সতেরোতম লোকসভা নির্বাচন সবে শেষ হয়েছে। এবং বলাই যেতে পারে, জনগণের রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। চূড়ান্ত হয়ে গেছে, এবার কোন দলকে সরকার গড়ার অধিকার দিলেন ভোটাররা। কাকে নির্বাচিত করলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। গোটা ভারতবর্ষ জুড়েই যখন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চলছে হাজারো সমীক্ষার কাটাছেড়া, তেমনি একটা সময়ে কিন্তু গোটা দেশবাসী তাকিয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গের দিকে। কারণ এবার ভোটে গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজরকাড়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গই। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সংবিধান বিরোধী কেন্দ্র বিরোধিতা এবং সম্পূর্ণ ভারতীয় তথা বঙ্গসংস্কৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর সঙ্গে দ্বৈরথের চাপান-উতোর নিঃসন্দেহে এবারের লোকসভা ভোটে নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে। এমনকী রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও পশ্চিমবঙ্গ অসীম গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ফলাফল এবার সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা বিজেপির কাছে। এই ফলাফল আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে আরও একটি কারণে। কারণটি হলো, একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চিত হারবেন জেনেও মোদীজীর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন নিজেকে বাঙ্গালি প্রধানমন্ত্রীর মুখ’ হিসেবে ঘোষণা করে। রাজ্যের ৪২টি আসনের ফলাফল এবার তাই বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। কারণ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম স্লোগান তোলেন– ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ এবং এই স্লোগান তুলেই তিনি ব্রিগেডের মঞ্চে বিরোধীদের গঠবন্ধন গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। যে প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই বানচাল হয়ে গেলেও, তিনি মনে করছেন, রাজ্যে তার দল তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় স্তরে সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
এরকম পরিস্থিতিতে এ তাবৎ সম্পূর্ণ হওয়া লোকসভা কেন্দ্রগুলির ফলাফল কী। হতে পারে সে সম্বন্ধে একটি বিশ্লেষণ জরুরি। এমনকী শেষ পর্যায়ের ফলাফল হবে কেমন তারও একটা অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু তার আগে দেখে নেওয়া দরকার— কোন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজ্য লোকসভা নির্বাচনের সম্মুখীন এবং ভোটের লড়াইয়ে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি কোন কোন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
