বুথের পথ আটকে হুমকি, ভোট দিতে দেব না, দম থাকলে মিডিয়া নিয়ে আয়

শুরুটা নরম। বিনয়। বুঝিয়ে বলা। তাপর থেকেই গরম। গালিগালাজ। মেরে দেওয়ার হুমকি। মিডিয়া ডাকলে পাটপাট করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি। প্ল্যান ‘এ’ ফেল করলে প্ল্যান ‘বি’ রেডি ভোট আটকাতে।

মিনাখাঁর শালিপুর পঞ্চায়েতের খালিসাদি গ্রাম। বাড়ির মহিলারা আগেই বুথে পৌঁছে গিয়েছিলেন। বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে খানিকটা পরে বুথমুখী হাঁটতে থাকেন জনৈক ভোলা। সঙ্গে পাশের বাড়ির একজন। বুথের বিশ গজ আগেই আমবাগানের ভিতর থেকে একদল লোকের ডাক। কেউ ভোলা তো কেউ আবার ‘ভোলা দা।’ সম্মানে কোনও খামতি নেই। কোলে বাচ্চা নিয়েই রাস্তা থেকে সামান্য  নীচে আমবাগানে নামেন ভোলা। সামনে ওরা জনা আটেক।

তাদের মধ্যে থেকেই একজন বলে, ‘ভোলা দা বাড়ি চলে যাও। ভোট দিয়ে কী হবে!’ সন্তানকে আগলে ভোলা হেসেই জিজ্ঞেস করেন, ‘ভোট দেব না? কী বলিস তোরা?’ তাদের প্রশ্ন ‘কাকে দেবে?’ তখনও ভোলা হাসছেন। পাড়ার ছেলে। এমন করবে কখনও ভাবেনইনি। জটলার মধ্যে থেকেই একজন বলে, ‘ভোট দিও না ভোলা দা। না দিলে ভাবব আমাদের দিয়েছ। আর দিলে ভাবব অন্য লোককে।’ ভোলা নাছোড়। বলেন, ‘আমার ভোট আমিই দেব।’ গলার আওয়াজ চড়াতে শুরু করে ওরাও। ‘ভুল করছ ভোলা দা। সমস্যা হবে। ভাল হবে না। যা কাজ বলবে করে দেব। ভোট দিও না।’

ভোলা বুথের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে আটকে দেয় ওরা। টেনে নিয়ে যায় বাগানের ভিতর। যারা একটু আগে দাদা বলে সম্মান দিয়ে তুমি সম্বোধনে কথা বলছিল, তাদেরই একজন বলে উঠল, “এই …… বাড়ি যা। অনেক বার বলছি। মেরে তোর ……। কোনও ………বাঁচাতে পারবে না। মিডিয়াকে ডাকলে আরও……।”

এই ওরা কারা? অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুধু মিনাখাঁ নয়। দেগঙ্গা, হাড়োয়া, সন্দেশখালি, মিনাখাঁর বিস্তীর্ণ এলাকায় এ ভাবেই ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ সামাল দিতে নাজেহাল হয় পুলিশ। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভোটারদের বুথে ফেরায়।  সাধারণ ভোটারদের অভিযোগ, রাস্তা আটকে তৃণমূলের কর্মীরা বলছে, “ভোট দিতে দেব না। দম থাকলে মিডিয়া ডেকে নিয়ে আয়।”

দেগঙ্গার নুরনগর পঞ্চায়েতের ৯০ নম্বর বুথে বিজেপির এক কর্মীকে মাথায় বাঁশ দিয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। শক্তি ঘোষ নামে ওই বিজেপি কর্মীর গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী গোবিন্দপুর এলাকায় বিজেপি এজেন্টদেরকে বসতে দেওয়া হচ্ছিল না।  শনিবার রাত থেকে তাদের উপরে চলছিল অত্যাচার।এই খবর পেয়ে দেগঙ্গা নুরনগর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কয়েকজন কর্মী গোবিন্দপুর এর পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছিল। সেই সময় রাস্তায় তাদেরকে আটকে বিজেপি কর্মী শক্তি ঘোষকে এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়।  আশঙ্কাজনক অবস্থায় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে।

বাসন্তীতে ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়া ও বিরোধী দলের এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগে পথ অবরোধ করে বিজেপি। অশোকনগর ১০ নং ওয়ার্ডে ১ নং উন্নয়ন পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০২ বুথে সিপিএমের বুথ ক্যাম্পে আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.