ভারতীয় কিষান বার্তার প্রতিবেদন। ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের তরফে দেশজুড়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রঋষি দত্তপন্থ ঠেংড়ীর জন্মশতবর্ষ পালিত হয়। বাদ যায় নি পশ্চিমবঙ্গও। এ রাজ্যে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে এবং বহু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পালিত হয় শতবর্ষের অনুষ্ঠান। মূল লক্ষ্য ছিল শতবর্ষ পালনের মাধ্যমে জন সংযোগ বাড়ানো এবং জন-জাগরণের মাধ্যমে সাংগঠনিক বিস্তার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কিষান সঙ্ঘের মুখপত্র ‘ভারতীয় কিষান বার্তা’-র প্রথম সংখ্যাতেই (১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯) দত্তপন্থ ঠেংড়ী সম্পর্কে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে সঙ্ঘের পশ্চিমবঙ্গ প্রান্ত। বাংলা ভাষায় সঙ্ঘ বিচার ধারায় শতবর্ষের আলোকে এটিই ছিল এই সংক্রান্ত প্রথম রচনা। তারপর থেকে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের তরফে একের পর এক সফল কার্যক্রম গৃহীত হয়। অন্যান্য সংগঠনগুলিও সামিল হয় দত্তপন্থের শতবর্ষ পালনে।
কার্যত কিষান সঙ্ঘের শতবর্ষের কার্যক্রম শুরু গতবছর ২৯ সেপ্টেম্বর। সেদিন ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের কলকাতা মহানগর আয়োজিত সেমিনারে আলোচনার বিষয় ছিল “বাংলার কৃষকের দ্বিগুণ আয় বৃদ্ধি এবং কৃষিতে পেশাগত রোগ সমস্যা”। অনুষ্ঠানে সূচক বক্তব্য পেশ করেন অখিল ভারতীয় সম্পাদক শ্রী মোহিনী মোহন মিশ্র। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক দিলীপ কুমার মিশ্রকে দত্তপন্থ ঠেংড়ী স্মারক পুরস্কার প্রদান করা হয়। কৃষি ও চিকিৎসা জগতের স্বনামধন্য অধ্যাপক ও গবেষকেরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রান্ত ও জেলার কার্যকর্তাবৃন্দ ছাড়াও বহু গবেষক, অধ্যাপক, প্রবুদ্ধ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।
শ্রী আশুতোষ কীর্তনীয়ার আহ্বানে দত্তপন্থ ঠেংড়ী জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় যুগবেড়িয়া, উত্তর ২৪ পরগণায়। স্থানীয় নবজাগরণী সঙ্ঘের যৌথ উদ্যোগে এগিয়ে আসেন ক্লাবের সম্পাদক শ্রী কানাই রায় ও অনান্য সদস্যবৃন্দ। ৮ নভেম্বর, ২০১৯-এ ছিল রক্তদান শিবির। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান করেন। এরপর গত ২২ শে নভেম্বর যুগবেড়িয়ার ময়ূরাক্ষী লজের সভাকক্ষে অপর একটি সান্ধ্য আলোচনা চক্র আয়োজিত হয়। প্রায় চারশত মানুষ এখানে অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার বিষয় ছিল “জন্মশতবর্ষে দত্তপন্থ ঠেংড়ী”। অনুষ্ঠানের সূচক বক্তা ছিলেন কৃষি বিশেষজ্ঞ তথা সংগঠনের প্রান্ত প্রচার প্রমুখ ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। প্রান্তের সংগঠন সম্পাদক শ্রী অনিল চন্দ্র রায়ও উপস্থিত ছিলেন। সেদিন উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কিষান সঙ্ঘের সভাপতি তথা সন্দেশখালি নিবাসী প্রাক্তন শিক্ষক শ্রী হরিদাস মন্ডলকে দত্তপন্থ ঠেংড়ী স্মারক পুরস্কার প্রদান করা হয়। মজদুর সঙ্ঘের প্রবীণ কার্যকর্তা শ্রী টগর চন্দ্র পোদ্দারের নামও ঘোষণা করা হয়, যদিও তিনি সেদিন উপস্থিত থাকতে পারেন নি। সভায় বক্তব্য রাখেন ডা. সনাতন বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. প্রসেনজিৎ রায় চৌধুরী, শ্রী পীতারণ মুখোপাধ্যায়, শ্রী সোমক বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রী