স্বাধীনতাও স্বাধীন নয়

আজ থেকে ঠিক 104 বছর আগে, তেজস্বী এবং জনপ্রিয় মুক্তিযোদ্ধা লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক ভারতের​ একটি ব্রিটিশ শাসিত আদালতে বজ্রকঠিন কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন; “স্বাধীনতা আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা অর্জন করবো”। তিলক যেহেতু মারাঠী ভাষায় এই বাক্যটি উচ্চারণ করেছিলেন, তাই তাঁর আসল শব্দ ‘স্বরাজ’ -কে ‘স্বাধীনতা’ হিসাবেও ব্যাখ্যা করা যায়।

সাংবিধানিক গণতন্ত্রের আইন অনুসারে আজ ভারত একটি মুক্ত দেশ; চিন্তা, বাক এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সহ এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এই স্বাধীনতা উপভোগের অনুমতিও দেয়। কিন্তু অতীতে রাষ্ট্র মানুষের এই স্বাধীনতার অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছিল। কিন্তু এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যদি মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার​ স্থায়ী চেতনা টিকে থাকে তাহলে সেটা আরও শক্তিশালী ও বৃহত্তর হয়।

তবে স্বাধীনতা কখনই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বা স্থায়ীভাবে আশ্বাসপ্রাপ্ত নয়। এমনকি সম্পূর্ণভাবে​ মুক্তও নয়। যদিও আমাদের মহাদেশে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য হাজার হাজার ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা ১৯৪৭ সালের আগে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আজ আমরা যে স্বাধীনতা উপভোগ করছি তাকে বজায় রাখার স্বার্থে হাজার হাজার মানুষ এখনও নিজেদের জীবন বলিদান দিতে পিছপা হচ্ছেন না।

স্বদেশ-শাসন (স্বরাজ্য) অর্জনের পঁচাত্তর বছর পরেও, আমাদের স্বাধীনতা হরণ এবং নষ্ট করার উদ্দেশ্যে আমাদের রাষ্ট্র এখনও বিভিন্ন বহিঃশত্রুর​ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে বারবার। ইসলামী জিহাদিরা আমাদের মানুষ সম্পদ, জমি ও সম্পত্তির ধ্বংস করে, অপচয় করে,লুট করে আমাদের দেশকে আবারও বর্বর যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। দ্বিতীয় মোর্চা, কমিউনিস্ট / মাওবাদী / নকশালরা তাদের ভাঙ্গাচোরা, অপ্রয়োজনীয় এবং সমাজতন্ত্রের প্রত্যাখাত দর্শন ও কমিউনিজমকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে এনে ভারতকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় ফ্রন্টে, ভারতের লোকেরা ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে এবং তাদের ধর্মপ্রচারকরা বিদেশী চিন্তাধারায় এদেশের মানুষেকে জোর করে চালিত করার চেষ্টা করছে এবং তাদের মূল এজেন্ডা হল ‘আত্মার সংগ্রহ’ করা। ভারত আক্রমণের​ মুখে রয়েছে এবং আমাদের মাতৃভূমিকে​ রক্ষা এবং আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রতিটি নাগরিকের উচিৎ লড়াই চালিয়ে যাওয়া এবং এটি আমাদের দায়িত্ব।

জাতীয়তাবাদের অনুভূতি ভালো​ এবং এটি অনুপ্রেরণা প্রদান করে। তবে জ্ঞান এবং বাস্তব তথ্যের​ ভিত্তিতে যদিনা একে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে এর আদৌও কোনো তাৎপর্য থাকবে না। আমাদের অবশ্যই সাহসিকতার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক সংকল্প দেখাতে হবে এবং সবসময় স্বাধীনতাকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে যা আমাদের বীর নায়করা তাদের রক্ত ​​এবং জীবনের বিনিময়ে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছে। আমাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে আমাদের লড়াকু মানসিকতার​ অভাব এবং কয়েক মুহুর্তের শান্তির জন্য শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করা। আমরা যদি অশুভ শক্তিকে সন্তুষ্ট করে চলতে থাকি, যদি আমরা তাদের পিছনে থেকে যায় এবং তাদের সমস্ত দাবিকে মুখ বুজে মেনে নিই তাহলে একদিন তাদের চূড়ান্ত দাবির মুখোমুখি হতে হবে আর সেটা হলো নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। আমরা চেষ্টা করলে কি সেই সময় এবং মুহুর্তের​ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না; যেখানে আমরা এবং আমাদের দেশ আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছি এবং ক্ষতিকারক শক্তির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের লড়াই করতে হবে, রক্তপাত করতে হবে এবং আমাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে হবে, কারণ এটাই আমাদের ঈশ্বরের​ উপহার, অনস্বীকার্য অধিকার।

চলুন,যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাদের কাছে এরকম শান্তির জন্য হীন ভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বীরের মতো মরে যাওয়ার অঙ্গীকার করি। জীবনের কিছু জিনিস রয়েছে যার জন্য মরে যাওয়া মূল্যবান এবং এটা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগণিত নায়করা বারবার তা প্রমাণ করেছেন। দাসত্বের শৃঙ্খলে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বাধীনতার জন্য মরে যাওয়া অনেক বেশি মূল্যবান।

আপনার এবং আমার অবশ্যই আমাদের শত্রুদের বলার মতো সাহস থাকতে হবে যে তারা নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে অগ্রসর হলে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে এবং এই মূল্য দীর্ঘকাল বহন করা তাদের কাছে ভীষণ ভয়ংকর হবে।

আমাদের বীরদের সম্মান করুন, তাদের পরিবারকে ধন্যবাদ বলুন, আমাদের বীরাঙ্গনরা যা রেখে গেছে তাকে রক্ষা করার জন্য শক্তির স্তম্ভ হোন। আমাদের বীরাঙ্গনরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল যাতে আমরা শান্তিতে থাকতে পারি এবং স্বাধীনতার শ্বাস নিতে পারি; আসুন আমরা একে অপরকে ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী, প্রাণবন্ত এবং শক্তিশালী হতে সাহায্য করার জন্য আমরা আমাদের জীবনের দৈনিক কিছু সময় ব্যয় করি।

জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম!

https://www.newsbharati.com/Encyc/2020/11/26/Swaraj-the-un-free-freedom-.html

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.