গত ৪ই নভেম্বর নিজের বাসগৃহ থেকে মুম্বই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন রিপাবলিক টিভি প্রধান এডিটর অর্ণব গোস্বামী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে তিনি নাকি ইন্টেরিয়ার ডিজাইনার অন্বয় নায়েককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেন।
ঘটনাটি দু’বছর আগেকার। ২০১৮ সালে মে মাসে ইন্টেরিয়ার ডিজাইনার অন্বয় নায়েক আত্মহত্যা করেন। আলিবাগের কবীর গ্রাম থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই সময় পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে তাঁর বাড়ি থেকে। এই নোট অনুযায়ী অর্ণব গোস্বামীর থেকে তিনি ৮৩ লাখ টাকা পেতেন, যা কোনওভাবেই অর্ণব গোস্বামী মেটাচ্ছিলেন না। অর্ণবের সঙ্গে আরও দুই ব্যক্তির নাম ওই সুইসাইড নোটে লেখা ছিল যাদের থেকেও অন্বয় ৪ কোটি ও ৫৫ লক্ষ টাকা পেতেন, তারা হলেন ফিরোজ শেখ ও নিতীশ সার্দা।
সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায় যে, অন্বয় নায়েকের আত্মহত্যার সঙ্গে অর্ণব গোস্বামী বা সুইসাইড নোট উল্লিখিত দুই ব্যক্তির কোনওরকম সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এই কেসের তদন্তের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ করা গেছে। কিছু প্রমাণেরও হদিশ মিলছে না। এ নিয়ে আরও বিস্তরে তল্লাশি চালানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালের আগে প্রায় ছয় সাত বছর ধরেই অন্বয় নায়েকের কোম্পানি কনকোর্ড ডিজাইন প্রাইভেট লিমিটেড অর্থনৈতিক মন্দার দিকেই চলছিল। এমনকি, কোম্পানির অনেক কাজই অসম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে। অনেক অর্ডার নিয়েও তা সময়মত ডেলিভারি দিতে পারতেন না অন্বয়ের কোম্পানি, এমন অভিযোগও উঠে। সদ্য পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬ সালেই অন্বয়ের কোম্পানির উপর প্রায় ২৬.৫০ কোটি টাকার ঋণভার ছিল। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন অন্বয়ের মা-ও। কারণ তিনিও ওই কোম্পানির সমান অংশীদার ছিলেন। এই ঋণভার মেটাতে না পেরেই অন্য কোনও উপায় না দেখে নিজের মাকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে নিজে আত্মঘাতী হন অন্বয়।
হেমতাবাদ রহস্যমৃত্যুতে এবার দিলীপ ঘোষের নিশানায়…
এই ঘটনা মেনে নিতে পারেন নি অন্বয়ের স্ত্রী অক্ষতা ও কন্যা আদনিয়া। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে তারা আলিবাগ পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগও আনেন। এরপর মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখের দ্বারস্থ হন। এরপর ২০১৯ সালে ফের এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। অন্বয়ের কন্যা আদনিয়া জানান যে অর্ণব গোস্বামী ও সুইসাইড নোটে উল্লিখিত দুই ব্যাক্তি একে অপরকে চিনতেন। তাঁর দাবী, তাঁর বাবা যখন ফিরোজ শেখের থেকে টাকা চাইতেন, তখন তিনি বলতেন যে অর্ণব গোস্বামীও এখনও টাকা মেটায়নি। যদি তারা একে অপরকে না চিনে থাকবেন, তাহলে কী করে জানবেন যে অন্যজন টাকা দিয়েছেন কী না।
অর্ণব গোস্বামীকে গ্রেফতার করার বিরোধিতা করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-এর প্রধান সুনয়না পিঙ্গল জানান, অর্ণবের বিরুদ্ধে কোনও প্রমান দাখিল করতে পুলিশ ব্যর্থ, শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে কাউকে এভাবে হেফাজতে নেওয়া যায় না।