ভারতবাসীর হৃদয়কমলে তিনি ‘রাষ্ট্রঋষি’। পারিবারিক নাম দত্তাত্রেয় বাপুরাও ঠেংড়ী। তাঁর জন্ম ১৯২০ সালের কার্ত্তিক অমাবস্যার দিন, অর্থাৎ দীপাবলির দিন। জন্মস্থান নাগপুরের নিকট ওয়ার্ধার আর্বী গ্রামে। পিতা বাবুরাও দাজীবা ঠেংড়ী একজন নামকরা আইনজীবী ছিলেন। মা জানকীবাই অত্যন্ত ধার্মিক প্রবৃত্তির মহিলা ছিলেন। বাস্তবে দু’জনেই দত্তভগবানকে ইষ্ট দেবতার হিসেবে মানতেন, দু’জনে মনে করতেন যে ইষ্ট দেবতার কৃপাতে তাদের এই পুত্র-রত্নের প্রাপ্তি হয়েছে।
যখন উনার ১৫ বছর বয়স, ১৯৩৫ সাল, তখন উনি সেখানে গরীব বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য ও চরিত্র নির্মাণের জন্য বানর সেনা নামে এক সংস্থা বানিয়েছিলেন। যিনি পরে দেশ ও বিশ্বকে জাগানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শাখার সম্পর্কে আসেন। পরবর্তী সময়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য নাগপুর কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনা সাথে সাথে সঙ্ঘের শাখায় নিয়মিতভাবে যেতে শুরু করেন, দায়িত্ব পালন করেন এবং সঙ্ঘের কার্যালয়ে থাকতে শুরু করেন। সৌভাগ্যবশত এই কার্য্যালয়ে শ্রী গুরুজীর যাতায়াত ছিল, গুরুজীর সঙ্গে সম্পর্কে আসার কারণে এবং এই সময় যা পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল, তা দেখে তিনি সঙ্ঘের প্রচারক হয়ে বেরোন। ওনাকে সঙ্ঘের কাজের বিস্তারের জন্য কেরল প্রদেশে পাঠানো হয়, কেরল সমন্ধে স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং বলেছিলেন (ছোঁয়াছুত ও জাতিভেদের কারণে) এটি ভারতের পাগল-খানা। সেই সময় এখানে ইসলাম, খ্রিস্টান, সবার উপর কমিউনিস্টদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি হচ্ছিল, এই কঠিন পরিস্থিতিতে এক মারাঠি নব যুবক সঙ্ঘের বৃক্ষরোপণ করতে গেলেন। প্রথমে পালঘাটে সঙ্ঘের শাখা শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে সংগঠনকে দাঁড় করানো চেষ্টা করেন। আজকের দিনে সঙ্ঘ এখানে বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। এখন কেরালায় ৫ হাজারের অধিক শাখা চলছে, বর্তমানে এখানে দেশ ভক্তি, হিন্দুত্ব, ও রাষ্ট্রবাদী বিচার ধারার প্রভাব দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কেরালায় অবস্থানের দুই বছর পরে বাংলাতে সঙ্ঘের কাজে পাঠানো হয়। এই সময় বাংলা কমিউনিস্টদের নতুন গড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। এই কারণে এখানে সঙ্ঘের কাজ শুরু করার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। যাঁরা জীবনে বড় কাজ করেন তাদের এই ভাবে কঠিন পরিস্থিতি মধ্যে কাজ করতে হয়। প্রায় আড়াই বছর সঙ্ঘের কাজের বিস্তারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন তিনি। ওনাকে কেরলের পর বাংলায় পাঠানোর মুখ্য কারণ ছিল, উনি ইংরেজিভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারদর্শী ছিলেন। কঠিন পরিশ্রমের কারণে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন, যার কারণে ওনাকে নাগপুরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়, ১৯৪৮ সালে গান্ধীজি হত্যার মতো ঘটনা ঘটে। সঙ্ঘকার্যের উপর প্রতিবন্ধকতা নেমে আসে। ঠেংড়ীজী সহ অনেক কার্যকর্তা আত্মগোপন করেন। এই পরিস্থিতিতে কি করা যায়, সংগঠন বসে সিদ্ধান্ত নিলেন যে কাজের গতিবিধি বিদ্যার্থীদের মধ্যে শুরু করার