তাধারার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন। অটলজি বিশ্বাস করতেন, একমাত্র প্রকৃত শিক্ষার প্রসারই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে পারে। শিক্ষার প্রসারের ফলে দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষের জীবনমানের প্রকৃত উন্নতি ঘটতে পারে। সেই জন্যেই অটলজি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রথমবার অতি উপেক্ষিত শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলেন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নিতে উদ্যোগী হন। তিনি দেশে প্রথমবার রাষ্ট্রীয় মহাসড়ক নির্মাণ করে যাতায়াত ব্যবস্থার ঐতিহাসিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। দেশের প্রতিটি অঞ্চলকে সড়কের মাধ্যমে জুড়ে স্থল পরিবহণ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন অটলজি। এই সকল সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের কারণেই অটলবিহারী বাজপেয়িকে আমরা কেবলমাত্র জয়ন্তী ও পুণ্যতিথিতে স্মরণ করি না; বরং তাঁর কর্মকাণ্ড আমাদের সকল কাজের প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। তাই অটলজির জন্মদিবসকে ‘সুশাসন দিবস’ হিসেবে পালনের সূচনা করে মোদি সরকার।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে তাঁর সকল কাজে অটলবিহারীকে মনে রাখেন তার প্রমাণ, তাঁর চিন্তাপ্রসূত যে সোনালি চতুর্ভুজ যোজনা আরম্ভ হয়েছিল, তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই করোনা মহামারীর সময় দেশে ৩০০০ কিমি রাস্তা তৈরি করা হয় ভারতমালা পরিযোজনার অধীনে। জননেতা বাজপেয়িজিকে স্মরণ করেই অটল পেনশন যোজনা, অটল বীমিত ব্যক্তি কল্যাণ যোজনা প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক স্কিমগুলি সারা দেশের মানুষের জন্য চালু করা হয়েছে।

কেবলমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেই নয়, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাকেও সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলেছে মোদি সরকার। গত ছ’বছরে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা থেকে শুরু করে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত ৪,৭০০ কিমি চার লেন সুসজ্জিত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সীমান্তে প্রায় ১৪.৭ কিলোমিটার লম্বা দুই লেনের সেতু বানানো হয়েছে যার উপর দিয়ে বড় ট্যাঙ্ক পারাপার করতে পারে। অটলজি পরমাণুশক্তির পরীক্ষার মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীকে ভারতের প্রকৃত শক্তিটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সেই একইভাবে নরেন্দ্র মোদিও সীমান্তবর্তী এলাকায় রাস্তা, সুড়ঙ্গ এবং সেতু নির্মাণে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। এর মাধ্যমে ভারতের দক্ষতার একটি ছবি পরিস্ফুট হচ্ছে সারা পৃথিবীর সামনে। দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অটল সুড়ঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে নরেন্দ্র মোদির প্রত্যেকটি রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে। ভারতের ইতিহাসে অটলজি এমন প্রথম অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যিনি পাঁচ বছর তাঁর সরকার সফলভাবে চালান। অনুরূপভাবে নরেন্দ্র মোদি হলেন প্রথম এমন প্রধানমন্ত্রী যাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি লোকসভায় পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গড়ে এবং দ্বিতীয়বার সরকার গঠনে সফল হয়েছেন ৩০০টির বেশি আসনে জিতে। অটলজির মতোই মোদিজি কোনও বক্তব্য রাখা কিংবা ভাষণ দেওয়ার আগে পুরোপুরি তৈরি হয়ে যান। রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশের মিথ্যা প্রচারের ফলে দেশের বহু মানুষের মনে একটি আখ্যান গেঁথে দেওয়ার অপচেষ্টা রয়েছে যে, বাজপেয়িজি এবং মোদিজির সম্পর্ক কখনওই সৌহার্দপূর্ণ ছিল না। বাজপেয়িজি বলতেন যে একটি মিথ্যাকে বারবার বলে গেলে একসময় সেটি মানুষের কাছে সত্যি বলেই মনে হয়। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে বিরোধীদের একটি উদ্দেশ্য ছিল এই মিথ্যেকে সত্য বলে প্রমাণিত করা। কিন্তু বস্তুত নরেন্দ্র মোদির কাছে বাজপেয়িজি ছিলেন পিতৃতুল্য এবং মোদিজির নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতার উপর বাজপেয়িজিরও পুরো ভরসা ছিল।

২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গার পরে যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি গুজরাতে গিয়েছিলেন তাঁর রাজ্য সফরে, তখন একজন সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন যে তিনি মোদিজির জন্য কোনও বার্তা নিয়ে এসেছেন কি না। তখন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অটলজি তাঁকে বলেন যে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তাঁর একমাত্র বার্তা হল, তিনি যেন তাঁর প্রকৃত রাজধর্ম পালন করেন। একজন প্রকৃত শাসক প্রজাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় বা অন্য কোনও প্রকার কারণে বিভেদ করতে পারেন না। পাশে বসা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তখন বলেন, তাঁর সরকার গুজরাতে ওই একই কাজ করছে। তখন অটলজি মুখ্যমন্ত্রী মোদিজির সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, এই বিষয়ে তিনিও নিশ্চিত যে নরেন্দ্র ভাই তাঁর রাজধর্ম থেকে একচুল বিচ্যুত হননি। অটলজি, এমন অনেক সময় হয়েছে মোদিজিকে সাগ্রহে আলিঙ্গন করতেন। কিন্তু তাঁদের এই সৌহার্দপূর্ণ ঘনিষ্ঠতার সত্যটি প্রচার পায়নি।

অটলজির প্রয়াণে শোকাহত প্রধানমন্ত্রী মোদিজি বলেছিলেন যে, তিনি ছিলেন ভারতমাতার প্রকৃত ভূমিপুত্র এবং তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই একটি যুগের অবসান ঘটেছে। অটলজির মৃত্যু সারাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। অটলজি চলে যাওয়ায়, ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এক অভিভাবকের ছায়া মাথার উপর থেকে সরে গেল। অটলজি সর্বদা মোদিজির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। তাই মোদি সরকার অটলজির বহু সঙ্কল্প পূর্ণ করে চলেছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বলিদানের পরে অটলজি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের জন্য নিরলস অভিযান চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের সেই স্বপ্নকেই সফল করেছেন নরেন্দ্র মোদি। রাজনীতির অজাতশত্রু অটলবিহারী বাজপেয়ির জয়ন্তীতে তাঁকে জানাই আমার শত কোটি প্রণাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.