প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করাই যে তাঁর অগ্রাধিকার ছিল, তা মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানালেন, ‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’ ভারতের এই নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা নাগাদ ভিডিও কনফারেন্সিং মারফত বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয় দিবসের পরেই, আমাদের এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহিদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার আমি রাষ্ট্রীয় সমর স্মারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছি এবং স্বর্ণিম বিজয় মশাল প্রজ্বলন করেছি। ওই বিজয় মশাল গোটা ভারত ভ্রমণ করবে এবং শহিদদের গ্রামে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে।’ এরপরই প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এই বছর অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই সময়ে, স্বাস্থ্য পেশাদারিত্ব, কোভিড-১৯ টিকা প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ছিল ভীষণ ভালো। ‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’ আমাদের এই নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা আমার অগ্রাধিকার ছিল।
প্রধানমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে এগিয়েছে। স্থল-সীমান্ত বাণিজ্যে বাধা কমিয়েছি আমরা। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করেছি আমরা। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ওষুধ, চিকিৎসা উপকরণ, এমনকি ভ্যাকসিন, সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সহযোগিতামূলক। দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং দ্বিপাক্ষিক আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন মোদী। এ প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘আগামী বছর বাংলাদেশ সফরে বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাওয়া আমার জন্য সম্মানজনক।’মোদীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দিই। আমি বিশ্বাস করি, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐকমত্যের সুযোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।’ শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে। একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা রেখেছে। এছাড়া, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি।বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বিশ্ব এক মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন এবং মানবজাতি কীভাবে এ অজানা শত্রুর মোকাবিলা করে, সে পরীক্ষার মুখোমুখি। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন, জীবন-জীবিকা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, অর্থনীতি হয়েছে শ্লথ, বিঘ্নিত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা। সম্ভবত কোভিড-১৯ মহামারীর সবচেয়ে বড় বহিঃপ্রকাশ হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। এ বছরের গোড়ার দিকে ঢাকায় আপনাকে স্বাগত জানানোর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন এদিন ভিডিও কনফারেন্সিং মারফত যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদী এদিন বলেন, মহাত্মা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর একটি ডিজিটাল প্রদর্শনী প্রকাশ করতে যাচ্ছি, এটা আমার কাছে অত্যন্ত গর্বের। ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাঁরা অনুপ্রাণিত করবেন। এছাড়াও দীর্ঘ ৫৫ বছর পর আবারও চালু হল নীলফামারীর চিলাহাটির সঙ্গে ভারতের হলদিবাড়ীর রেল রুট। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ হয় এই রেল যোগাযোগ। যৌথভাবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল রুটের শুভ উদ্বোধন করেছেন মোদী ও হাসিনা।
৫৫ বছর পর চালু চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথদীর্ঘ ৫৫ বছর পর আবারও চালু হল নীলফামারীর চিলাহাটির সঙ্গে ভারতের হলদিবাড়ীর রেল রুট। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ হয় এই রেল যোগাযোগ। যৌথভাবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল রুটের শুভ উদ্বোধন করেছেন মোদী ও হাসিনা। ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতে এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম ছিল চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুট। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে এই রেল রুটটি বন্ধ হওয়ার আগে এ পথে দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত নিয়মিত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতো।চিলাহাটি-হলদিবাড়ীর রেল রুট চালুর ফলে আবারও এই পথে বাংলাদেশ থেকে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সেভেন সিস্টারখ্যাত (অরুণাচল, অসম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা) রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। এটি ঢাকা থেকে দার্জিলিং যাওয়ার অন্যতম প্রধান রুটে পরিণত হবে।