রাজ্যে শাসক দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের ইতিমধ্যেই ৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এবং বলা যেতে পারে মাত্র ৮ বছরেই দলকে বইতে হচ্ছে সরকার বিরোধী এবং দলবিরোধী অভিযোগের পাহাড়-প্রমাণ বোঝা। বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের জমানায় অভিযোগের রাশ যতটা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি অভিযোগে ইতিমধ্যে অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেস। উন্নয়নের দোহাই আর মা মাটি মানুষের স্লোগান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই চেষ্টা করুন না বাঙ্গলার জনগণের ‘ঘরের মেয়ে’ ইমেজটাকে ধরে রাখার, এবার তা বেশ কঠিন। কারণ তিনি। নিজেই সরকারের প্রধান এবং দলের প্রধান হিসেবে সরকার ও দলের কাছেই সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এখন তার ভূমিকা সেই মূখ কালিদাসের মতোই যিনি যে ডালে বসেছিলেন, সেই ডালটিই কর্তন করেছিলেন একথা না ভেবেই যে নিজের পায়ে কুড়ুল মারাটা শুধু রক্তপাতই ঘটায় না, নিজেকেই পঙ্গু করে দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল ও সরকার এখন সেই পঙ্গুত্বের পর্যায়ে।
ইতিমধ্যে আরএসএস এবং বিজেপির টানা প্রচেষ্টায় অন্যান্য রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দুভোট অনেক বেশি সংগঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপি অনেক বেশি শক্তি সঞ্চয় করেছে। বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের ঝড়ের মুখে নিজেকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে পেরেছে। এর ফলে একদিকে যেমন কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট পায়ের তলার মাটি হারিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে ভোট এগিয়েছে মেরুকরণের পথে। বলা যেতে পারে দু’পক্ষই এখন মুখোমুখি লড়াইয়ের ময়দানে। সেই ‘ডুয়েট’-এর মত। বিজেপির শক্তি সঞ্চয় মানেই তৃণমূলের শক্তিক্ষয়। এর মূল কারণ তৃমমূলের মূল ভোটব্যাঙ্ক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট— সেখানেই চিড় ধরাতে পেরেছে বিজেপি।বিজেপির অবিরাম বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি একদিকে যখন হিন্দু ভোটকে। একজোট করেছে দেশের এবং রাজ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে, তেমনি মুসলমান ভোট অস্তিত্বের সংকটের কারণে দ্বিধা বিভক্ত হয়েছে। এদেশি বৈধ মুসলমানরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে তৃণমূলের আঁচল ধরা ছেড়ে বিজেপির গেরুয়া রঙে মেতেছে বহু জেলায়। এর কারণ হলো, মালদা বামুর্শিদাবাদের মতো বহু জেলায় মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও তৃণমূলের গুন্ডাগিরির শিকার হচ্ছেন। মারছেনও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ, মরেছেও মুসলমান। তার ওপরে আছে সরকারের আর্থিক অনুদান দিয়ে মুসলমান সমাজের মূল প্রয়োজন উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাকে এড়িয়ে যাওয়ার সরকারি প্রবণতা। এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু যেমন প্রতিদিন ‘বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠছে, তেমনই হিন্দু-মুসলমান সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। মুসলমানরাও বুঝছেন এর জন্য দায়ী রাজ্য সরকার এবং শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি তথা মোদীজীকে যতই গণতন্ত্রের ফঁসুড়ে বলে আখ্যা দিন না কেন, রাজ্যের মানুষ বুঝে গেছেন সততার প্রতিমূর্তি নিজেই এখন রাজ্যে তথা গোটা দেশের গণতন্ত্রের সামনে সবচেয়ে বড়ো বিপদ। কারণ তিনি যখন একদিকে বিজেপির ঘাড়ে জনগণকে ধর্ম ও জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজনের দায় চাপাচ্ছেন, তখন তিনি নিজেই সেই অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন। কারণ, এরাজ্যে মতুয়াদের নিয়ে তিনিই প্রথম রাজনীতি শুরু করেন। ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি কার্যকর করতে গিয়ে দার্জিলিঙে বিভাজন করেছেন পাহাড়ি মানুষগুলিকে গোষ্ঠীগত বোর্ড গঠন করে— যেমন গোখা বোর্ড, ভূটিয়া বোড, লেপচা বোর্ড ইত্যাদি। এর ফলে সেখানে এখন যা চলছে তা গৃহযুদ্ধেরই নামান্তর। ২০১১ সালের পর তৃণমূল কোনো ভোটেই মানুষের ভোটে জেতেনি। ছাপ্পাভোট তৃণমূলের মূলধন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েতগুলির বিরোধীশূন্য করার তাগিদে ভোট লুটের যে নজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খাড়া করেছিলেন, তার ফল হয়েছে বিষময়। ভোটারদের একাংশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে একরোখা হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী হয়ে গেছেন। অন্যদিকে যেসব গুন্ডা বা সমাজবিরোধীদের কাজে লাগিয়ে ৩৪ শতাংশ পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য করেছিলেন, তারা আজ তৃণমূলের ছায়াও মাড়াচ্ছেন না। কারণ তারা চোখের সামনেই দেখছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ উঠে এসেছে। এই প্রতিপক্ষ আরও অনেকবেশি বড়ো আয়তনে। শক্তিতেও তুলনাহীন। হয় চুপচাপ বসে যাও, না হয় সরাসরি বিজেপির কর্মী হয়ে যাও। ঠিক একই কারণে তৃণমূল কংগ্রেসের একটা বড়ো অংশের কর্মী ভাতঘুমে চলে গেছেন নয়তো। বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন তারা। বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির ফলে অবহেলিত, বঞ্চিত। অত্যাচারিত মানুষ যারা এতদিন গুন্ডামির মুখে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে পারেননি, এবার তারা রুখে দাঁড়াবার সাহস খুঁজে পেয়েছেন। এবার ভোটে বিভিন্ন জায়গায় ওই নিপীড়িত জনগণ তৃণমূল কংগ্রেসকে যোগ্য জবাব দিয়েছেন। বাড়তি শক্তি জুগিয়েছে কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর প্রহরা।
নতুন ভোটাররা তৃণমূলের চাইতেও বেশি বিরক্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণে। এটা প্রায় সব জেলাতেই স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণিত নতুন ভোটারদের কাছে মোদীজী অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষিত। তাঁদের চোখে মোদীজী শক্তি, সাহস, উদ্যম এবং উন্নয়নের প্রতীক। ফলত উন্নয়নকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তার চ্যালা (পড়ুন অনুব্রত মণ্ডল)-দের গুড় -জল, বাতাসা জল, নকুলদানা জল আর পাঁচনের বাড়ি খাওয়ানোর হুমকি দেন, তখন নতুন ভোটাররা প্রতিবাদ জানান মিটিঙে, মিছিলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সমস্বরে কণ্ঠ মিলিয়ে, ফেসবুকের দেওয়ালে। দেওয়ালে দিদিকে কার্টুন চরিত্র করে এঁকে, লিখে আর গান বেঁধে। পিসি-ভাইপোর কাণ্ডকারখানা আজ তাদের কাছে আড্ডার অন্যতম বিষয়। পরিস্থিতিটা এতটাই বাঁক নিয়েছে যে আজ বিজেপি পাল্টা মারের হুমকি দিতে পারে অথবা তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অভিযোগের সমন জারি করেন। জনগণ। একদিকে গুন্ডাবাহিনী শিবির পাল্টাচ্ছে। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দাসত্ব মানতে মানতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে পুলিশ কর্মী এবং আমলাদের, কৌশলগতভাবে তারাও আজ বিদ্রোহের পথে। একটা ছোটো ঘটনায় পুলিশ লাঠিচার্জ করছে। গুলি চালাচ্ছে। এর পিছনে কৌশল তো আছেই। তাহলে কী দাঁড়াল? তৃমমূলের সঙ্গে আজ গুন্ডা নেই, পুলিশ নেই। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দলটিই নেই। কারণ বামফ্রন্টের ডান্ডা খেতে খেতে যারা তৃণমূল কংগ্রেসের শিকড়কে মজবুত করে ধরে রেখেছিল, তারা চোখের সামনে দেখছেন ভাইপো অভিষেকের হবু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অভিষেক হচ্ছে। দিদির গুণধর ভাই কার্তিক আর বাবুল রাতারাতি কিনে নিচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট পাড়া। তারা দেখতে পাচ্ছেন তিল তিল করে গড়ে তোলা তিলোত্তমা রাজ্যকে শুধু পাউডারের প্রলেপ আর লিপস্টিক ছুইয়ে উন্নয়নের ধুয়ো তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ দিদি আছেন। দলটিই গায়েব। আর মুখে কুলুপ এঁটে বসে আমলারা নবান্নের ঘরে ঘরে। কারণ তারা জানেন, নিজের প্রয়োজনে দিদিতাঁদের নিয়ে রাজপথে ধরনায় বসতে পারেন কিন্তু তাদের প্রয়োজনে দিদি ধরনায় বসবেন না কোনোদিনই। রাজনীতির হাওয়া কখন শুকিয়ে যায় আর কখন তা কার পক্ষে সাইক্লোন হয়ে ওঠে, আমলাদের চাইতে ভালো করে কে বুঝবেন? অতএব দিদির থেকে প্রশাসন মানসিক স্তরে শত যোজন দূরে। এবারের ভোট তাই দিদির ভোট। তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট নয়।
সুযোগ বুঝে খেলছে বামফ্রন্টও। দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনৈতিক দল সিপিআইএম ও বামশরিকরা একটা সত্য মেনে নিয়েছেন যে রাম ছাড়া বাম নেই। অতএব রামকে জিইয়ে রাখ। সেজন্যই এবার ভোটে বামদলগুলির নীচুতলার বহু ভোট ঢুকেছে বিজেপির বাক্সে অবধারিত ভাবেই। বিশেষ করে সেইসব কেন্দ্রে যেখানে কোনও বামপ্রার্থী নেই। সেই সব কেন্দ্রে রামই তাদের প্রার্থী হয়ে উঠেছে। একই ঘটনা ঘটেছে। কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও। তারাও বুঝেছেন, তৃণমূলকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করার চেয়ে কেন্দ্রে আসবে যে দল তাকেই ভোট দেওয়া ভালো। এই সহজ অঙ্কটা এবার কষেছেন সাধারণ মানুষও। আর ভোটের ফলাফল অবধারিত হতে চলেছে সেই অতি সাধারণ অঙ্কের নিয়মেই। এবার চলুন দেখা যাক, নির্বাচনের ফলাফল কী হতে চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম সাত দফায় ভোট হয়েছে রাজ্যের ৪২টি আসনে। কারণ একটাই মানুষের ভোটাধিকার ও সাংবিধানিক ভাবে রাজ্যের গণতন্ত্রকে ধরে রাখা। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে এই প্রথম পদক্ষেপটিই তৃণমূলের পরাজয়ের প্রথম এবং প্রধান কারণ হয়ে দেখা দেবে। কারণ ভোটাররা বুঝে গেছেন, তৃণমূল গণতন্ত্র মানে না বলেই এবার সাত দফায় ভোট। অতএব ত্যাগ কর তৃণমূল কংগ্রেসকে। এই মনোভাবের প্রভাব পড়েছে বা পড়বে সমস্ত আসনেই।
একেবারে প্রথম পর্বে নির্বাচন হয়েছে দুটি লোকসভা আসনে— কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে। এই দুটি আসনই এবারে পাচ্ছে বিজেপি নিশ্চিতভাবেই। কারণ এই আসনগুলিতে মুসলমান জনসংখ্যা যথেষ্ট কম এবং যেহেতু দুটি জেলাতেই বাংলাদেশের উদ্বাস্তু হিন্দু জনগণের প্রাবল্য, তাই স্বাভাবিকভাবে এই দুই জেলাতেই বিজেপির প্রাধান্য বেশি। ২০১৪ সালের ভোটেও আলিপুরদুয়ারে বিজেপি ২৭.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। তার ওপর এবারে এই দুটি আসনেই কোনও বাম প্রার্থী নেই। অতএব ভোট কাটার সম্ভাবনা কম।