দরকার। সেই কারণে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের প্রতিষ্ঠা হয়। স্বাভাবিক কারণে দত্তপন্থ ঠেংড়ীজী প্রতিষ্ঠাতা-মন্ডলীর মধ্যে ছিলেন। যখন জনসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়, জনসংঘ মানে রাজনৈতিক দল তৈরী হয়, শুরুতে এর সাংগঠনিক স্ট্রাকচার অত মজবুত ছিল না, কোনো আলাদা কার্যকর্তাও সেভাবে ছিলেন না। দত্তপন্থজীকে ১৯৫৩ সালে মধ্যপ্রদেশের সংগঠন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর দত্তপন্থজীকে মজদুর আন্দোলন ও সংগঠন শুরু করার নির্দেশ শ্রী গুরুজী ও সঙ্ঘের আধিকারিকদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। শ্রী গুরুজীর নির্দেশে মধ্যপ্রদেশে ইনটক (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন, কংগ্রেস)-এর সঙ্গে যুক্ত হন। এই সময় মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দ্বারকা প্রসাদ মিশ্র। ওনার দত্তপন্থ ঠেংড়ী মত ব্যক্তিত্বকে প্রয়োজন ছিল, দত্তপন্থ ঠেংড়ী ওনার সহযোগিতায় মধ্যপ্রদেশের ইনটকের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান, প্রায় দুই -আড়াই বছর কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনে কাজ করেন, এই সংগঠনের বিচারধারা, তার কার্য পদ্ধতি ভালো ভাবে বোঝার পর সংগঠনের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে এক নিজস্ব সংগঠন গঠন করা দরকার। যে কাজ কচ অসুরদের মধ্যে থেকে করে ছিলেন, সেই কাজ ঠেংড়ীজী কমিউনিস্ট আর ইনটক কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে থেকে করে ছিলেন। এখানকার শ্রমিক সংগঠনের পদ্ধতি, সমস্ত রকমের মারপ্যাঁচ শিখে ফিরে এসে ২৩ শে জুলাই ১৯৫৫ সালে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে সারা দেশ থেকে কিছু স্বয়ংসেবক, মিত্রদের নিয়ে উনি ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের স্থাপনা করেন।
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন, সেই সময় রাষ্ট্রীয়-যোদ্ধা ফের এক বার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যে উপস্থিত হয়ে ছিলেন। জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে যে লোক সংঘর্ষ সমিতি গঠন হয়ে ছিল, ১৯৭৫ সাল থেকে মার্চ ১৯৭৭ পর্যন্ত লাগাতার লোক সংঘর্ষ সমিতির সম্পাদক পদে ছিলেন। সার দেশে গোপনে প্রবাস করে উৎসাহিত কার্যকর্তাদের উৎসাহিত করেছিলেন, সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়লাভের বিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিলেন। সব কাজ ঠেংড়ীজী খুব নিপুণভাবে করেছিলেন। সারা বিশ্বে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা বিষয়ে অধ্যায়ন করে উনি বলেছিলেন যে এই সরকার ও জরুরী অবস্থা যে কোনো কারনেই হোক মার্চ ১৯৭৭ আগেই শেষ হয়ে যাবে; বাস্তবে ঠিক সেটাই হয়ে ছিল। মানে এক প্রকার উনি ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টাই ছিলেন। সমাজের যে সকল শ্রেণীর মানুষ বাস্তবে শোষিত, নিপীড়িত, দলিত, উপেক্ষিত ছিল ঠেংড়ীজী ছিলেন তাদের ভাগ্য বিধাতা, তাদের ভাগ্য নির্মাণ হেতু উনি ২৩ জুলাই ১৯৫৫ সালে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ, ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ (৪মার্চ ১৯৭৯), স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ (২২ নভেম্বর ১৯৯১) এবং