ভেঙে পড়া মাঝেরহাট ব্রিজ (Majerhat Bridge) নতুন করে নির্মাণের কাজ কার্যত শেষ করল রাজ্য সরকার। রবিবার সারাদিন সেলিমপুরের দিকের মুখে আপ–ডাউন দুই অংশেই বিটুমিন–কংক্রিট করে হেভিওয়েট রোলার চালিয়ে নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করালেন পূর্ত দপ্তরের শীর্ষ ইঞ্জিনিয়াররা। বজবজ লাইনের উপরে ব্রিজের ঝুলন্ত অংশের ‘সেফটি-সিকিউরিটি’ সার্টিফিকেট এবং ভারবহন পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে রেলকে চিঠি পাঠিয়েছিল পূর্ত দফতর। সেই সবুজ সংকেতও এসে গিয়েছে। রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, “ভারবহন ক্ষমতা অর্থাৎ লোড টেস্ট ও দু’পাশের কেবল ফিক্সড সম্পূর্ণ করলে ব্রিজ চালুর জন্য প্রস্তুত হবে।” রেলের (Indian Railways) সেফটি ও সিকিউরিটি সার্টিফিকেট পেলে ব্রিজটি উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়(Mamata Banerjee)।
২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪.৪২ মিনিটে পুরোনো মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যের পূর্ত দপ্তরকেই নতুন উড়ালপুল তৈরির দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রেলের অনুমতির জন্য নয় মাস এবং কোভিডের কারণে আরও তিনমাসের বেশি নির্মাণ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ধাঁচে ২৫০ কোটি খরচে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ নতুন সেতুটি সম্পূর্ণ হচ্ছে। পুরনো ব্রিজ দুই লেনের ছিল, কিন্তু নতুন সেতুটি চার লেনের। ভেঙে পড়া ব্রিজটি রেল লাইনের ফাঁকে ফাঁকে তিনটি পিলারের উপর দাঁড় করানো ছিল। কিন্তু নির্মাণ কার্যত সম্পূর্ণ হওয়া নতুন ব্রিজটির ২২৭ মিটার অংশ কেবল দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকছে। এর মধ্যে ১০০ মিটার ব্রিজ রেলের লাইনের উপরে ঝুলছে। তাই লাইনের মাঝখানের পুরোনো পিলার তিনটি শীঘ্রই ভেঙে ফেলা হবে।
এদিন থেকেই পিলারের পাশে মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। সেলিমপুর অংশে বিটুমিনের কাজ শেষ হতেই এদিন বিকেলে হাঁফ ছেঁড়েছেন ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়াররা। পূর্ত দফতরের ভারপ্রাপ্ত শীর্ষকর্তা এদিন ব্রিজের মাথায় দাঁড়িয়ে জানান, “নতুন করে আর ঢালাই বা কংক্রিট করে তৈরির কিছু নেই। কিন্তু এই ধরনের একটা নতুন ব্রিজের নির্মাণ শেষ হওয়ার পরেও ভারবহন ক্ষমতা ও কেবল ফিক্সড করাটা আরও কঠিন কাজ। সেটাই এখন বাকি।” ব্রিজটি চালু হলে ফের কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও শহরতলির যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে যাবে। দুর্ভোগ কমবে বেহালাবাসীর। দিন চার-পাঁচ পরেই পূর্ত দফতর লোড টেস্টিং করার কাজ শুরু হবে। নতুন ব্রিজে সর্বাধিক ৩৮৫ টন ভার নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাই মালভরতি অনেকগুলি লরি একসঙ্গে ব্রিজের উপর তুলে ভারবহনের পরীক্ষা হবে। যখন সর্বাধিক লোড হবে তখন কেবলের সম্প্রসারণ ও ভারহীন অবস্থায় কতটা সংকোচন হবে তা বিশেষ মানের সেন্সর লাগিয়ে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা।
সেতুটি চালুর পরেও এই সেন্সর ২৪ ঘণ্টাই কাজ করবে বলে পূর্ত দপ্তর জানিয়েছে। তবে তারা কেবল ফিক্সডকেই পাখির চোখ করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করছে। পূর্তমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, “কেবল ফিক্সড নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়াররা খুবই সতর্ক এবং সুক্ষ্ম নজরদারির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।” তবে ব্রিজটি কবে উদ্বোধন হবে তা নিয়ে মুখ কুলুপ সবার। পূর্তমন্ত্রী ২৫ নভেম্বর ব্রিজটি চূড়ান্ত পরিদর্শনে আসবেন, কিন্তু রেলের সেফটি সার্টিফিকেট পেলে তবেই এ মাসের শেষে সেটির উদ্বোধন করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।