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ভোট হয়েছিল ১৮ এপ্রিল। তিনটি আসনে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও রায়গঞ্জে। একেবারে চোখ বুজে বলা যায়, এই তিনটি আসনই এবার দখল করবে বিজেপি। তার কারণ, জলপাইগুড়িতে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও দিনই ভালো ফলাফল করতে পারেনি। বরং ওই কেন্দ্রে সিপিএমের প্রভাব ছিল বেশি। তবে পাশাপাশি ওখানে বামফ্রন্টের অন্তর্দ্বন্দ্বও ছিল। এবারও আছে। ফলে সিপিআইএমের একটা বড়ো অংশের ভোট আসছে বিজেপিতে শুধুমাত্র তৃণমূলকে দূরে রাখতেই। এই বামপন্থীদের একাংশ ভোট দিয়েছে হিন্দুত্বের জয় ঘটাতেও। তার ওপর আছে ২০১৪-র ফলাফল। যেখানে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪৩.৪ শতাংশ ভোট। দার্জিলিং কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই খেলা খেলে থাকুন না কেন, ওখানে হাজির না থেকেও নিঃশব্দে খেলছেন বিমল গুরুং। বিনয় তামাং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হলেও পাহাড়ি জনগণের মধ্যে তাকে নিয়ে অসন্তোষের শেষ নেই। তাছাড়া পাহাড়ি জনগণকে জাতিভিত্তিতে ভাগাভাগি করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পথে হেঁটেছেন, মানুষ তা ভালোভাবে নেননি। না পাহাড়ে, না সমতলে। তাছাড়া এই কেন্দ্রে সিপিআইএমও বিশেষ করে সমতলে শিলিগুড়ি পুরসভায় বামবোর্ডকে বাঁচাতে বিজেপিকেই যে ভোট দিয়েছে, তাতে। সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। রায়গঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। এখানে মুসলমান জনসংখ্যা ৫৬ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে, এই কেন্দ্রে বিজেপির জয় অসম্ভব। কিন্তু রায়গঞ্জে অদ্ভুত ভাবে বরাবরই সংখ্যালঘুদের বেশি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল নয়। এবারেও পেয়েছে। কিন্তু ভোটটা ভাগ হয়েছে চার ভাগে। কংগ্রেস ছাড়াও মুসলমান ভোট পেয়েছে তৃণমূল কিছুটা, কিছুটা সিপিআইএম। এমনকী রায়গঞ্জেই সম্ভব মুসলমান ভোটে ভাগ বসিয়েছে বিজেপিও। কারণ ওই সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বের সংকট।
তৃতীয় পর্যায়ে পাঁচ কেন্দ্রে বালুরঘাট, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদে ভোট হয়েছে।
বালুরঘাটে ২০১৪-য় বিজেপি প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবারে তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ছিল জনগণের মধ্যে। কারণ উন্নয়নের কাজ হয়নি। ক্ষোভ ছিল দলের মধ্যেও। কারণ প্রার্থী কেন্দ্রকে সময় না দিয়ে কলকাতায় নাটক নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতেন।তাছাড়া বালুঘাটে বিজেপি-এবার শক্তি বৃদ্ধি করেছে। ভালোরকম। মালদার দুটি আসনই বরকত গনিখানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বরাবরই কংগ্রেসে নিবেদিত। এবার হঠাৎ করে মালাদা (উত্তর) কেন্দ্রের সাংসদ মৌসম নূর তৃণমূলে যোগ দিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী ভাইঈশা খান চৌধুরীকেই সুবিধা করে দিয়েছেন। তবে মালদা উত্তরে মুসলমানদের একটা ভালো সংখ্যক ভোটার ২০১৪-র মতো এবারও বিজেপিকেই সমর্থন জানিয়েছে। ২০১৪-এই সংখ্যাটা ছিল ১৫.