বাংলায় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকে কৌম নর-নারীরা মাটি-বাঁশ-কাঠের মতাে সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে ব্যবহারিক প্রয়ােজনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শিল্প বস্তুগুলি তৈরি করেছে। গ্রামবাংলার মাটির চালাঘর মূলত দাঁড়িয়ে থাকে কাঠ বা বাঁশের খুঁটির জোরে। ঘরামিরা ধাপে ধাপে ধাপে কাদা দিয়ে দেওয়াল তােলে; সূত্রধররা কাঠ দিয়ে নানা শৈল্লিক ভঙ্গিতে তৈরি করে দেন চালাঘরের চাল ধরে রাখার কাঠামাে, বারুইরা খড় ও বাঁশ-বেত দিয়ে ঘরের চাল ছেয়ে দেন। ঘরের ভেতরের অংশটি সেজে ওঠে চালের ভার বহনকারী বামন আকৃতির কাঠের পুতুল, খােদাই করা কাঠের নানা কারুকাজে এবং বেত, সরকাঠি, ময়ূর-মাছরাঙার মতাে রঙিন পাখির পালকে। বাঁশ-বেতের ভেনকি তাক এবং নক্শি ছাদতাে রয়েইছে। চারকোণে ঝােলানাে হয় বেতের তৈরি আনারস। নকশি কাঁথা কিংবা শীতলপাটির চাঁদোয়া টাঙ্গানাের ঝোঁকও ছিল। অবশ্য এ ছবিগুলাে হারিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে গুরুত্ব পায় মণিমুক্তোর ঝালর ও সােনার টুনিতে সাজানাে মনসামঙ্গলে উল্লেখিত ‘উদয় তারা ঘর’। ধানের মরাই দেখা যায়; কিন্তু হারিয়ে গেছে ধান ও কুঁড়াে মজুত রাখার জন্য তৈরি বাঁশের গােল কাঠামাের মাটির প্রলেপ চাপানাে ডােলা।
উৎসবের দিনে বাঁশ পুঁতে তার ডগায় বাঁধা চোঙা-মাইক; এ দৃশ্য যেমন হারিয়েছে, তেমনি হারিয়ে গেছে উনুনশাল সংলগ্ন রান্নাঘরে আড়াআড়ি অবস্থানে থাকা বাঁশে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া শিকের গুরুত্ব। খাদ্যাদি রাখার জন্য রঙিন সুতাে পাটের দড়ি দিয়ে তৈরি আধার। ফাঁস তােলা ও বিনুনী গাঁথার কৌশলে তৈরি। প্রয়ােজনে ভেতরের শূন্য অবস্থানটিকে সঠিক রূপ দিতে থাকে থাকে সাজানাে সরু কঞ্চির বেড়ি। উনুন শালের প্রয়ােজনীয় দ্রব্য ছিল ছিদ্র করা বাঁশের চোঙ। মাটির উনুনের জ্বালানি ঢােকানাের পথে কিংবা গুল-ঘুঁটে সাজানাে উনুনের নীচের বড় ছিদ্রপথে বাঁশের চোঙটি ঢুকিয়ে ফুঁ দিয়ে আঁচের আগুন তােলা হতাে।
ছিদ্রহীন চোঙে রাখা হতাে তেল এবং দুধ-দই। এক্ষেত্রে ওপরের অংশটি একটু চেরা করে কোটা। জাপানে বাঁশের চেরার মগ ছিল অবর্ণনীয়। বাঁশের চাচাড়ি দিয়ে তৈরি হয় দরমার বেড়া। শত্রুপক্ষকে চমকে দেওয়ার মতাে বাঁশের কেল্লা তৈরিতে দক্ষ ছিল বাংলার বনবাসীরা। বাঁশ হাতে রায়বেঁশে সৈন্য ছিল বাংলার গর্ব। পরবর্তীকালে জমিদারদের ঠ্যাঙারে লাঠিয়াল হয়ে সেই অহংকার হারিয়ে গেছে। রণপা বিজ্ঞাপনের চরিত্র। নৃত্যের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ-নৃত্যের রূপ নিয়েছে। দুর্গ তােরণের বক্র রূপের মতাে দুর্গা-চাল আর্থ চালচিত্রের বক্র কাঠামােটিও বাঁশের। প্রতিমা মূর্তির মূল কাঠামােও বাঁশ-খড়ের। কাগজ তৈরিরও কাঁচামাল বাঁশ। বাঁশের ঘরও হচ্ছে।
