মোক্ষ লাভের জন্য তীর্থযাত্রা ও মন্দির দর্শনের দ্বারা মানব জীবন জারিত হয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে। প্রাচীন কাল হতে পশ্চিমবঙ্গের মন্দির গুলি তার কলা,কৃষ্টি ও স্থাপত্যের ঐতিহ্যময় সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। আর এর মধ্যে অন্যতম বিস্ময়কর বিষয় হলো একান্ন শক্তিপীঠ বা সতীপীঠের সবথেকে বেশি, তেরোটি সতীপীঠ অবস্থিত এই রাজ্যে। পুরান মতে প্রজাপতি দক্ষের অমতে তাঁর কন্যা সতী দেবাদিদেব মহাদেবকে বিবাহ করেন। এতে দক্ষ ক্রুদ্ধ ও রাগান্বিত হয়ে পড়েন। এবং মহাদেবকে অপমান করার জন্য এক মহা যজ্ঞের আয়োজন করেন।এবং সকলকে আমন্ত্রণ করলেও তিনি জেনেশুনে মহাদেবকে যজ্ঞে আমন্ত্রণ জানালেন না। স্বামীর অপমানে, সতী অপমানিত বোধ করেন। এছাড়াও প্রজাপতি দক্ষ সতীকে আরো নানা ভাবে সর্বসমক্ষে অপমান করলে তিনি যজ্ঞকুণ্ডে প্রবেশ করে নিজেকে শেষ করে দেন। আর এই খবর পাওয়া মাত্র দেবাদিদেব মহাদেব যজ্ঞস্থানে উপস্থিত হয়ে প্রজাপতি দক্ষের শিরশ্ছেদ করেন এবং সতীর মৃতদেহ নিয়ে তান্ডব শুরু করেন। যার ফলে সারা বিশ্ব- ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসের মুখোমুখি হয়। দেবতারা ও শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। এই পরিস্থিতিতে ভগবান বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্রের দ্বারা সতীর পবিত্র দেহকে একান্নটি খণ্ডে খণ্ডিত করেন। সতীর দেহের এই পবিত্র খণ্ড গুলি বিভিন্ন স্থানে পতিত হয়।শরীরের খণ্ড পতিত স্থানগুলি শক্তিপীঠ বা সতীপীঠ নামে পরিচিতি লাভ করে।পরবর্তীতে এই শক্তিপীঠ গুলি মায়ের বিভিন্ন রূপে মন্দিরে স্থাপিত হয়। একান্ন শক্তিপীঠের মধ্যে তেরোটিই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
মহাতীর্থ সতীপীঠ কালীঘাটের মা কালী মন্দির
কলকাতার কালীঘাটে অবস্থিত সতীর একান্ন পীঠের অন্যতম শক্তিপীঠ এই মা কালীর মন্দির।ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা মানসিংহ এই মন্দিরটি তৈরি করেন যা ছিল খুবই ছোট। পরবর্তীকালে বর্তমানের মন্দিরটি তৈরি সম্পূর্ণ হয় 1809 সালে বড়িশার সাবর্ণ রায় চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায়। পুরান মতে শিবের রুদ্র তাণ্ডবের সময় সতীর ডান পায়ের আঙ্গুল শক্তিরূপে এইস্থানে পতিত হয়। সারা বছরই পূন্যাতুর ভক্তের সমাগম এই তীর্থ ক্ষেত্রকে অনন্য গরিমা প্রদান করে। বিশেষতঃ কালী পুজো, দুর্গাপুজো ও পয়লা বৈশাখে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় মায়ের দর্শন এর জন্য।
মহাতীর্থ অট্টহাস সতীপীঠ
বীরভূম জেলার লাভপুরের দক্ষিণডিহিতে অবস্থিত অট্টহাস সতীপীঠ। পুরান মতে এখানে সতীর ঠোঁট বা ওষ্ঠ পতিত হয়েছিল। মা এখানে ফুল্লরা রূপে পূজিতা হন।এখানে শিবের মন্দির ও রয়েছে। তাছাড়া এখানে একটি প্রাচীন নদী রয়েছে এই নদীতে একসময় জাহাজ চলাচল করতো বলে কথিত আছে। খুব মনোরম পরিবেশ এই মন্দির চত্বরের। এখানে সুন্দর একটি নাট-মন্দির ও রয়েছে। কৌশিকী অমাবস্যা, কালীপুজো প্রভৃতি বিশেষ বিশেষ তিথিতে এখানে বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা রয়েছে।
মহাতীর্থ বেহুলা বা বহুলা সতী পীঠ
