লাদাখ সীমান্তে ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারে লাল সেনা, ১০ হাজার জওয়ান পাঠাল আইটিবিপি

শান্তি আলোচনাতেও সম্পর্কের তিক্ততা কাটেনি। লাদাখ সীমান্তে উত্তাপ বাড়ছে। চিন-ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নতুন করে সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করছে চিন। কারাকোরাম পাসের কাছে নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, সিকিম-চিন সীমান্তেও সক্রিয় লাল সেনা। বাড়তি নজরদারি শুরু হয়েছে নেপাল সীমান্তেও। শীতের লাদাখে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করছে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ তথা আইটিবিপি।

ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ছড়িয়ে রয়েছে ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত। লাদাখের কারাকোরাম থেকে অরুণাচল প্রদেশের জাচেপ লা পর্যন্ত। এই গোটা এলাকায় নজরদারি চালায় ভারত-তিব্বত সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। জুন মাসে গালওয়ানে চিনা সেনার অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখে দিয়েছিল আইটিবিপির জওয়ানরা। এর পরেও লাগাতার চুক্তি ভেঙে লাল সেনার অনুপ্রবেশের চেষ্টা আটকে দেয় আইটিবিপির জওয়ানরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমান্তে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠায় কেন্দ্র। গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারতের পার্বত্য বাহিনী তথা স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স মোতায়েন করা হয় পাহাড়ি এলাকাগুলিতে।

আইটিবি সূত্র জানিয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। এখন সীমান্তে ভারতীয় সেনার সংখ্যা ৯০ হাজার। আইটিবিপির ফোর্স মোতায়েন হলে সংখ্যা লাখে পৌঁছবে।

শীতে লাদাখ সীমান্তে ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), এমনটাই দাবি আইটিবির। গত রবিবারই লেহ-র চানথাং এলাকায় সীমান্ত পেরিয়ে দুটি গাড়ি ঢুকে পড়েছিল ভারতীয় ভূখণ্ডে। সেই গাড়ি দুটিকে বের করে দেয় স্থানীয়রা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, চিনের সেনারাই সাধারণ পোশাকে ঢুকে পড়েছিল ভারতীয় এলাকায়। সেই ভিডিও ভাইরালও হয়। যদিও এই অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার করেছে পিএলএ।

চিনের ফৌজ ছাড়াও লাদাখ সীমান্তের সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা হল সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। পাহাড়ি খাঁজের বিপদসঙ্কুল পরিবেশে শত্রুসেনার মোকাবিলা করার জন্য দিনরাত জাগছেন ভারতীয় জওয়ানরা। সেই সঙ্গেই হাড়হিম ঠাণ্ডায় পাহাড়ি এলাকা হয়ে উঠেছে আরও দুর্গম। লাদাখে শীত পড়লেই তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড নিচে। এই হাড়হিম ঠান্ডায় শত্রুসেনার গতিবিধির ওপর দিবারাত্র নজর রেখে বসে থাকতে হয়। প্রতিরক্ষা সূত্রে খবর, পাহাড়ি ঢালগুলিতে এখন পাহারায় আছে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। উপত্যকা ও সীমান্ত লাগোয়া এলাকাগুলিতে নজরদারির জন্য ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়েছে।

ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, গত ২৯ আগস্ট থেকে প্যাঙ্গং হ্রদ লাগোয়া এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে আছে। এদিকে কারাকোরাম পাস সংলগ্ন দৌলত বেগ ওল্ডির কাছে হেলিপ্যাড, মিসাইল সিস্টেম বসাচ্ছে চিনের বাহিনী। আকসাই চিনে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। তিব্বতের এয়ার বেসে চিনের ফাইটার জেটগুলিকে ওঠানামা করতে দেখা গেছে। সূত্রের খবর, সবচেয়ে বেশি চিন্তা দৌলত বেগ ওল্ডি ও দেপসাং সমতলভূমি নিয়ে। কারণ দেপসাং ভ্যালিতে এখনও ক্যাম্প খাটিয়ে রয়েছে লাল সেনা, সেখানে টহল দিতে পারছে না ভারতের বাহিনী। অন্যদিকে, দৌলত বেগ ওল্ডি লাগোয়া আকসাই চিনে সামরিক কাঠামো বানাচ্ছে চিন। আকসাই চিন থেকে কারাকোরাম পাস হয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসা সহজ।  শীতের সময় সেই ফায়দা নিতে পারে চিনের বাহিনী।

যদিও ভারতীয় সেনার নর্দার্ন কম্যান্ড জানিয়েছে, পাহাড়ি ঠান্ডায় যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই যুদ্ধ করার মতো প্রস্তুতি আছে ভারতীয় বাহিনীর। চিনের সেনা সমতলেই যুদ্ধ করতে বেশি স্বচ্ছন্দ, কিন্তু ভারতের বাহিনী যে কোনও দুর্গম পরিবেশে শত্রুসেনার মোকাবিলা করার জন্য তৈরি। সীমান্তে নজরদারিও খুব কড়া। ভারতের তিন সামরিক স্তম্ভের প্রধান চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতও বলেছেন, ভারত চুপ আছে মানেই দুর্বল নয়। শান্তি আলোচনায় সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছে ভারত। কিন্তু তাই বলে চুপ করে বসে নেই, প্রয়োজনে কঠোর প্রত্যাঘাতের জন্যও তৈরি ভারতের সেনাবাহিনী। আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের রক্ষায় কোনও আপোস করা হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.