ভুটানের ভেতর আস্ত একটা গ্রাম বানিয়েছে চিন! লাদাখের পরে পারদ চড়ছে ডোকলামে

পুরনো ক্ষত টাটকা হচ্ছে। ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। এই ডোলাম মালভূমিতেই চিনা বাহিনীর রাস্তা তৈরির প্রতিবাদ করেছিল ভারত। তারই ফলস্বরূপ মাস দুয়েক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিল দুই দেশের বাহিনীই। সে টানাপড়েনের কূটনৈতিক সমাধান হয়েছিল অন্তত এক বছর পরে। ফের তেমনই কোনও পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে কি? ভুটানের ভেতর চিনের গ্রাম তৈরি নিয়ে সে আশঙ্কাই করছেন কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা।

ভুটানে গ্রাম বানিয়েছে চিন?

ভুটান সীমান্ত থেকে দু’কিলোমিটার ভেতরে আন্ত একটা জনপদ করে তুলেছে চিন। ছোট্ট একটা গ্রাম যেখানে নাকি বসতিও গড়ে তুলেছে লোকজন। নতুন উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে এমনটাই। গ্রাম শুধু নয় তার লাগোয়া রাস্তাও তৈরি করছে চিন। ডোকলাম মালভূমির যে জায়গা নিয়ে অশান্তি বেঁধেছিল নতুন গ্রাম তৈরি হয়েছে তার কিছু দূরেই। উপগ্রহ চিত্র জানান দিয়েছে, চিন ও ভারতীয় বাহিনী যেখানে ৭৩ দিন মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল তার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বেই রয়েছে ওই গ্রাম।

ভারতের গোয়েন্দা সূত্র ও কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুটানের ভেতরে গ্রাম তৈরির কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে চিন। কিন্তু এই নতুন জনপদ চিনা বাহিনীর তৈরি বলেই খবর মিলেছে। গ্রামের নাম ‘পাংদা’ । চিনের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সংবাদমাধ্যম সিজিটিএনের এক শীর্ষ প্রযোজক শেন শিওয়েই প্রথম এই গ্রামের খবর সামনে আনেন। নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পাংদা গ্রাম ও তার সংলগ্ন রাস্তার ছবি দিয়ে শেন লেখেন, “ভুটানের ভেতরে আমাদের পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। নতুন পাংদা গ্রাম তৈরি হয়েছে। ইয়াদং কাউন্টি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এই গ্রামে বসবাসও শুরু করেছেন লোকজন।” গ্রামের অবস্থান ও মানচিত্রও প্রকাশ করেন তিনি। যদিও পরে সেই টুইট মুছে দেন শেন।

6nj22qgs

বস্তুত, ভুটান সীমান্তে চিনা সেনার তৎপরতা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ভুটানে ভারতের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল ভেতসপ নামগিয়েল। পাংদা গ্রাম তৈরির খবরও অস্বীকার করেন তিনি। নামগিয়েল বলেন, ভুটানের ভেতর কোনও গ্রাম বানায়নি চিন। জমি জবরদখলের চেষ্টাও হয়নি।

ডোকলামে চিনের উপদ্রব, তৈরি হচ্ছে টানেল

ভারতের কৌশলগত বিশেষজ্ঞ ডক্টর ব্রহ্ম চেল্লানে বলেছেন, ডোকলাম সংঘাতের জায়গাটা ছেড়ে তার আশপাশে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে চিনের বাহিনী। গত তিন বছরে ডোকলাম মালভূমিতে নিজেদের পাকাপাকি সামরিক কাঠামো বানানোর চেষ্টা করেছে চিন।

ভারতের সেনা সূত্র জানাচ্ছে, গালওয়ানে সংঘাতের আগে থেকেই ডোকলাম নজরে ছিল চিনের বাহিনীর। চিন-ভুটান সীমান্তের মধ্য ও পশ্চিম সেক্টরে বহুদিন ধরেই তৎপর লাল ফৌজ। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভুটানকে চাপে রাখতেই চিনের এই কৌশল। পূর্ব লাদাখের একটা বড় অংশ চিন যেমন নিজেদের বলে দাবি করে, তেমনি চিন-ভুটান সীমান্তের পশ্চিম সেক্টরে ৩১৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ও মধ্য সেক্টরের ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চিন নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া। ওই এলাকায় নিয়মিত টহলদারির পাশাপাশি সেনা মোতায়েনের জন্য পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে বলে খবর।

ডোকলামের ঘটনার পরে পশ্চিম সেক্টরে ভুটানের পাঁচটি এলাকায় চিনা ফৌজের অনুপ্রবেশের খবরের মিলেছিল। চুম্বি উপত্যকায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে চিন রাস্তা তৈরি করেছে বলে অভিযোগ। তোর্সা নদীর ধারে যা চিন-ভুটান সীমান্ত থেকে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে সেখানে চিনা বাহিনী নতুন করে রাস্তা বানাচ্ছে বলে খবর মিলেছে।

উপগ্রহ চিত্র আরও দেখিয়েছে, ডোকলামের কাছে টানেল তৈরি করছে চিনের বাহিনী। ডোকলাম সীমান্তে যে রাস্তা তৈরি নিয়ে বিতর্কের শুরু হয়েছিল, সেই রাস্তা লাগোয়াই টানেল বানাচ্ছে চিন। মেরুগ লা-র কাছে অন্তত ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য সেই টানেলের। শীতে সেনাদের আশ্রয় নেওয়ার জন্যই ওই টানেল তৈরি হচ্ছে বলে অনুমান।

China remains silent on road construction near Doklam - Rajya Sabha TV

সিকিম, অরুণাচলেও সক্রিয় লাল সেনা

গালওয়ানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরেও সিকিম সীমান্তে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিল দুই দেশের সেনাই। বস্তুত ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখে এবং ইস্টার্ন সেক্টরে অরুণাচল ও সিকিমে ভারত ও চিনা সেনার মধ্যে এ ধরনের ঘটনা একেবারেই নতুন নয়। টহলদারিকে কেন্দ্র করে আকছার তা লেগেই রয়েছে। কিন্তু গালওয়ানের সংঘর্ষের পরে সিকিম, অরুণাচলে চিনা বাহিনীর তৎপরতা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। হিমাচলের কাউরিস পাসের কাছে চুরুপ গ্রাম ঘেঁষে রাস্তা তৈরি করছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। তুনজুম লা-র কাছে নতুন নির্মাণ হচ্ছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ডেমচক থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে শিকুয়ানহিতে চিনা যুদ্ধবিমানের ওঠানামা লক্ষ্য করা গেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণেরাখা থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে চাংমুতে কমিউনিকেশন টাওয়ার বানাচ্ছে চিনা বাহিনী।

অরুণাচল সীমান্ত বরাবর চার জায়গায় সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করতে দেখা গিয়েছে চিনের বাহিনীকে। ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে আসাফিলা, টুটিং অ্যাক্সিস, চ্যাং জ়ি ও ফিসটেল-২ সেক্টরে সেনা মোতায়েন করতে দেখা গেছে চিনকে। ভারতের সেনা সূত্র জানাচ্ছে, এই চারটি স্পটের মধ্যে আসাফিলা এবং ফিসটেল-২ সেক্টরে চিনে বাহিনীর তৎপরতা বেশি। এই দুটি স্পট ভারতের সীমান্তের খুবই কাছে। অনুমান করা হচ্ছে এই দুই এলাকায় সেনার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি রাইফেল ডিভিশনও মোতায়েন করছে পিপলস লিবারেশন আর্মি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.