সামাজিক সমরসতা মঞ্চ (১৪এপ্রিল ১৯৮৩) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দ্বারা গঠিত অনেক সংগঠন যেমন ভারতীয় জনসঙ্ঘ, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ, সংস্কার ভারতী, সর্বধর্ম সমাদর মঞ্চ, স্বদেশী সাইন্স মুভমেন্ট — এই সকল সংগঠনের প্রতিষ্ঠা লগ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইনটক সংগঠনের মধ্য দিয়েই প্রথম জীবনে শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন, মহাবিদ্যালয়ে পড়াকালীন সাম্যবাদী এবং সমাজবাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন; সেই সময় তিনি শ্রমিক ক্ষেত্রে গভীর অধ্যায়ন ও চিন্তন করেছিলেন, এবং আজকে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এই সংগঠনকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে শ্রম-মন্ত্রালয়ের দ্বারা ভারতবর্ষের সবথেকে বড় শ্রমিক সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওযা হয়, ওই সময় ভারতীয় মজদুর সংঘের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১.২ লক্ষ, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ছিল ২৭.১লক্ষ, সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিযন (সিটু) সদস্য সংখ্যা ছিল ১৮ লক্ষ, হিন্দ মজদুর সভার সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪.৮ লক্ষ, এ আই টি ইউ সি-র সদস্য সংখ্যা ছিল ৯.২ লক্ষ। আজ ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের সদস্য সংখ্যা ৬০ লক্ষের উপর, যা ভারতে যত শ্রমিক সংগঠন কাজ করছে তাদের সংখ্যা থেকে বেশি, ঠেংড়ীজী বামপন্থী না হয়েও ভারতের সবথেকে বড় শ্রমিক সংগঠন খাড়া করিয়েছিলেন। উনি প্রকৃতপক্ষে বামপন্থীদের বিরোধী ছিলেন, বামপন্থীদের গড়কে ধ্বংস করে তাকে দখল করেছিলেন, ঠেংড়ীজী বামপন্থীদের গড়ে ঢুকে বামপন্থীদেরকেই মেরেছিলেন। উনি বামপন্থীদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, ওই যুদ্ধ ছিল বৈচারিক যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে ঠেংড়ীজী বিজয়ী হয়েছিলেন, মজদুর সঙ্ঘকে বৈচারিক অধিষ্ঠান দিয়েছিলেন। উনি কখনো বন্ধের পক্ষে ছিলেন না, যা সব শ্রমিক সংগঠনের মুখ্য হাতিয়ার ছিল, উনি না কখনো শহরের ব্যবস্থাকে খারাপ করার রুচি দেখিয়েছেন, না কখনো নিজের সংগঠন কে হিংসার রাস্তা দেখিয়েছেন, এবং না কখনো কোন রাজনৈতিক দলের লেজুড় বানিয়েছেন। তিনি শুদ্ধ ট্রেড ইউনিয়নের ধারণার সঙ্গে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, শ্রমিক সমাজের সমগ্রতার দৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ‘চাহে যো মজবুরি হো- হামারি মাঙ্গ পুরি হো’ — ওই স্লোগানকে তিনি পাল্টে দিয়ে বলেছিলেন ‘দেশকে হিতমে করেঙ্গে কাম, কামকে লেঙ্গে পুরে দাম’। তিনি শ্রমিকদের দাবি পূরণের স্লোগানকে বদলে দিয়েছিলেন। তিনি পুঁজিবাদী উদ্যোগীকরণ এবং সাম্যবাদী রাষ্ট্রীয়করণের বিরোধিতা করে নতুন স্লোগান দিয়েছিলেন ‘দেশ কা উদ্যোগীকরণ, উদ্যোগ কা শ্রমিকীকরণ, শ্রমিকো কা রাষ্ট্রীয়করণ; উদ্যোগ ও রাষ্ট্রের সংযোগকারী হল শ্রম।
