রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লেন্ডিং রেট আগের মতোই রইল চার শতাংশ। শুক্রবার একথা জানিয়েছে ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটি। এই নিয়ে পরপর তিনটি বৈঠকে লেন্ডিং রেট অপরিবর্তিত রাখা হল। কোভিড সংকটের মধ্যে দেশে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে সংকুচিত হচ্ছে জিডিপি। এই অবস্থায় বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ আশা করেছিলেন, লেন্ডিং রেট অপরিবর্তিত থাকবে। গত মে মাসে রেপো রেট কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এখন তা মাত্র চার শতাংশ। ২০০০ সালের পরে এই প্রথমবার রেপো রেট এত কমানো হল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইঙ্গিত দিয়েছে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আগামী দিনে বিভিন্ন রেট আরও কমানো হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেন, আগামী আর্থিক বছর থেকেই আবার বিকশিত হবে অর্থনীতি। চলতি বছরেও জিডিপি যতদূর সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হচ্ছে না। এদিনই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, আগে ভাবা হয়েছিল, জিডিপি সংকুচিত হবে ৯.৫ শতাংশ হারে। এখন দেখা যাচ্ছে, সংকোচন ৭.৫ শতাংশ হতে পারে। সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ত্রৈমাসিকে আশাতীতভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি। তার ফলে জিডিপির সংকোচনের হার কমেছে।
নভেম্বরের শেষে জানা যায়, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) সংকুচিত হয়েছে ৭.৫ শতাংশ হারে। এর আগের ত্রৈমাসিকে জিডিপির সংকোচন হয়েছিল ২৩.৯ শতাংশ। অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের ত্রৈমাসিকের চেয়ে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জিডিপি সংকোচনের হার কমেছে। কিন্তু পরপর দু’টি ত্রৈমাসিকে জিডিপি সংকুচিত হওয়ায় ধরে নেওয়া হচ্ছে, মন্দার কবলে পড়েছে ভারতের অর্থনীতি। অর্থনীতিবদরা আশঙ্কা করেছিলেন, চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপির সংকোচন হবে ৮.৮ শতাংশ। বাস্তবে অর্থনীতির অবস্থা অত খারাপ হয়নি।
প্রথম ত্রৈমাসিকে লকডাউনে সব বন্ধ ছিল। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আনলক পর্ব শুরু হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ফলে জিডিপির সংকোচন হয়েছে কম হারে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, ডিসেম্বরে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে জিডিপির সংকোচনের হার আরও কমবে। তখন মোট জাতীয় উৎপাদন সংকুচিত হবে তিন শতাংশ। আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে জিডিপি সংকুচিত হবে ০.৫ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে ২০২০-২১ সালের আর্থিক বছরে অর্থনীতি সংকুচিত হবে সম্ভবত ৮.৭ শতাংশ। সেক্ষত্রে ধরে নিতে হবে গত চার দশকে চলতি আর্থিক বছরেই সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে ভারতীয় অর্থনীতির।
লকডাউনের ফলে হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বিরাট সংকটে পড়েছে অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, আগামী বছরের শুরুতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। আশা করা হচ্ছে, ওই সময়ের মধ্যে এসে পড়বে করোনার ভ্যাকসিন। ইতিমধ্যেই দেশে গাড়ির বিক্রি বেড়েছে। রেলে বেড়েছে পণ্য চলাচল।