৫ শতাংশ। মালদা দক্ষিণে কংগ্রেস প্রার্থী আবু হোসেন খান চৌধুরীর জয় অবধারিত। কারণ এখানে বাড়তি সুবিধা-বামপ্রার্থী নেই। জঙ্গিপুরে প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জিই যে আবার জিতবেন মূলত মুসলমান ভোটে, তাতে সন্দেহ নেই। এই কেন্দ্রে মুসলমান ভোটার ৬০ শতাংশ। মুর্শিদাবাদেও কংগ্রেস প্রার্থীর জেতার সম্ভবনাই বেশি। এখানে মুসলমান ভোটার রয়েছেন ৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রথম তিনটি দফায় ১১টি আসনের ফলাফল হচ্ছে : বিজেপি-৬, কংগ্রেস-৫। পরিবর্তন হতে পারে শুধুমাত্র মালদা উত্তর কেন্দ্রে। হয়তো খুব কম ভোটের তফাতে তৃণমূল প্রার্থী মৌসম নূর জিতে যেতেও পারেন।
আসছি ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চতুর্থ দফার নির্বাচনে। ভোট হয়েছে বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রাণাঘাট, বর্ধমান পূর্ব বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর ও বীরভূম কেন্দ্রে। বহরমপুরে এবারও জিতবেন ২০১৪-য়। পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোটে জেতা কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। এখানে সিপিএম প্রার্থী দেয়নি। রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শুভেন্দু অধিকারী চ্যালেঞ্জ নিয়ে পড়েছিলেন সেখানে। কিন্তু মুখ কালো করে কলকাতায় ফিরে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে অধীর চৌধুরীর মার্জিন অতটা থাকবে না। কারণ এবার বহরমপুরে বিজেপিও অনেক মজবুত। কৃষ্ণনগরে তৃণমূল প্রার্থীমহুয়া মৈত্র শিক্ষিতা, ভালো বক্তা এবং প্রায় আড়াই কোটি টাকার মালকিন। তুলনায় বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে নতুন মুখ। কিন্তু ভালো ইমেজ। স্পোর্টসম্যান এবং ভদ্র। জবরদস্ত লড়ছেন এটা বলাই যায়। কারণ কৃষ্ণনগর বিজেপির গড়। স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থনও ছিল জোরদার। রাণাঘাট এবারে বিজেপির আসন। প্রধানমন্ত্রী মোদীজীর জনসভায় রাণাঘাটের। ভিড় সমস্ত জনসমাগমের রেকর্ড ভেঙে। দিয়েছে। এবং এই জনসমাগম কিন্তু সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় এবং স্বতস্ফূর্ত। তারওপর এই আসনে ২০১৪-য় বিজেপি ১৫.৩শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার ভোট বাড়বে তবে আসনটি বিজেপির পক্ষে নিশ্চিত বলা যাবে না। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে মূল লড়াই সিপিএম বনাম তৃণমূলের। আর আসানসোলে তো ফের বাবুল সুপ্রিয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ এবারে তার অ্যাডভান্টেজ, তৃণমূলের সবচেয়ে খারাপ প্রার্থীটি ছিলেন তার বিরুদ্ধে। তিনি হলেন মুনমুন সেন। যিনি গ্ল্যামার দিয়ে বাঁকুড়ায় ঠকিয়ে ছিলেন ২০১৪-য় ঠিকই কিন্তু এবার মমতাকে শাস্তি দিতেই প্রার্থী করেছেন আসানসোলে। তার হার ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। বোলপুরে তৃণমূল। বনাম বিজেপির লড়াই জোরদার। ফলাফল অনিশ্চিত। তবে বীরভূম আসনটি এবার তারকাপ্রার্থী শতাব্দী রায়ের হাতছাড়া হচ্ছে। বলেই মনে হচ্ছে। তা বোঝা যাচ্ছে দুটি কারণে—প্রথমত তিনিই একমাত্র প্রার্থী যাঁকে। জনগণ ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। আর ভোটের দিন তার মেন্টর অনুব্রত মণ্ডল ছিলেন নজরবন্দি। ফলে ছাপ্পা ভোটের ফয়দা এবার আর ঘরে তুলতে পারেননি।