শ্রমিক সংগঠনের নেতা হয়ে ভুলেও কখনো শহরের চাকচিক্যের মধ্যে ডুবে থাকেন নি। উনি কৃষি ক্ষেত্রেও ভারতের সব থেকে বড় সংগঠন ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উনি কখনো শহর বনাম গ্রাম, কৃষি বনাম শিল্পের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করেন নি। মজদুর সঙ্ঘের সাথে বিশ্বকর্মা ও কিষান সঙ্ঘের সাথে বলরামকে শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের নতুন প্রতীক হিসাবে যুক্ত করেছিলেন। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীক গুলিকে যুগানুকূল করা ঠেংড়ীজীর ব্যক্তিত্বের একটি সৃজনশীল বৈশিষ্ট্য ছিল। ওই কারণে ওনাকে রাষ্ট্রঋষি ও যুগঋষি বলা হয়, উনার কাছে তো রাষ্ট্রবাদই সবথেকে বড় অস্ত্র ছিল, এর মাধ্যমেই বিভাজনকারী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। উনি কখনো ধনী- গরিব, জাতিভেদ- বর্গ ভেদে বিশ্বাস রাখেন নি, উনি সর্বদা রাষ্ট্রীয়তা ও রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। উনি সেখান পর্যন্ত রাষ্ট্রবাদকে নিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে বর্গ ভেদের একাধিক ও বৈচারিক উগ্রবাদের রমরমা ছিলো। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যখন বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ ভারতবর্ষের সামনে দাঁড়িয়েছিল, অসহায় লোকেরা যখন চোখ বন্ধ করে এর বিরোধিতা বা সমর্থন করেছিল, তখন ঠেংড়ীজী লোকেদেরকে স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়েছিলেন, এবং স্বদেশী আন্দোলনের স্বরূপ পেশ করেছিলেন, উনি স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা পূর্ণত ভারতীয় বৈকল্পিক আর্থিক মডেল হিসেবে প্রস্তুত করেছিল, যা না কেবল বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে ভারতীয়তার প্রতি অনুকূল ছিল, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চকে লাগামহীন বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমুখ সংগঠন রূপে দাঁড় করিয়েছিলেন। আজ ভারত বৈশ্বিক-শক্তি হিসেবে সম্পূর্ণরূপে সফল হয়েছে। জীবনের শেষ দশক তিনি ওই কাজে ব্যয় করেছিলেন। তিনি চলে গেলেন কিন্তু স্বদেশী আন্দোলনের উত্তরাধিকার আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলেন। ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ, ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই সব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ঠেংড়ীজী কিন্তু নিজের প্রচার এর প্রতি কখনো লালায়িত ছিলেন না। ঠেংড়ীজী কে ছিলেন, বেশির ভাগ লোক তা জানেন না। তাঁর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আজ অনেক বড় হয়েছে, সম্ভবত বিশ্বের অনেক লোকে তা জানেন। ঠেংড়ীজীর জীবন অবসান ৮৪ বছর বয়সে হয়। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত উনি জীবনীশক্তিতে ভরপুর ছিলেন, অন্তিম দিনেও এই রকম প্রাচুর্যেই পরিপূর্ণ ছিলেন। উনি ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে একে ভারতের সর্বোচ্চ সংগঠন বানানো পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন কখনো ক্লান্ত হননি। পরিশ্রান্ত হয়ে থাকেননি। উনার বৌদ্ধিক ক্ষমতা ছিলেন অসাধারণ। ইতিহাস, অর্থশাস্ত্রের উপর গভীর অধ্যায়ন ছিল, সমাজবিজ্ঞান রাজনীতিতেও কোন পণ্ডিতের থেকে কম ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন প্রচারবিমুখ, উনি কখনো নিজেকে সার্বজনীন ভাবে আগে দেখানোর চেষ্টা করেননি, তিনি মিডিয়াতে ছবি তোলা বা সাক্ষাৎকার দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না। তিনি কখনো ক্যামেরার সামনে