কাটোয়া হতে 8 কিমি দূরে কেতুগ্রামে অজয় নদের তীরে অবস্থিত বেহুলা সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ।পুরান মতে এখানে সতীর বামবাহু পতিত হয়েছিল এইস্থানে। অসাধারণ এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ রয়েছে এখানে।এটি আসলে যুগ্মপীঠ।কারনে এখানে দুটি পীঠ রয়েছে পাশাপাশি। কেতুগ্রামের ভেতরে রয়েছে বহুলা বা বাহুলা সতীপীঠ,যেখানে দেবীর বামবাহু পতিত হয়েছিল। আর গ্রামের বাইরে মরাঘাটে দেবীর ডান কনুই পড়েছিল। এখানে দেবী বহুলাক্ষী নামে পূজিতা হন।দুটির অবস্থান ভিন্ন হলেও শাস্ত্রীয় মতে এটি যুগ্মপীঠ। তবে প্রাচীন মন্দির এখন আর নেই। মন্দিরের মধ্যে এসেছে নতুনত্ব।দেবীর দুই পাশে রয়েছে গণেশ ও শিশু কার্তিক। প্রতিবছর দূর্গানবমীতে মহিষ বলি হয় এখানে।এখানে কোন ভৈরবের মন্দির নেই।
মহাতীর্থ বক্রেশ্বর সতীপীঠ
বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত বক্রেশ্বর গ্রামে অবস্থিত বক্রেশ্বর সতীপীঠ।সতীর তৃতীয় নয়ন বা ভ্রূ-মধ্য এখানে পতিত হয়েছিল। এই পূণ্যভূমি প্রাচীনকাল থেকেই প্রসিদ্ধ।পুরান মতে সুরত বা সুব্রত মুনি লক্ষ্মী-নারায়ণের বিবাহকালে দেবরাজ ইন্দ্র দ্বারা অপমানিত হন। অপমানের ফলে রাগে ও ক্রোধে তাঁর শরীর বেঁকে যেতে থাকে বা বক্র হতে থাকে।সুরত মুনির শরীরের আটটি স্থানে বক্র হয় বলে তখন থেকে তাঁকে অষ্টবক্র মুনি বলা হয়। তিনি তাঁর আরোগ্যের জন্য ভগবান মহাদেবের সাধনায় মগ্ন হন। বিভিন্ন স্থানে তপস্যা করার পর তিনি এই পুণ্যভূমিতে এসে তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেন। এবং বক্রেশ্বরে অবস্থিত উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করে তিনি আবার তাঁর পুরোনো রূপ ফিরে পান। ফলে বক্রেশ্বর একদিকে যেমন সতীপীঠ অন্যদিকে এটি একটি শৈবতীর্থ ও বটে। এখানকার উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করে বহু মানুষ রোগ- মুক্তি লাভ করেন ও পূন্য অর্জন করেন। এখানে মহাদেব বক্রনাথ রূপে এবং মা এখানে মহিষমর্দিনী রূপে পূজিতা হন। মন্দির নির্মাণে ওড়িশার শিল্পরীতির ছাপ দেখা যায়। সারা বছরই এখানে ভক্ত সমাগম হয়ে থাকে।
মহাতীর্থ যোগাদ্যা সতীপীঠ
পৌরাণিক মতে বর্তমানে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীর গ্রামের ক্ষীর দিঘিতেই পতিত হয়েছিল দেবীর ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল। সেই থেকেই দেবী পাতালবাসিনী।ক্ষীর দিঘির অতলেই থাকেন দেবী যোগাদ্যা।এই দিঘিতেই রয়েছে প্রচুর বড় বড় মাছ।যারাই মায়ের দেখভাল করে বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। মায়ের মন্দির এখানে অর্ধেকটাই জলের মধ্যে নিমজ্জিত।পাতালবাসিনী এই দেবী যোগাদ্যা বছরে মাত্র ছয় বার অতল জলের মধ্য থেকে আত্মপ্রকাশ করেন। এর মধ্যে মাত্র দু’দিন 31 শে বৈশাখ ও 4 ঠা জৈষ্ঠ সাধারণ পুণ্যার্থীরা দেবীর দর্শন লাভ করতে পারেন। দেবী এখানে চির রহস্যাবৃতা। জাগ্রত এই স্থানের মাহাত্ম্য অপরিসীম। কথিত আছে অশোকবনে সীতাকে উদ্ধারে গিয়ে রাবণের ভাই মহিরাবনের হাতে বন্দি হন রাম ও লক্ষণ। ভদ্রকালীর উপাসক মহিরাবনকে বধ করে দুই ভাইকে মুক্ত করেন হনুমান।এরপর লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে পাতালপথে দেবী ভদ্রকালীকে নিয়ে সোজা চলে আসেন ক্ষীরগ্রামে। পাতালেই রেখে দেন দেবীকে। আর সেই থেকেই দেবী পাতালবাসিনী।
