সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু ইভেন্টে তরুণ ভারতীয় অ্যাথলিট ও ক্রীড়াবিদদের জয়ধ্বনি শোনা গেল এশীয় ও বিশ্ব পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। স্বভাবতই এদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে। বস্তুত আন্তর্জাতিক স্তরের রাইফেল শুটার রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠোর দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী হবার পর থেকেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে সামগ্রিক ক্রীড়া ও শরীরচর্চার আঙ্গিক ও ব্যবহারিক প্রয়োগে। গত পাঁচ বছরে এনডিএ শাসিত রাষ্ট্রপরিচালনায় রাজ্যবর্ধনের মন্ত্রীপদে আসীন হওয়াই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মন্ত্রী হয়ে রাজ্যবর্ধন পাঁচ বছরের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তা যদি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয় তবে অচিরেই ভারত বিশ্ব ক্রীড়াবৃত্তে সম্মানজনক অবস্থান গড়ে নেবে। তবে তার জন্য সরকারের মন্ত্রক সাই এবং দেশের সব খেলার জাতীয় ফেডারেশনকে একসঙ্গে পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে।
বিশ্বশুটিংয়ের আসরে ভারতের পদক তালিকায় শীর্ষস্থান প্রাপ্তি রীতিমতো চমকপ্রদ বিষয়। মনুভাকের ও সৌরভ চৌধরি দুই ‘অনূর্ধ্ব ২০’তরুণ-তরুণী মিক্সড এয়ার পিস্তল ইভেন্টে বিশ্বরেকর্ড-সহ সোনা জিতে গোটা দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গত বছরের কমনওয়েলথ গেমস থেকেই এই দুজন সাড়া জাগানো পারফরমেন্স মেলে ধরছেন। নিজেদের ক্ষেত্রে বিশ্বমানে পৌঁছে গেছেন। তবে তাদের যাত্রা নিয়ে যাতে কোনো বাধা না আসে তা দেখা কর্তব্য জাতীয় শুটিং ফেডারেশনের। তাদের হাতে বিশ্ব ও ইউনিভার্সিয়াড চ্যাম্পিয়ন উপর্যুপরি বধ হয়েছেন বিভিন্ন আসরে এবং অতি সম্প্রতি চীনের উহানে বিশ্বকাপ শুটিংয়ে। ধনী কৃষিজীবী জাঠ পরিবারের সন্তান হওয়ার সুবাদে বাড়িতেই পরিকাঠামোগত সুযোগ সুধিধে পেয়েছেন মানু ও সৌরভ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে চরম আত্মপ্রত্যয়ী জেদ, সংকল্প, নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও টেকনিকের উৎকর্ষ।
ভারতের সনাতন ঐতিহ্যের খেলা কুস্তি। পঞ্জাব-হরিয়ানার বিভিন্ন আখড়ায় বছরের পর বছর সাধনায় রত মল্লবীরের দেশের জন্য প্রচুর সম্মান-গৌরব এনে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে বজরং পুনিয়া ফেদারওয়েট ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরা গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানশিপে সোনা জেতার পর কয়েকদিন আগে এশিয়ান মিটে নিজের খেতাব ধরে রাখেন। যে কটি টুর্নামেন্টে নেমেছেন বজরঙ, প্রতিটা ক্ষেত্রেই বিজয় মঞ্চের একেবারে সবচেয়ে উঁচুধাপে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। কমনওয়েলথ, এশিয়া, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব তাঁর ক্যাবিনেটে শোভা পাচ্ছে। পালোয়ানি সমাজে তার নাম ধরে হনুমান বজরংবলী। প্রথাগত টেকনিক ও স্টাইল থেকে বেরিয়ে এসে নিত্যনতুন কৌশল আয়ত্ত করে বিশেষ ঘরনার জন্ম দিয়েছেন বজরং। নিজের ক্যারিশমা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে পারলে অচিরেই বজরং ভারতের সর্বকালের সেরা মল্লযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে যাবেন।
এশিয়ান ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ড কিন্তু ভারতকে খানিকটা হলেও হতাশ করেছে। গত বছর জাকার্তা এশিয়ান গেমস থেকে আটটি সেনা এসেছিল। দোহার এটিএফ মিটে সেখানে মাত্র চারটি সোনাজয় সুনামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। শটপাটে ভারতীরা বিগত ৩০ বছর ধরে এশীয় পর্যায়ে অপরাজেয়। দোহায় তেশীন্দার পাল সিংহ এশিয়ান রেকর্ড-সহ সোনা জিতে প্রত্যাশার পারদ চড়িয়ে দিয়েছেন। স্বপ্ন বর্মণ হেপ্টাথেলনে রুপো জিতে খানিকটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। ব্যর্থ হয়েছেন দ্যুতি চাঁদ ভারতের মহিলা রিলে দল। তবে মাঝারি পাল্লার দৌড়ে খানিকটা হলেও মুখরক্ষা হয়েছে। আশার কথা, বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিমান অ্যাথলিট দরজায় কড়া নাড়ছেন, যাঁরা অ্যাথেলেটিক্সের ঐতিহ্যমণ্ডিত পতাকা বহন করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন।
দুই তরণ বক্সার অমিত পাঙ্গাল ও কবিন্দার সিংহ ফাটাফাটি কাণ্ড করে দিয়েছেন এশীয় বক্সিং মিটে। অমিতের আপার কাট জ্যাবের কোনো হদিশ পাননি কাজাখাস্থান ও ইরানের বিশ্বমানের ফাইটাররা। বিজেন্দার সিংহ বিকাশ কৃষ্ণনের যোগ্য উত্তরসূরী অমিত, কবিন্দাররা। বিজেন্দার এখনো পর্যন্ত এশীয় -ওশেনীয় পেশাদার বক্সিংয়ে অপরাজেয়। আর বিকাশযুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার বক্সিং রিঙে ফুল ফোটাচ্ছেন। তবে এশীয় মিটে শিবা থাপা হতাশ করেছেন। অমিত পাঙ্গালই ভারতের ভবিষ্যৎ। এবছর বিদেশে যাচ্ছেন ট্রেনিং নিতে।ফিরে আসার পর আরও শাণিত, পরিশীলিত হয়ে রিঙে নামবেন। তখন বিশ্ব পর্যায়ে আরও বড়ো সাফল্য করায়ত্ত হবে একথা বলে দেওয়া যায়।
জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
2019-05-17