বিজেপিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেওয়ার পর পরই অমিত শাহর মঞ্চ থেকে শুভেন্দু অধিকারী স্লোগান তুলেছিলেন, ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও।’
দু’দিন পর আজ মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে পূর্বস্থলীর জনসভায় দাঁড়িয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন শুভেন্দু। স্লোগান তুললেন, ‘বাংলায় পরিবর্তনের পরিবর্তন চাই।’ এও বললেন, ‘এদের হারাবই হারাব!’
এদিনের সভায় খুবই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছেন শুভেন্দু। কিন্তু ওই দশ মিনিটের বক্তৃতায় যেন আগুন ঝরেছে। রাজ্য রাজনীতির পোড় খাওয়া এই তরুণ নেতা বলেন, “তৃণমূলের নেত্রীর উদ্দেশে বলছি, নিজের দমে মুখ্যমন্ত্রী হলে ২০০১ সালেই হতে পারতেন। আমার জন্য (হয়েছেন) বলব না। নন্দীগ্রামের শবগুলোর উপর দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।” তাঁর কথায়, “কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস গড়েছিলেন। আবার সেই কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে তবেই বাংলায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। ভুলে গেছেন?”
তৃণমূলের মধ্যে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য যাঁরা আবেগে কাতর, অনেকের মতে তাঁদের গায়ে এ কথাগুলো জ্বালা ধরাতেই পারে। তবে অধীর চৌধুরীর মতো তৃণমূল বিরোধী নেতারাও অনেক আগে থেকে বলছেন, শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন না করলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না। এমনকি অনেকের এও দাবি যে, ২০০৬ সালে সিঙ্গুর আন্দোলন ফেল করেছিল। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলন সফল হয়। তার ঘাড়ে চড়ে ২০০৮ সালে সফল হয় সিঙ্গুরের আন্দোলন।
মঙ্গলবার সেই সিঙ্গুরের প্রসঙ্গও টেনে আনেন শুভেন্দু। নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেন, সিঙ্গুরের অনশন ভাঙতে ফলের রস কে খাইয়েছিলেন? মনে পড়ে? রাজনাথ সিংহ।
শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই এক শ্রেণির তৃণমূল সমর্থক ও কর্মী সোশাল মিডিয়ায় অনেকে তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ‘গদ্দার’ বলে পোস্টার ফেলা হয়েছে। শুভেন্দু অনুগামীরা বলছেন, ওটা পিকের টিম করাচ্ছে। এদিন সে প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেন, “যাঁরা আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছেন, তাঁদের বলছি, ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর সে বছর পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট হয়েছিল। ৯৮ ও ৯৯ সালের লোকসভা ভোটেও বিজেপির সঙ্গে হয়েছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ী-লালকৃষ্ণ আডবাণীরা আশ্রয় না দিলে এই পার্টিটা অনেক আগেই উঠে যেত।”
এদিন শুভেন্দুর বক্তৃতা শুনে অনেকে মনে করছেন, একুশের লড়াই ক্রমশ হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ে পরিণত করতে চাইবেন শুভেন্দু। এমনিতে বাংলায় বিরোধী শিবিরে মজবুত মুখের অভাব রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে পর্যুদস্ত করার মতো নন বলে তাঁদের মত। হতে পারে সেই অভাব পূরণ করার চেষ্টা করছেন শুভেন্দু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এই আক্রমণের কোনও জবাব আদৌ দেন কিনা, বা দিলে কী বলেন, এখন সেটাই দেখার।