পঞ্চম দফায় ভোট হয়েছে বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলি ও আরামবাগে। এর মধ্যে বনগাঁ এবং ব্যারাকপুরে নিশ্চিত জয় পাবেন বিজেপি প্রার্থীরা। কারণ বনগাঁয় মতুয়া এবং তপশিলি ভোট এবারে বিজেপিকেই সমর্থন জানিয়েছে। এরা তা পরোক্ষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিতি এবং উন্মাদনার মাধ্যমে। ব্যারাকপুর বরাবরই বাহুবলের আসন। এবার বিজেপি প্রার্থী সদ্য তৃণমূল ত্যাগী অর্জুন সিংহ। তার প্রতিপক্ষ সেই তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদী যাঁকে জেতাতেন বাহুবলী অর্জুন সিংহ। অতএব । ফলাফল কী হবে তা স্পষ্ট। তার ওপর এই কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী দেয়নি। এটা উপরি সুবিধা। শ্রীরামপুরে বিজেপি প্রার্থী দেবজিৎ সরকার তৃমমূল প্রার্থী কল্যাণ ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ভালো লাড়াই দিয়েছেন। হুগলিতে বিজেপি প্রার্থী লকেট চ্যাটার্জিও লড়েছেন জোরদার। তবে হাওড়ায় বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্তর লড়াইটা দেখার মতো। প্রকৃতপক্ষে ওই কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের দুটি ছাড়া বাকি পাঁচটিতেই তিনি উল্লেখযোগ্য ফলাফল করবেন। তার সুবিধা হলো— তিনি নতুন মুখ এবং সৎ সাংবাদিক হিসেবে সুবিদিত। উল্টোদিকে তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এবং নারদাকাণ্ডে ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন যে হাত পেতে ঘুষ নিচ্ছেন। সুতরাং এখানে লড়াই সৎ এবং অসতের। পাল্লা ভারি নিঃসন্দেহে বিজেপির দিকেই। আরামবাগে সিপিআইএম জেতার সম্ভাবনা বেশি। উলুবেড়িয়ায় সম্ভবত জয়ী হবেন তৃণমূল প্রার্থীই। তবে এই কেন্দ্রে বিজেপির ভোট বাড়বে। ২০১৪-য় ওই আসনে বিজেপি পেয়েছিল ১১.৬ শতাংশ ভোট।
ষষ্ঠ দফায় যেসব কেন্দ্রে ভোট সেগুলি হলো— তমলুক, কাথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর, তমলুক, কাথি ও ঘাটাল অপরিবর্তিত থাকার সম্ভবনাই বেশি। তবে ঘাটালে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেবের ভোট এবারে যথেষ্ট কমবে। মেদিনীপুরে টক্কর বিজেপির রাজ্য। সভাপতি দিলীপ ঘোষ বনাম তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ ডাঃ মানস ভুইয়ার। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি এবং শুধুমাত্র রাজ্যসভার সাংসদ হবার লোভে দলত্যাগী ডাঃ ভুইয়ার লড়াইটা এবার বেশ কঠিন। প্রচারে এবং প্রভাবে অনেকটাই এগিয়ে দিলীপবাবু তার প্রচারের ধারাবাহিকতায় এবং সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে। ঝাড় গ্রাম, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুর এবং বাঁকুড়ায় জনজাতি ও তপশিলি ভোট এবার সবটাই পড়বে বিজেপির সমর্থনে। কারণ এই সবকটি অঞ্চলেই বিজেপির মজবুতসংগঠন। বাঁকুড়ায় হালে পানি পাচ্ছেন না রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। অথচ আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রে প্রচার করতে না পেয়েও বিষ্ণুপুরে বিজেপির প্রার্থী সৌমিত্র খাঁর জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। শেষ দফায় ভোট হয়েছে দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, যাদবপুর, কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ। জয়নগর, বসিরহাট ও মথুরাপুরে সিপিআইএম প্রার্থী দেয়নি। এর মধ্যে বসিরহাটে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী নুসরত জাহানকে জেতানোর জন্য দল ব্যাপক চেষ্টা করলেও দলীয় কোন্দল তাকে প্রতিদিন লড়াইয়ের ময়দান থেকে একটু একটু করে পিছিয়ে দিয়েছে। ঠিক একই অবস্থা যাদপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী চিত্র তারকা মিমি চক্রবর্তীর। তিনি তার প্রচারের ঘরানায় নিজেরই সর্বনাশ করেছেন। এখানে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। বিজেপির প্রার্থী ড. অনুপম হাজরা।