আসতে চাইতেন না, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর চেয়ে তিনি সরাসরি কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহী ছিলেন, যদিও তিনি রাজনীতিতেও ছিলেন, তিনি দু’বার রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন, কিন্তু নিজের সম্পর্কে নিজের ধারণা কখনো পরিবর্তন করেননি। রাজ্যসভার সাংসদ থাকার সময় কমিউনিস্ট অন্য বিচারধারার শীর্ষ নেতাদের সাথে উনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যার কারণে মার্কসবাদীদের সাথে হিংসার সময় গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন কর্মযোগী, তিনি এত কাজ করে গেছেন যে, এই কাজ করতে গেলে দশবার জন্ম নিতে হবে। তিনি কখনও তার বৌদ্ধিক ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করেননি। উনার বেশিরভাগ সময় চিন্তা করা, বিচার করা লেখাপড়া মধ্যে কাটাতেন। মূলত বৌদ্ধিক ও বিচার ক্ষমতায় ভরপুর না জানি উনি কতগুলি বই লিখেছেন। তাঁর লেখা প্রায় ৫০টি বইতে মূল্যবান চিন্তা ভাবনা পরিচয় পাওয়া যায়। উনি ২৭ টি পুস্তক হিন্দিতে, ১২ টি বই ইংরেজিতে, ১০ টি পুস্তক মারাঠি ভাষায় লেখেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ৩৪টির অধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সেই দেশগুলির জীবন সম্পর্কে গভীর পরিদর্শন করেছেন, বহু আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে ভারতের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন, রাষ্ট্রীয় আন্তরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে না জানি কত গূঢ় বিষয়ের উপর গবেষণাপত্র পেশ করেছেন। হিন্দি ইংরেজি মারাঠি বাদে আরো পাঁচটি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। উনি প্রায় শতাধিক সংগঠন বানাতে উৎসাহিত করা, বিচার দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও সাধারণ কার্যকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশতেন। দিনে ২৪ ঘণ্টার বদলে ২৬ ঘন্টা, আর ১২ মাসের বদলে ১৩ মাস ভেবে কাজ করতেন। উনার মানসিক বৌদ্ধিক ক্ষমতা ছিল অসাধারণ, একজন মানবের ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তি ছাড়া এমন কোন শক্তি পাওয়া যায় না, যা উনাকে এত উৎসাহিত করতো। যে অসম্ভব কার্যকে সম্ভব করার জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করতো, নিশ্চিত রূপে তা ছিল রাষ্ট্রীয়স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিচারধারা। সঙ্ঘকে অনেক লোক বুঝতে ভুল করেছে, কিছু লোক এর বিরুদ্ধে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এই সংগঠন এমন একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যেখান থেকে দেশের অগণিত রাষ্ট্রভক্ত, বৌদ্ধিক দক্ষ ব্যক্তি তৈরি হয়েছে; ওই প্রক্রিয়া আজও চালু আছে। ঠেংড়ীজী ২১ বছর বয়সে সঙ্ঘের প্রচারক হন; জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত সঙ্ঘের প্রচারক ছিলেন। কোন পদ বা পদবী উনাকে আকর্ষণ করতে পারেননি। উনি যদি চাইতেন সার্বজনীন জীবনে অনেক বড় বড় পদের অধিকারী হতে পারতেন। কিন্তু ঠেংড়ীজীর মত ব্যক্তির কাছে পদের কোনো গুরুত্ব ছিল না, ঠেংড়ীজী একজন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ও ঋষি ছিলেন। তিনি কয়েক দশক আগে কল্পনা করেছিলেন যে একদিন না একদিন মানবীয় প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা বামপন্থার সমাপ্তি হয়ে যাবে, তাই হয়েছে। বিশ্বায়নের প্রভাব ঠেংড়ীজীকে প্রভাবিত করতে পারেনি, উনি চার দশক আগেই এই দর্শন দিয়েছিলেন যে, দেশগুলির মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিশ্বায়নের বিরুদ্ধ-পরিবেশ তৈরি করবে। কেবলমাত্র ভারতে নয় বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। জাতীয় স্বার্থের কারণে সর্বত্র স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়েছে। সব রাষ্ট্র তার নিজের নিজের স্বার্থে লড়াই করছে ।
১৯৯১ সালে ভারত বিশ্বায়নের নামে নব উদারবাদী আর্থিক নীতি গ্রহণ করে। ভারতবর্ষের জনসাধারণের সুখ শান্তি বৃদ্ধি পাবে এই কথা ভেবে, ওই নীতিগুলি গ্রহণ করা হয়। দেশে শান্তি বজায় থাকবে এবং সমৃদ্ধি আসবে, ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে এই নীতিগুলোকে রূপায়ন করা হয়। আজ ২৮ বছর পর যখন আমরা ওই নীতিগুলি সমীক্ষা করি, দেখতে পাই যে দেশের জিডিপি তথা নির্মাণের চমক তো বেড়েছে কিন্তু জনসাধারণের সুখ-শান্তি আর সংস্কার সেই তুলনায় কমেছে। দৈনন্দিন জীবন শৈলীর কারণে ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, মানসিক চাপ ইত্যাদি প্রতিটি ঘরে রোজনামচায় পরিণত হয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদ, নেশা, অসুখ, ধনী-গরীব দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন শ্রেণি মধ্যে সংঘর্ষ, বাণিজ্যের অবনতি, বেকারত্ব এবং আত্মহত্যা প্রভৃতি বিষয়ে ভারতের শতকরা হার বেড়েছে। গত এক বছরে ফসলের উপর ৫২০০ কোটি কিলোগ্রাম কেবল রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রতি ব্যক্তির ভাগে প্রতিমাসে 3.5 কিলোগ্রাম রাসায়নিক বিষ এসেছে। প্রতিবছর তা অনবরত বাড়ে চলেছে। পরিবেশদূষণ এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে নিকট ভবিষ্যতে অনেক উপকূলবর্তী ল শহরপ্লাবিত হওয়ার সতর্কবাণী পরিবেশবিদ তথা বৈজ্ঞানিকরা শোনাচ্ছেন। এমনকি যেখানে রাষ্ট্রের আধার স্বরূপ স্থিত পরিবার, তাও ভেঙ্গে পড়েছে। অন্যদিকে যেখানে পঞ্চমহাভূত আধার স্তম্ভের সৃষ্টিতে রয়েছে বায়ু -জল-উৎপাদক মাটি-বন ইত্যাদি, তা প্রতিনিয়ত ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে। অত্যাধিক উপভোগের প্রেরণা প্রদানকারী, প্রতিবেদন বা ভাষণে উৎসাহিত হয়ে ছোট ছোট জিনিসের জন্য ঋণ নেওয়ার নির্ভরতা তথা প্রাকৃতিকে অমানবিক শোষণের উপর আধারিত বিকাশের বর্তমান মডেল কতটা টিকবে বা দীর্ঘায়ু হবে? ওই নতুন উদারনৈতিক অর্থনীতির উপর আধারিত বা গড়ে ওঠা বিকাশ মডেল কি সমস্যার সমাধান সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করেছে? সুখ সম্পন্নতার ক্ষমতা কি ওই বিকাশ মডেলের রয়েছে? বর্তমানে এই বিষয়গুলি কে নিয়ে দেশ তথা সমাজে এক অস্বাভাবিক চঞ্চলতার সৃষ্টি হয়েছে । দেশ তথা সমাজ এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছে, এই বিষয়ে ঠেংড়ীজী ১৯৮৪ সালেই সাবধান করছিলেন।