কয়েকদিন জলে ভিজিয়ে রেখে হাল্কা আগুনের তাপ বা ধোঁয়া খাইয়ে বাঁশকে কাজের উপযােগী করা হয়। বাঁশের লম্বা আঁশকে কাজে লাগানাে হয় সুকৌশলে। বাঁশের কাজে দক্ষ বাংলার ডােম, বাগদি, মহালি, রাইতিরা। ছেলে-মেয়ে উভয়ই এ কাজ করে। শূদ্র ও নারী জাতির সংগ্রাম। বাঁশ-বেত শিল্পের উৎকৃষ্ট মানের কাঁচামাল মেলে মণিপুর, ত্রিপুরা, অসম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। নানা প্রজাতির বাঁশ ও বেত। পশ্চিমবঙ্গের বাঁশুলি ও তলতা বাঁশ উন্নতমানের এবং মালদার মাকলা বাঁশও বেশ উন্নতমানের। বাংলায় উত্তর-পূর্ব সীমান্তের বনবাসীরাই বাঁশ-বেত শিল্পকে উচ্চ-মান দিয়েছে। দক্ষিণে বেত অপেক্ষা বাঁশের উপরই বেশি নির্ভরশীল। পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে তালপাতা, খেজুর পাতা, হোগলা বা হেঁসতি পাতা-ঘাস এবং পাতি বা মুঠা জাতীয় ঘাস। পশ্চিমবঙ্গে বাঁশ বেতের কাজে দক্ষতার পরিচয় মেলে মালদার গাজল; মঙ্গলবাড়ি; সাহাপুর; হরিশ্চন্দ্রপুর; আলপুর; উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার; কালিগঞ্জ; রায়গঞ্জ; দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুণ্ডি; কোচবিহারের কোতােয়ালি; দার্জিলিংয়ে সমরনগর; নকশালবাড়ি; নদিয়ার করিমপুর; সুভাষনগর; হুগলী খানাকুল থানার শঙ্খপুর; আরামবাগের সেনপুর গ্রাম; পূর্বমেদনীপুরের ঘাটাল; খাঞ্জাপুর; মৈতনা; বাঁকুড়ার ছাতনা; পুরুলিয়ার চড়িদা; হাওড়ার ডােমজুড়; জগৎবল্লভপুর; মাকরদহ; পাতিহাল; চব্বিশ পরগনার বিষ্ণুপুরের দেউলি গ্রাম; একসময় কলকাতার চিৎপুরের ডােমপাড়াও এ শিল্পে সুনাম নিয়েছিল। আজ কলকাতায় প্লাস্টিকের রমরমা বাজার হলেও আধুনিক চিন্তায় বাঁশের নিজস্ব সৌন্দর্য এবং বেতের বাঁধন শিল্পীর কল্পনাগুণে আকর্ষণীয়। ব্লেড দিয়ে বাঁশের লম্বাটে আঁশকে গােল করে কাটা; তারপর লম্বালম্বি ভাবে আঁশ তুলে বাঁশকে অলংকৃত করা। এভাবে খােদাই কর্মের মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা সৌখিন শাে-পিস এবং আসবাবপত্র। মণ্ডপ সজ্জায়ও গুরুত্ব পাচ্ছে বাঁশের অলঙ্কৃত সৌন্দর্য। কাপড় ঢাকা বাঁশের কাঠামাে তাে আছেই।
গােরু বাঁধার গোঁজ থেকে গােরুর গাড়ি এবং গােরুর গাড়ির ঢেউ খেলানাে ছদরিও বাঁশের। ধান বােনার ডালা থেকে বিয়ের চিত্রিত বরণডালাও বাঁশের। শস্যের খােসা উড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত কুলােও মাঙ্গলিক প্রয়ােজনে চিত্রিত হচ্ছে। লাল শালু জড়ানাে ও কড়ি বসানাে চুপড়িই হলাে লক্ষ্মীর ঝাঁপি বা সিঁদুর চুপড়ি। বাঁশের সাহায্যে তৈরি হয় ঝুড়ি, চালুনি, ধুচুনি, ডােকা-থুনচে বা পিঠা কাল্লোয়াং। বনবাসীরা তৈরি করে খাড়া বা লাঙ্গা। মাটির কাজের জন্য কুমােররা তৈরি করে নেয় কাঠম কাঠি ও মাজা কাঠি। মাটির ঘরের দরজার শিকল দেওয়ার চেনা ছবি ছিল বাঁশের