ছোট বেলায় মা মাসিদের মুখে শুনেছিলাম “নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা” এই কথাটি যে কতটা সত্যি তা উপলব্ধি করতে পারছি বর্তমানে তথাকথিত ধর্মনিরপক্ষেতার ও সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড দেখে।
2014 সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এবং রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস মাত্র 44 টি আসন পেয়ে বিরোধী দলের তাকমাও হারানোর পর যাতে উপর্যুপরি নির্বাচনে হারার জন্য রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে এবং ঐ নির্দিষ্ট পরিবারের বাইরে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পি ভি নরসিংহ রায়ের মত কোন সর্বজনগ্রাহ্য নেতৃত্ব তৈরীর প্রয়োজনীয়তা থেকে নজর ঘোরানোর জন্য ধীরে ধীরে EVM দুর্নীতির মত একটি অবাস্তব বিষয়কে সামনে আনা হয়। এরপর যখন 2017 উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে নেহেরু পরিবারের প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানিতে পরিণত হওয়া কংগ্রেস পুরাপুরি বিপরীত মেরুর দল সমাজবাদী পার্টির সাথে মহাজোট করে এবং নিজেদের অতি ঘনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষতার ভেকধারী মিডিয়াগুলোও কংগ্রেসের জয়ের মরিয়া প্রচার চালালেও ফলাফল বেরোনোর পর দেখা যায় উত্তরপ্রদেশের কোনায় কোনায় বুথে বুথে কংগ্রেস প্রায় নিশ্চিহ্ন। ফলে রাহুলের নেতৃত্ব এবং তথাকথিত নেহেরু-গান্ধী পরিবারের আধিপত্য বাড়ানোর জন্য এই অবাস্তব অভিযোগের আরও বেশি বেশি প্রচার হতে থাকে ঐ নিরপেক্ষতার ভেকধারী মিডিয়া হাউসগুলোর দ্বারা।
কিন্তু এই প্রোপাগান্ডায় জল ঢেলে দেয় তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশানার নাশিম জাইদির একটি ঘোষণা। উনি সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে Open Challenge ছুঁড়ে দেন তাদের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য EVM দুর্নীতি কিভাবে সম্ভব তা হাতেকলমে করে দেখানোর জন্য এবং এই Open Challenge এর সময়সীমা দেওয়া হয় 2017 সালের 20শে মে থেকে 26শে মে। কিন্তু এই Open Challenge এ অংশগ্রহণ করে শুধুমাত্র CPM ও NCP এবং হাস্যকরভাবে চূড়ান্ত দিনে তারা বিবৃতি দেয় যে তারা EVM দুর্নীতি প্রমাণের জন্য নয়, তারা EVM এ ভোটদানের পুরো প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের কাছে আরো ভালোভাবে বুঝে নিতে যাচ্ছে।
নাসিম জাইদির উদ্যোগের পর কিছুদিনের জন্য এই অবাস্তব, হাস্যকর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে ভাঁটা পরে, কিন্তু এখন আবার হারের ভয়ে নতুন করে একই Prppaganda সামনে আনছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল;
1) EVM এর অভিযোগ পাঞ্জাব, গুজরাট, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখন্ডে কংগ্রেস সম্মানজনক ফল করার পর কেন করা হয়নি?
2) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তো কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে 2011 ও 2016 সালে EVM এর ভোটেই জয়ী হয়েই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তাহলে এই অভিযোগ করার আগে নৈতিকভাবে ওনার পদত্যাগ করা উচিত নয় কি?
3) অন্তত প্রতিটি ভোটকর্মীরা এবং রাজনৈতিক নেতাদেরই এটা অজানা হওয়া উচিত নয় যে প্রতিটি বুথে কোন কোন EVM ব্যবহার হবে তা ভোটের বহু আগেই জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের অফিসে প্রত্যেক প্রার্থী এবং তাদের এজেন্টদের সামনে পরীক্ষা করে EVM এর Candidate Set Section গোলাপি সিল করে তার উপর এজেন্টদের সই নেওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্ট EVM নম্বর ও গোলাপি সিল নম্বর এজেন্টদের দিয়ে দেওয়া হয়? তারপরও EVM মেশিন বা সিল পরিবর্তন কি করে সম্ভব? যদি হয়ে থাকে তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তো অতি সহজলভ্য তাহলে বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টেও কেন নিরাশ হচ্ছে?
4) এরপরে ভোট শুরুর 1 ঘন্টা আগে এজেন্টদের সামনে অন্তত 50 টি ভোট সহ মকপোল করা হয় এবং সেই Result VVPAT Slip সহ মিলিয়ে দেওয়ার পর EVM এর Result Section প্রিসাইডিং অফিসার ও এজেন্টদের সই সহ স্ট্রিপ সিল ও সবুজ পেপার সিল দিয়ে সিল করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট EVM নম্বর এবং সিল নম্বরগুলো এজেন্টদের নির্দিষ্ট From এ (17C) প্রিসাইডিং অফিসারের সিল সই সহ সরবরাহ করা হয়। এরপরও আদালতে প্রমাণযোগ্য নথি ব্যাতীত দুর্নীতি তখনই সম্ভব যদি ঐ সমস্ত নির্বাচনী আধিকারিক ও ভোটকর্মীসহ বিরোধী দলের এজেন্টরাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। এবং সত্যিই যদি তা হয় এবং সমাজের কোন স্তরেই যদি তাদের গ্রহণযোগ্যতা না থাকে তবে বিরোধী দলগুলোর নৈতিক দায় স্বীকার করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত নয় কি?
এরপরও হয়তো কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চলের কিছু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ নিজস্ব যুক্তি-বুদ্ধির নিরিখে বিচার ব্যাতীত প্রাত্যহিক প্রাতঃকৃত্যের অভ্যাসের মত এই অবাস্তব, হাস্যাস্পদ অভিযোগে অভ্যাসবসত আলোড়িত হবেন এবং সার্বিকভাবে কলকাতার অতীত গরিমাকে আরো ভূলুন্ঠিত করে নিজেদেরও ধীরে ধীরে আরো হাস্যাস্পদ করে তুলবেন।
সবশেষে কলকাতার এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এবং এই অবাস্তব অভিযোগ করা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ছোটবেলায় শোনা মা মাসিদের ঐ কথাটাই আবারও মনে পড়ছে “নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা”।