ঠেংড়ীজী বাবাসাহেব আম্বেদকর এবং তার বিচার ধারাকে ভালো ভাবে জানতেন। আম্বেদকর সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন যে, অনেকে আম্বেদকর সম্পর্কে যা লিখেছেন তার সঙ্গে আমি একমত নই, যদিও যথেষ্ট প্রমাণ, দলিল দস্তাবেজ ওপর ভিত্তি করে লেখা কিন্তু ঐসকল দলিল-দস্তাবেজ বিভিন্ন রেকর্ড এর উপর ভিত্তি করে বাবাসাহেব আম্বেদকর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়না, বাবাসাহেব যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে লড়াই করেছেন যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল এবং যে চ্যালেঞ্জ ছিল দলিল-দস্তাবেজ প্রমাণের দ্বারা তা পড়া যায় না, বেশিরভাগ দলিল প্রমাণপত্র গুলি মিথ্যা তথ্য বা অতিরিক্ত বাড়িয়ে লেখা। কিছু লুকিয়ে রেখে উপস্থাপন করা হয় যেগুলি, তা আর সম্পূর্ণ সত্য থাকে না। বাবা সাহেবের চ্যালেঞ্জময় জীবন কে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা অসম্ভব। ভান্ডারা থেকে শ্রদ্ধেয় বাবাসাহেব আম্বেদকর যখন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি তার নির্বাচনী এজেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার নিয়েছিলেন। বাবা সাহেবের শেষ জীবনে চার বছর ঠেংড়ীজী তার নিকট ছিলেন, তাই বাবাসাহেব আম্বেদকরের জীবনকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল। উনি এক জায়গায় বলেছিলেন যে, বাবাসাহেব চেয়েছিলেন হিন্দু সাধু সন্ত ও ধার্মিক প্রধানরা সর্বজনীনভাবে ঘোষণা করুক যে, অস্পৃশ্যতার হিন্দু ধর্মগ্রন্থে কোন স্থান নেই। সঙ্ঘ এই দিক থেকে অনেক চেষ্টা করেছে। ১৯৫৪সালে যখন বাবাসাহেব খুব অসুস্থ হতে শুরু করেন, তখন বাবা সাহেব বলেছিলেন যে সময় আমার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, অস্পৃশ্যতা অপসারণের জন্য সঙ্ঘের ওপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে, তবে প্রচেষ্টা খুব ধীর, আমি বেশি সময় অপেক্ষা করতে পারব না, আমার জীবন থাকতে থাকতে এইসমস্যার সমাধান দেখে যেতে চাই। ঠেংড়ীজী বাবাসাহেব আম্বেদকরের বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা নেওয়ার সম্পর্কে বলেছিলেন যে, আমি যদি এই সম্প্রদায়ের কোন উপায় না দেখিয়ে যাই তবে খ্রিস্টান চার্চ, বামপন্থা এদের খেয়ে ফেলবে। বাবাসাহেব সঙ্ঘের মাধ্যমে যা ১৯৫৪ সালে করতে চেয়েছিলেন ওই কাজ সঙ্ঘ ১৯৬৬ তে করতে পেরেছিল উরুপিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দ্বারা হিন্দু সম্মেলনে, ওই সম্মেলনে হিন্দুধর্ম প্রধানেরা অস্পৃশ্যতা বিলোপের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই কারণে অনেকে ঠেংড়ীজীকে বাবাসাহেব আম্বেদকরের সাথে কাটানো দিনগুলির কথা স্মরণ করে একটি পুস্তক লিখতে অনুরোধ করেছিলেন। স্বর্গে যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি ওই পুস্তকটি লেখা সম্পন্ন করেছিলেন। বাবাসাহেবের উপর লেখা তার পুস্তকটি প্রকাশিত হয়েছিল। বলা যায়, ঠেংড়ীজী এই পৃথিবী থেকে কিছু নেন নি; তার কোন বাড়ি গাড়ি সেল ফোন ছিল না; উনি দিল্লিতে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের ব্যবস্থায় একটি ছোট রুমের মধ্যে থাকতেন; প্রয়োজন খুবই সীমিত ছিল। উনার কিছু ধুতি-পাঞ্জাবি রাখার জন্য সুটকেসের প্রয়োজন ছিল, তিনি বেশিরভাগ সময়ে বাসে ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচে প্রবাস করতেন। যখন ঠেংড়ীজীকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তখন ঠেংড়ীজী অতি বিনম্রতা পূর্বক বলেন যে, যতক্ষণ পযন্ত ডাক্তার হেডগেওয়ার ও গুরুজীকে ভারতরত্ন না দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ আমার পক্ষে পদ্মশ্রী গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তিনি কখনো বিয়ের কথা ভাবেননি, কারণ তার সমস্ত সময় অন্যের ভালোর জন্য দিয়েছিলেন। তিনি দীনদয়ালজীর নিরূপিত একাত্ম মানব দর্শনের প্রথম ব্যাখ্যা করেছিলেন। মানববাদ এক অধ্যায় — এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ঠেংড়ীজীর প্রথম বই। পরে গুরুজী তার বক্তৃতায় পরিপূর্ণ মানবের ধারণাটি ব্যাখ্যা করেন। একাত্ম মানব দর্শনের ব্যাখ্যার মহাপুরুষ-ত্রয়ীর শেষ মহাপুরুষ ছিলেন দত্তপন্থ ঠেংড়ীজী। প্রথমে পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় ১৯৬৮ তে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, পরে গুরুজী ১৯৭৩ তে মহাপ্রস্থান করলেন, পরে হিন্দুত্বের সর্বসমাবেশী চিন্তক সঙ্ঘের গগনাচলে ছয় দশক ধরে যে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি আলোকিত হয়েছিল ১৪ ই অক্টোবর ২০০৪ সালে তা অদৃশ্য হয়ে গেল। যৌবনে রাষ্ট্র দেবতার চরণে দেওয়া সুগন্ধযুক্ত পুষ্প নির্মাল্য হয়ে গেল।
সংবাদপত্রগুলি অনেক অংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্র তারকা দের বস্ত্রহীন ছবি ছাপানো টনটন কাগজের সংবাদপত্রগুলি ঠেংড়ীজীর জীবন ও তাহার মহান কর্মের সম্পর্কে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি, এতে কিছু আসে যায় না। আমরা সবাই জানি যে কোপারনিকাস ইউরোপের প্রথম বিদ্বান বিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি খ্রিষ্টান জগতের প্রচলিত ধারণা পৃথিবীর স্থির, সূর্য এর চারিদিকে ঘোরে – তাকে ভুল প্রমাণিত করেছেন। উনি বলেছিলেন যে, সূর্য স্থির,পৃথিবী এর চারিদিকে ঘোরে। পোল্যান্ডে তোরণ নগরে যেখানে কোপারনিকাস থাকতেন, এই খানে এক চৌ-রাস্তার উপর উনার এক বড় মূর্তি লাগানো আছে, যার নীচে লেখা আছে–হেয়ার ইজ এ ম্যান হু স্টিল দ্যা সন এন্ড মুভ দ্যা আর্থ এরাউন্ড, এখানে এমন এক জন ব্যক্তির মূর্তি আছে যিনি সূর্যকে স্থির করেছেন ও পৃথিবীকে চারিদিকে ঘুরিয়েছেন। একই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, আগামী দিনে হয়তো ভারতের রাজধানী দিল্লির কোন মুখ্য চৌরাস্তার উপর দত্তপন্থ ঠেংড়ীজীর এক বড় মূর্তি লাগানো হবে;
যার নীচে লেখা থাকবে হেয়ার ইজ এ ম্যান হু গিভ দ্যা অল্টারনেটিভ ইকোনমিক মডেল অফ ক্যাপিটলিস্টিক মার্কেট-ইকোনমি এন্ড লেফ্টিস্ট মার্কস-ইকোনমি। এমন একজন ব্যক্তির মূর্তি, যিনি পুঁজিবাদী মডেল ও বামপন্থী আর্থিক মডেলের বিকল্প হিসাবে তৃতীয় বিকল্প হিন্দু ইকোনমিক মডেল দিয়েছেন। উনাকে কাছ থেকে দেখার, উনার লেখা বিভিন্ন বই পড়া ও উনার তৈরি সংগঠনে দীর্ঘ দিন কাজ করার সুবাদে, এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে শোনার পর, আমার অনুভব থেকে আমি এইটুকুই আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপিত করলাম। সমস্ত বিশ্বের জানা উচিত এই মহান তপস্বী সম্বন্ধে, আমরা দাবি জানাচ্ছি যে – উচ্চশিক্ষায় পাঠ্যপুস্তকে যেমন কাল মার্কস পড়ানো হয়, ঠেংড়ীজীর জীবনী ও থার্ড ওয়ে উচ্চ শিক্ষায় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তা হলেই আমাদের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা সার্থক হবে। ঠেংড়ীজির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে ।
সুব্রত মন্ডল
(লেখক পরিচিতি: সুব্রত মণ্ডল, প্রান্ত সংগঠক, পশ্চিমবঙ্গ প্রান্ত, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ)
প্রবন্ধের সঙ্গে ছবি এঁকেছেন শীর্ষ আচার্য।