হুড়কো। বাঁশের মাচায় বসার স্বাদ অনেকের না মিটলেও; মইয়ের সঙ্গে সবারই পরিচয় আছে। চেঁকিতে পা দিতে হলে বাঁশের সাহায্য ছাড়া উপায় নেই। নৌকো তৈরির সময়ও বাঁশের ঠেক চাই। তির-ধনুক, টাঙ্গা-টাঙ্গি-বর্শার হাতল বাঁশের তৈরি। বাঁশ স্বয়ং নিজেও অস্ত্র বটে। মাছ ধরার কোঁচ, বানা, ছিপ, শটকা, পাঙ, ঘুনি, পলুই সবই বাঁশের তৈরি। নদীতে বড় মাছ ধরতে হালুক। মাছ রাখতে মাথায় এবং কোমরে বাঁধা খালুইও বাঁশের। বাঁশের দণ্ড ঘাড়ে নিয়ে হেঁটে যাওয়া হেলা-ভেলা-মালা ফেরিওয়ালার পিছু নিত গ্রাম্য শিশুর দল। কিনে নিতাে বাঁশ-কাগজের পতিঙ্গা এবং বাঁশের বাঁশি। সরল, আড়, মুরলী, বেণু, নয়া, টিপরা নানা গঠনে নানা নামের বাঁশি। বাঁশ-কাগজের ঘুড়িও শিশুর কাছে আকর্ষণীয়। দাদু-ঠাকুমার হাতের পাখায় ঠাণ্ডা হতাে দুরন্ত শিশুর মন। বাঁশ, মুরতা বেত, তালপাতা, খেজুর পাতা, নারকেল পাতা, কলার শুকনাে খােলের বেতি, চুলের ফিতে, পালকে সেজে উঠতাে শখের পাখা। প্রয়ােজনে চিত্রিত। হাত পাখা সহজে ঘােরাতে হাতলে সর বাঁশের নল লাগানাে। হিন্দু সমাজে মৃত ব্যক্তির নাতিরা শ্রাদ্ধের দিন সন্ধ্যেয় ডােম-বাগদিদের তৈরি করে দেওয়া বাঁশ-রঙিন কাগজের তৈরি দোলা রথ-নৌকো কলা গাছের ডেলায় গেঁথে প্রদীপ জ্বালিয়ে জলে ভাসিয়ে দেয়, সঙ্গে নাম-সংকীর্তন। গুরুমহাশয়ের পাঠশালায় বাঁশের সরু কঞ্চি বা বেতের ছড়ি ছিল ভয়ের কারণ। কাঠের মুখােশের পাশাপাশি পরবর্তীকালে গুরুত্ব পেয়েছে বাঁশের মুখােশ। বাঁশের মুখােশ এবং বাঁশের কাট-ডলগুলিকে ঘরসাজানাের কাজে লাগানাে হচ্ছে। বাঁশের কাঠামাে ও বেতের বাঁধনে তৈরি শােফাসেট, টি-টেবিল, পা ছড়িয়ে বসার চেয়ার আধুনিক। চিন্তা-ভাবনায় বেশ আকর্ষণীয়। প্রয়ােজনে রঙিনও হয়েছে। পায়াতে আঁটকে দেওয়া হচ্ছে নতুন গ্রামের কাঠের পুতুল। চেড়া বাঁশের আড়াআড়ি বাঁধুনিতে তৈরি সাধারণ মােড়া অপেক্ষা পিঠে ঠেস্ দেওয়া মসৃণ বেতে মােড়া মােড়া গঠন সৌন্দর্যে বেশ আকর্ষণীয়। বাঁশের চৌকো ও গােল ফ্রেমও বেশ চমক দেয়।
বাঁশ-বেতের কাজে মূল সৌন্দর্যের উৎস লুকিয়ে থাকে শিল্পীর ভাবনায়। আর তার প্রকাশ ঘটে বুননি ও মেলাইয়ের দক্ষতায়। মাঝে মাঝে জলে ছেটা মেরে মেরে বাঁশ ও বেতকে নরম করে নেওয়া। চতুর্থ আঙ্গুলের নিয়ন্ত্রণে এক-দুই-তিন করে গেঁথে ফেলা। বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে একটা নির্দিষ্ট রূপ দেওয়া। অর্থাৎ বংশ পরম্পরায় চর্চিত জ্ঞান নিয়ে সেজে ওঠে বাঁশ-বেত শিল্প। বাঁশ অপেক্ষা বেত নমনীয়, তাই সহজে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সরু বেতকে নানা আকৃতি দেওয়া যায়। প্রথমে বেতকে কয়েকদিন জলে ভিজিয়ে রেখে তুলে নিয়ে সােজা করতে হয়। আঁতি-গিট চেঁচে ফেলার পর ধারালাে কিছু দিয়ে প্রয়ােজন মতাে চেরা হয়। ফসল মাপার জন্য বেতের জিনিস গুরুত্ব পেয়েছে। তাল কাঠ ও পিতলের পাশাপাশি বেত দিয়ে তৈরি হয় পাই-কুনকে। দাঁড়িপাল্লাও হতাে বেত দিয়ে। লক্ষ্মীর হাঁড়ি, ফুলের সাজি, জল পাত্রের ঢাকনা ঝুম, ছাম্মা বাক্স, ট্রে, ব্যাগ, চটি এ সবই সরু বেতের তৈরি। মােটা বেত দিয়ে তৈরি হয় মােড়া, বড় আকৃতির পাত্র, মাছ-চরকি এরকম নানা অলঙ্করণে সাজানাে পালকি আকৃতির বিয়ের সৌখিন ডালা। জুঙ্গুর ছাতাও বেশ আকর্ষণীয়। বেশি মােটা বেত দিয়ে তৈরি বয় দোলনা, হাত-লাঠি, ছাতার বাঁট, ইজি-চেয়ার। শীতল পাটির শীতল ছোঁয়া তাে আছেই। বলাবাহুল্য শীতল পাটি তৈরি হয় মুত্রা বেত দিয়ে। শীতলপাটি তৈরিতে কোচবিহারের ঘুঘুমারি, ফুসনাডাঙ্গা, ধুনিয়াবাড়ির শিল্পীরা দক্ষতা দেখিয়েছে। ধারালাে কিছু দিতে মুত্রা বেত কেটে কয়েক ফালিতে চিরে ফেলা হয়। তারপর লেগে থাকা ভেতর দিকের নরম অংশটি চেঁচে ফেলে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ওপরের অংশটি একটু চেঁচে নিলে বেরিয়ে আসে বাদামি রঙ। শীতলপাটি বােনার উপযােগী হলাে নরম কোষের উন্নতমানের মুত্রা বেতের ছাল; আর কম উন্নতমানের অংশগুলি দিয়ে বােনা হয় বুকা পাটি। বলা বাহুল্য, মুত্রা বেতের ছাল বারাে ঘণ্টারও বেশি সময় ডুবিয়ে রাখা হয় জমানাে টকে যাওয়া ভাতের ফ্যানে। এর সঙ্গে টক দই মিশিয়ে সিদ্ধ করলে বেত সাদা-মসৃণ হয়। প্রয়ােজনে রঙিন করতে সিদ্ধ করার সময় রঙ মিশিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ধুয়ে শুকিয়ে বেতকে পাটি তৈরির উপযােগী করে দেওয়া হয়। দু’হাত দিয়ে দুটো রেখে দুটো ধরে চলে বুনন কাজ। তেরছা ভাবে এক-দো অথবা তে ধারা পদ্ধতিতে বুনন শুরু হয়। বর্তমানে শীতলপাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্যাগ, জুতাে, টেবিলের ঢাকনা, গহনায় রঙিন সুতাের পরিবর্তে পাটির বাঁধন। মেয়ের বাড়ির তত্ত্বে পাঠানাে চিত্র নকশাতে সাজানাে শীতলপাটির প্রয়ােজনীয়তা হারাতে বসেছে। বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি মাছ, কচ্ছপ, ফুলদানি, টব রাখার উঁচু থাম, টেবিল ল্যাম্প, হ্যাজাক লাইট, বাল্বের ছাতা শেড, ঘড়ির-বেল্ট, মেয়েদের মাথার ক্লিপ, পাখির বাসার মতাে দোলনা এসব বেশ আকর্ষণীয়। আর কৃষি কাজে তাে বাঁশ-বেতকে অবজ্ঞা করার উপায় নেই। গ্রাম্য কৃষি সংস্কৃতিতে বাঁশ-বেত শিল্পের চাহিদা সম্পূর্ণ রূপে প্রয়ােজন কেন্দ্রিক। শহরে ওই শিল্পগুলি তেমন গুরুত্ব পায় না। শিল্প দ্রব্যগুলির দামও কম। ভালাে দাম পাওয়ার আশায় শহুরে সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে বাঁশ-বেত নানা ভাবে সেজে উঠছে। আধুনিক প্রযুক্তির এবং শিল্পদ্রব্যের কাছে বাঁশ বেত গুরুত্ব হারাতে বসেছে। মেদিনীপুরের বনবাসীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে অস্থায়ী ডেরা বেঁধে গ্রামের পরিবারগুলির চাহিদা মতাে বাঁশ বেতের জিনিস তৈরি করে দিতাে।
চূড়ামণি হাটি