বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলায় গণহত্যার অনেক স্থান রয়েছে। গাভা নারেরকাথী, গাভা বাজার, গাভা বিলাসবাড়ী ইত্যাদি মোট ১৭০-১৮০ এর কাছাকাছি। আজ আমরা গাভা নারেরকাথী গণহত্যার কথা বলব ।
১৯৭১ সালের ২ রা মে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুটি প্লাটুন পাশের গ্রামের রাজাকারদের সাথে গাভা নারেরকাথী গ্রামে পায়ে হেঁটে আসে। একজন বেঁচে যাওয়া সাক্ষী যাদব চন্দ্র হাওয়ালদারের বয়ান অনুযায়ী, সৈন্যরা ঘোষণা করেছিল যে “আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে একটি শান্তি কমিটি গঠন করা হবে। দয়া করে বেরিয়ে আসুন “। উদ্দেশ্যটি বুঝতে না পেরে শত শত পুরুষ এবং মহিলা তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। রাজাকার এবং সৈন্যরা তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিয়ে যায়। নিকটবর্তী একটি খালের নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার তীর ধরে তাদের লাইনে দাঁড় করানো হয়। এরপরে সৈন্যরা ২০-২৫ মিনিটের জন্য নিরীহ বন্দীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। নারী ও শিশুদের আর্তনাদ বাতাসে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। জলে ঝাঁপিয়ে গুলির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করা কিছু লোক স্রোতে ভেসে গিয়েছিল, আর কখনও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে একজন, সুনীল মিস্ত্রি খালের বিপরীত তীরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের গুলির হাত থেকে পালাতে পেরে ছিলেন। সবার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে, পাকিস্তানি সেনারা আনন্দের চোটে শূন্যে গুলি চালাতে থাকে। নিহতদের মৃতদেহ তীরের পড়েছিল এবং শকুন, কুকুর সেইসব মৃতদেহ ছিঁড়ে খাচ্ছিল। যারা সৈন্যদের ডাকে বাইরে আসেনি তারা কিছুদিন লুকিয়ে থাকার পর একদিন বেরিয়ে এসে মরদেহ দাহ করেছিল। স্থানীয়দের মতে, সেদিন প্রায় ৯৫-১০০ জন নিরীহ মানুষ সৈন্যদের হাতে মারা গিয়েছিল।
এখনও অবধি গণহত্যার জায়গায় এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণে রাখার জন্য স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়নি এবং পুরো জায়গাটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। গাবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এবং একজন সামাজিক কর্মী সুখরঞ্জন সরকার বরিশালের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন গণহত্যায় নিহতদের লাশের স্মৃতি রক্ষা করতে। ১৩ ই মে ২০১২, আওয়ামী লীগের তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি গাব-নারেরকাথী গণহত্যার জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গণহত্যার মাঠটি সংরক্ষণের উদ্যোগে এ সময় তিনি গণহত্যার জায়গায় মসৃণ চলাচলের জন্য আলতা-রায়েরহাট ও গাভা বাজারের রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ শুরু করেছিলেন। যদিও গাবা কমিউনিটি প্রাইমারি স্কুল ভবন এবং বেশ কয়েকটি সেতু সহ রাস্তার বেশিরভাগ কাজ সাইটের পাশেই সমাপ্ত হয়েছিল। পরে তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর দশম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসাবে তার আসনটি হারানোর পর এইসমস্ত কাজ স্থগিত হয়ে গিয়েছে।