শনিবার বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী, তৃণমূলের সঙ্গে আড়াই দশকের সম্পর্কের অবসান

সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটল। সূত্র মারফত খবর, শনিবার বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ওইদিনই শুভেন্দুর গড়ে যাবেন অমিত শাহ। শোনা যাচ্ছে, তাঁর উপস্থিতিতেই শুভেন্দুর দলবদল হবে। সূত্রের খবর যোগদানের আগে দিল্লিও যেতে পারেন শুভেন্দু অধিকারী। তার আগেই সেক্ষেত্রে শুভেন্দু ইস্তফা দেবেন বিধায়ক পদ থেকে। সেই ইস্তফা স্পিকার গ্রহণ করলে শুভেন্দু-তৃণমূলের ২০ বছরের বেশি সময়ের সম্পর্কে পূর্ণচ্ছেদ পড়বে।

এদিন অরাজনৈতিক সভা থেকে তৃণমূলকে বিরাট তোপ দাগেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলন কোনও ব্যক্তির নয়, ওই আন্দোলন ছিল জনতার। তিনি এদিনও বলেন, কোনও পদের লোভ নেই তাঁর। ব্যক্তি আক্রমণ নিয়েও মুখ খোলেন শুভেন্দু। বলেন, যাঁরা তাঁকে আক্রমণ করছে তাঁদের অবস্থা অনিল বসুদের মতো হবে। এদিন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি।

শুভেন্দু তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করছেন ধাপে ধাপে। গত ২৫ নভেম্বর তিনি প্রথমে ইস্তফা দেন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে। ২০১১ সাল থেকে এই পদে বহাল ছিলেন শুভেন্দু। এর দুদিন পরেই ছাড়েন মন্ত্রীত্ব। ইস্তফাপত্র যায় কালীঘাটে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে, কারণ স্যানেটাইজেশনের জন্য সেই দিন নবান্নর দ্বার বন্ধ ছিল। ধাপে ধাপে প্রশাসনিক পদগুলি থেকে সরে দাঁড়ালেও শুভেন্দু তাঁর বিধায়ক পদটি ছাড়েননি। যদিও একদল ভাবছিলেন বিচ্ছেদ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, তৃণমূলের তরফে মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা করা হয়েছিল সর্বতো ভাবে। এদিকে শুভেন্দু নানা অরাজনৈতিক সভা থেকে জল্পনাই শুধু বাড়িয়েছেন।বলেছেন পান্তাভাত,মুড়ি খাওয়া ছেলেটা আদর্শের জন্য লড়ছে। কারও নাম না করেই বলেছেন, ফ্ল্যাটবাড়ির লোকজনদের অসুবিধে হচ্ছে।

ডিসেম্বরের প্রথম দিন শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে হাজির ছিলেন সৌগত রায়, ভোটকুশলী প্রশান্তকিশোর, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় নিজে সাংবাদিকদের ডেকে জানান, বৈঠক অত্যন্ত ইতিবাচক। সব পক্ষ একটা সাধারণ জায়গায় এসেছে, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। আপাতত সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। তৃণমূলেরই থাকছেন শুভেন্দু অধিকারী।

তাল কাটে ঠিক একদিন পরেই। শুভেন্দু বলেন, যৌথ প্রেস কনফারেন্সের শর্ত মানেননি দল। তাই আর একসঙ্গে পথ চলা সম্ভব নয়। হাসি চওড়া হয় বিরোধীদের, রাতারাতি শাসক দলের তুমুল আত্মবিশ্বাসী ছবিটা টাল খেয়ে যায়, আর হাসি চওড়া হয় বিজেপির। তারপর থেকে রাজ্যবাসী দিন গুণেছে। আজ এই খবরে সেই একাঙ্ক নাটকের পরিসমাপ্তি।

‌২০০৬ সালে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের টিকিটে কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা থেকে জয়লাভ করেন।২০০৯ সালে তমলুক থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে শিল্প দফতরের স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। ২০১৪ সালেও নিজের আসনে জয়ী বন শুভেন্দু। ২০১৬ সালে পদত্যাগ করে নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করেন। জয় আসে এবারেও। পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব বর্তায় তাঁর উপর। এই যার রাজনৈতিক কেরিয়য়ারের গ্রাফ, তাঁকে অন্য দল সঠিক দেবে তো? শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ভবিষ্যত কুসুমাস্তীর্ণ না কণ্টকিত তা জানা যাবে অদূর ভবিষ্যতেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.