*মহাতীর্থ কঙ্কালীতলা সতীপীঠ
বীরভূম শহর থেকে মাত্র 12 কিমি দূরে কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত অন্যতম সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ হল কঙ্কালীতলা। এখানে দেবীর কটিদেশ বা কঙ্কাল পড়েছিল বলে এই স্থানের নাম কঙ্কালীতলা। কঙ্কালীতলা কামাখ্যার মতো একটি গূহ্যপীঠ। মা এখানে দেবীগর্ভা। দেবী কুন্ডের জল কখনো শুকায় না এখানে।কথিত আছে এখানকার কুন্ডের সাথে কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাটের সরাসরি যোগ রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সাধকরা এখানে এসেছেন এবং সাধনা করেছেন।সুদূর কৈলাশ থেকে শুরু করে ঋষিকেশের সাধকরা বারবার এখানে এসেছেন তন্ত্রসাধনার জন্য। দেবী এখানে কালিকা রূপেই পূজিতা হন।শান্তিনিকেতনের একদম কাছেই এই শক্তিপীঠে সারাবছরই ভক্ত সমাগম লেগে থাকে।
মহাতীর্থ কিরীটেশ্বরী সতীপীঠ
মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগের কাছে কীরিটকোনা গ্রামে অবস্থিত অন্যতম শক্তিপীঠ কিরীটেশ্বরী মন্দির। পুরান মতে এখানে দেবীর চুড়া বা কীরিট পতিত হয়েছিল। ঢাকার রানী ভবানী প্রথম এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা আজ ভগ্নপ্রায়। বর্তমানে নতুন মন্দির স্থাপিত হয়েছে। মুর্শিদাবাদের নবাবরা ও শ্রদ্ধা করতেন এই মন্দিরের। শোনা যায় মীরজাফর এই মন্দিরের দেবীর চরণামৃত পান করেছিলেন। পৌষ মাসের শনি ও মঙ্গলবার এখানে বিশাল মেলা বসে। পূজিত স্থানটির স্থাপত্যে রয়েছে বৌদ্ধ ও বাংলার স্থাপত্য রীতি।মা কিরীটেশ্বরী জাগ্রত দেবী। এখানে আসলে মন প্রশান্তিতে ভরে যায়।
মহাতীর্থ নলাটেশ্বরী সতীপীঠ
বীরভূম জেলার নলহাটী শহরের গায়ে অবস্থিত নলহাটেশ্বরী শক্তিপীঠ। খুব সহজেই এই মন্দিরে পৌঁছানো যায়। পুরান মতে সতীর পবিত্র দেহাংশের মধ্যে গলা(নলা) বা কণ্ঠ এখানে পতিত হয়েছিল। কথিত আছে কামদেব প্রথম এখানে দেবীর নলা খুঁজে পান। এবং স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে মন্দির নির্মাণ করেন, বহু বছর আগে। অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে এই মন্দিরটি। এখানে একটি ছোট্ট পাহাড় আছে। সেই পাহাড়ের কোলে এই মন্দিরটি অবস্থিত। মা এখানে কালিকা বা সেফালিকা রূপে পূজিতা হন। তবে প্রণামমন্ত্রে দেবীকে নলাটেশ্বরী রূপেই বর্ণনা করা হয়। এখানে প্রথমে নারায়ণের পূজা হয় তারপরেই মায়ের পুজো শুরু হয়।বশিষ্ঠ, রামশরণ, কুশলানন্দ প্রভৃতি মুনিরা এখানে এসে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন।বর্গীসর্দার ভাস্কর পন্ডিত এখানে পুজো দিতে আসতেন। মা নলাটেশ্বরীর নিত্য অন্নভোগ হয় ভক্তরা চাইলে তা পেতেও পারেন।
মহাতীর্থ নন্দিকেশ্বরী সতীপীঠ
বীরভূম জেলার সাঁইথিয়ার নন্দীপুর গ্রামে অবস্থিত নন্দিকেশ্বরী মন্দির। সাঁইথিয়া রেলওয়ে স্টেশনের একদম কাছেই অবস্থিত মন্দিরটি। এখানে সতীর কন্ঠ হার বা নেকলেস পড়েছিল। এখানে দেবী নন্দিনী রূপে এবং ভৈরব নন্দিকেশ্বর রূপে পূজিত হন। সতী পীঠের 45 তম সতীপীঠ হল এই নন্দিকেশ্বরী শক্তিপীঠ। সাঁইথিয়ার পূর্বনাম ছিল নন্দীপুর সেই নাম অনুসারে দেবীর নাম নন্দিকেশ্বরী। এখানে ভৈরব হলেন নন্দিকেশ্বর।একই শিলাখণ্ডে পাশাপাশি পূজিতা হন দেবী নন্দিনী ও তাঁর ভৈরব নন্দিকেশ্বর।এই মন্দিরের পরিবেশ খুবই সুন্দর। এখানে আসলে মন শান্ত হয়ে যায়। মন্দিরে শাক্ত ও বৈষ্ণব রীতির ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