মৃত্যুঞ্জয় পাল, শ্রী অংশুমান গঙ্গোপাধ্যায় এবং শ্রীমতী জয়শ্রী বিশ্বাস। এদিন সকলের মধ্যে “জন্মশতবর্ষে শ্রী দত্তপন্থ ঠেংড়ী” বিষয়ক একটি সুদৃশ্য লিফলেট বিতরণ করা হয়। লিফলেটটি সংগঠনের প্রান্ত প্রচার প্রমুখ ড. কল্যাণ চক্রবর্তী কর্তৃক রচিত এবং প্রান্ত সভাপতি (বর্তমানে প্রয়াত) শ্রী নন্দলাল কাট কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রান্ত সাধারণ সম্পাদক শ্রী কল্যাণ মন্ডল কর্তৃক প্রচারিত হয়। এই পত্রটি দুই হাজার কপি ছাপানো হয়, তার সফ্ট কপি সমগ্র রাজ্য জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
পরে ১২ জানুয়ারি, ২০২০ সালে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের তরফে ছ’পাতার রঙিন ফোল্ডার ছাপানো হয়। বিষয়: জন্মশতবর্ষে রাষ্ট্রঋষি দত্তপন্থ ঠেংড়ী। এটি রচনা করেন প্রান্ত প্রচার প্রমুখ ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। তা প্রকাশ ও প্রচার করেন সংগঠনের তরফে যথাক্রমে প্রান্ত সভাপতি শ্রী নন্দলাল কাট (বর্তমানে প্রয়াত) এবং প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক শ্রী কল্যাণ মন্ডল। এটি সারা রাজ্যে দশ হাজার কপি বিলি করার পাশাপাশি তার সফ্ট কপি (ই-ভার্সন) রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের কতিপয় কার্যকর্তা রাজ্যে গঠিত জন্মশতবর্ষ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন এবং তারা যোগ্যতার সঙ্গে সেই কাজ সুসম্পন্ন করেছেন। কিষান সঙ্ঘের কোনো কোন কার্যকর্তা দত্তপন্থ সম্পর্কিত নানান লেখা ও তথ্য পরিবেশন করে তাদের সহায়তা করেছেন। রাজ্যের কয়েকজন কার্যকর্তা অন্যান্য সহায়ক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, তাদেরকে প্রতিবেদনসহ নানান তথ্য সরবরাহেও সহায়তা করেছেন। এগুলির মধ্যে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ, বিদ্যার্থী পরিষদ, স্বস্তিকা, প্রজ্ঞাপ্রবাহ, জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সঙ্ঘ প্রভৃতি সংগঠনের নাম উল্লেখযোগ্য।
ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের কার্যকর্তা ড. কল্যাণ চক্রবর্তীকে প্রজ্ঞাপ্রবাহ ও লোকপ্রজ্ঞার সদস্য-বক্তাদের জন্য ঠেংড়ীজী বিষয়ক আবশ্যিক পাঠ ও টেক্সট তৈরীর কাজে ব্যাপৃত থাকতে দেখা যায়। তিনি লোকপ্রজ্ঞা দুর্গাপুর, বসিরহাট ও উত্তর কলকাতা চর্চাকেন্দ্রের আয়োজনে সংগঠিত ওয়েবিনারে যথাক্রমে ২৮ শে আগষ্ট, ১ লা সেপ্টেম্বর এবং ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০-তে একক বক্তব্য রাখেন। সভাগুলিতে দত্তপন্থ ঠেংড়ীজীর জীবন ও দর্শনের উজ্জ্বল উদ্ধার করে পরিবেশন করা হয় উপস্থিত ভার্চুয়াল শ্রোতা ও দর্শকদের। এছাড়াও জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সঙ্ঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ড. চক্রবর্তী সংগঠনের বীরভূম জেলার আয়োজনে জন্মশতবর্ষের ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রাখেন।
নভেম্বর, ২০২০ জুড়ে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ প্রতিটি জেলায় এক বা একাধিক আলোচনা সভার আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাঁর ভাবাদর্শ গ্রামসম্পর্কের মাধ্যমে কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং সদস্য অভিযান শুরু করা যায়, সেটিই এখন মুখ্য আলোচনার বিষয়।
‘ভারতীয় কিষান বার্তা’, দত্তপন্থ ঠেংড়ী বিশেষ ই-সংখ্যা, ১০ ই নভেম্বর, ২০২০। সম্পাদক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।