মূল লড়াই সিপিআইএম প্রার্থী প্রখ্যাত আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বনাম প্রখ্যাত অধ্যাপকের। কলকাতা দক্ষিণে লড়াই বিজেপি প্রার্থী নেতাজীর বংশধর চন্দ্রকুমার বসুর সঙ্গে কংগ্রেসের মালা রায়ের। আছেন সিপিআইএম প্রার্থী অধ্যাপিকা নন্দিনী ভট্টাচার্যও। ত্রিমুখী লড়াইযে টক্কর সমানে সমানে। ২০১৪-য় এখানে বিজেপি ২৫.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। দমদমে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের লড়াইটা একটু শক্ত। কারণ প্রতিপক্ষ অভিজ্ঞ এবং নামজাদা সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায়। তার ওপর রয়েছে সিপিআইএমের ভালো ভাবমূর্তির । প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্য। শমীক ভট্টাচার্য ভালো বক্তা, শিক্ষিত এবং সংসদীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞ। তাঁর প্লাস পয়েন্ট হলো—তার সৎ ভাবমূর্তি। তুলনায় সৌগত রায় নারদা ঘুষকাণ্ডে কলঙ্কিত। বারাসাতে সিপিএম প্রার্থী দেয়নি, লড়াই ত্রিমুখী। বিজেপির পালে হাওয়া। কলকাতা উত্তরে প্রার্থী বিজেপির অন্যতম নেতা রাহুল সিংহ। প্রতিপক্ষ চিট ফান্ড কাণ্ডে জেলখাটা অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪-য় এখানে বিজেপি ২৬.১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার এখানে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে অনেক। সুতরাং লড়াই জোরদার। তবে নজর কাড়ছে ডায়মন্ডহারবার। যেখানে সিপিআইএম প্রার্থী ডাঃ ফুয়াদ হালিমকে লড়তে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো হাজারো দুর্নীতির অভিযোগের তিরে বিদ্ধ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। প্রতিদিনই লড়াইয়ের চাপ বেড়েছে অভিষেক ব্যানার্জি ওপর, কারণ দুর্নীতির অভিযোগও প্রমাণ-সহ ঢেলে দিচ্ছে সিপিআইএম নিত্যনিয়মিত। নিঃসন্দেহে ফলাফলও নজরকাড়া হবে ওই কেন্দ্রে। যেমন হবে বারাসাত কেন্দ্রেও যেভাবে তৃণমূলি বাহুবলী আরাবুল আর সব্যসাচী দত্ত এবার হাতগুটিয়ে বসে গেছেন।
সামগ্রিকভাবে ভোটের ফলাফল নিয়ে আগেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়। কিন্তু ভোটের ট্রেন্ড এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কথা বলা বোধহয় ভুল হবে না, ন্যূনতম ১০ থেকে ১২টি আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত। সংখ্যাটি ১৫/১৬-ও ছুঁতে পারে। তবে শতাংশের হিসেবে এবার ভোটে ছক্কা মারবে বিজেপি তা নিঃসন্দেহ। আর এবারের ফলাফল প্রমাণ করবে— পশ্চিমবঙ্গে দিদির ঔদ্ধত্যের যবনিকার সময় এগিয়ে এসেছে। মোদীজীর সুযোগ্য নেতৃত্বে যে নতুন ভারত গড়ে উঠবে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ হবেন সেই উদ্যোগের নয়া শরিক। পশ্চিমবঙ্গবাসীও সগর্বে বলবেন— আমরা উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমরা উদ্যোগে বিশ্বাসী। ‘আমরা হিন্দুত্বে বিশ্বাসী। আমরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। ভারতমাতা কী জয়।’
সনাতন রায়
2019-05-17