মহাতীর্থ রত্নাবলী সতীপীঠ
হুগলী জেলার খানাকুলে রত্নাকর নদীর তীরে অবস্থিত রত্নাবলী সতীপীঠ যা আনন্দময়ী মন্দির নামেও পরিচিত। এখানে সতীর দক্ষিণ বা ডান কাঁধ বা স্কন্ধ পতিত হয়েছিল। দীর্ঘদিন এই মন্দির অবহেলাতে পড়ে থাকলেও বর্তমানে এই মন্দিরে পুজো শুরু হয়েছে। মায়ের মূর্তি এখানে অনন্য সুন্দর। সৃষ্টি -স্থিতি-লয় এই তিনটির প্রতিরূপ হলেন মা আনন্দময়ী।এইরূপ মূর্তি ভারতবর্ষের আর কোথাও নেই। এখানে তন্ত্র বিধিমতে প্রথম কালীপুজোর প্রবর্তন করেছিলেন কৃষ্ণানন্দ আগম বাগীশ।ইনি রামপ্রসাদের ও গুরু ছিলেন। স্থানটির প্রচার নেই বলে সেভাবে ভিড় হয় না বললেই চলে।
মহাতীর্থ ত্রিস্রোতা সতীপীঠ
জলপাইগুড়ি জেলার ফালাকাটাতে শালবাড়ী( বৈকন্ঠপুর) গ্রামে অবস্থিত সতীর একান্ন পীঠের অন্যতম পীঠ ত্রিস্রোতা মা ভ্রামরী দেবীর মন্দির। তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত মন্দিরটি।সতীর পবিত্র দেহের বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুল এখানে পতিত হয়েছিল। বহু দূর দূরান্ত হতে ভক্তরা এখানে আসেন। মাঘীপূর্ণিমাতে এখানে বিশেষ পূজা হয়। এছাড়া শনিবার, পূর্ণিমা ও অমাবস্যাতে ও বিশেষ পূজা হয়ে থাকে। এখানে একটি অদ্ভুত ধরনের দুই মূলের গাছ রয়েছে যার মূলে অনেকেই মনস্কামনা পূরণের জন্য মানত করেন লাল কাপড় বেঁধে।
মহাতীর্থ উজানী সতীপীঠ
বর্ধমান জেলার গুসকরার অজয় নদের তীরে উজানী গ্রামে (কোগ্রাম) অবস্থিত উজানী শক্তিপীঠ যা মঙ্গল চন্ডী মন্দির নামে বেশি পরিচিত। পুরান মতে এখানে দেবীর ডান হাতের কব্জি পতিত হয়েছিল।মা এখানে মঙ্গলচণ্ডী রূপে পূজিতা হন। খুব গোছানো এবং সুন্দর এই মন্দিরটি। প্রতিদিন মাছ দিয়ে অন্ন ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। স্থানটি খুবই শান্ত প্রকৃতির। এখানেই রয়েছে নীললোহিত শিবের মন্দির।
মহাতীর্থ বিভাষ সতীপীঠ (বর্গভীমা মন্দির)
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রুপনারায়ন নদের তীরে তমলুকে অবস্থিত বিভাষ সতীপীঠ বা ভীমকালি মন্দির যা বর্গভীমা কালী মন্দির নামে বেশি পরিচিত। পুরান মতে এখানে সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পতিত হয়েছিল। দেবী এখানে উগ্র তারা রূপে পূজিতা হন। এখানে বর্গভীমার সাথে সাথে আরো অনেক দেবদেবীর মূর্তিও রয়েছে। অসাধারণ টেরাকোটার কাজ রয়েছে মন্দিরের গায়ে। কথিত রয়েছে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা এই মন্দির তৈরী করেন। পূর্বে এখানে অন্য কোনো বারোয়ারি পূজা হত না। তবে এখন প্রথমে বর্গভীমা কে পুজো দিয়ে বেশকিছু বারোয়ারি পুজো হচ্ছে। ভক্তি সহকারে তিনবার পুজো হয় এখানে। দেবীকে আমিষ খাবার দেওয়া হয় এখানে। রাতে শোলমাছ ও পাঁঠার মাংস দিয়ে তন্ত্র মতে নিশি পূজো করা হয়। বছরের 360 দিন দেবী এখানে উগ্র তারা রূপে, একদিন শ্যামা রূপে ও বাকী চারদিন দূর্গারূপে পূজিতা হন দেবী।বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে আসেন মায়ের দর্শনে।
ড.সুমন পানিগ্রাহী (Dr. Suman Panigrahi)