“যদি কোন ব‍্যক্তি আমার মা-বাবার এইরকম ব‍্যঙ্গচিত্র বানায় তাহলে আমি তাদের হত্যা করবো”

এমনই হুমকি দিলেন মুনাব্বর রানা। গত ৩১শে অক্টোবর জি-নিউজের একটি সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পুরো ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে তিনি এমন উসকানিমূলক বক্তব্য পেশ করেন এবং এইভাবেই শিক্ষকের শিরচ্ছেদ ও জঙ্গি আক্রমনের ঘটনার​ সাফাই দিয়েছেন এই বিখ্যাত ভারতীয় কবি।

গত ১৬ই অক্টোবর ২০২০ স‍্যামিয়‍্যুল প‍্যাটির মুন্ডচ্ছেদের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আজারভ এবং এই ভারতীয় উর্দু কবির মধ্যে মূল পার্থক্য ঠিক কোথায়? তারা দুজনেই একই ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। কবি মুনাব্বর রানা নিজে মধ‍্যপন্থী হয়েও কট্টরপন্থী​দের আদর্শগত সহায়তা প্রদান করে অন‍্যদিকে আবদুল্লাহ আজারভ এমন একটি ঘৃন্য কাজের মাধ্যমে নিজের নীতিকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন।

মুন্ডচ্ছেদের এই ঘটনাটিকে এক মানসিক ভারসাম্যহীন​, চরমপন্থীর নৃশংসতা​ এবং মানসিক বিকারগ্রস্থের কাজ বলা যায় না কি? যার কিনা নিজের বিশ্বাসের উপরেই কোনো ভরসা নেই। ঠিক কী পরিমাণ ঘৃণা, প্রতিশোধস্পৃহা এবং বর্বরতা থাকলে আবদুল্লাহ আজারভের মতো একজন ১৮বছর বয়সী যুবক এইভাবে এক নিরীহ শিক্ষকের মুন্ডচ্ছেদ করতে পারে?

আজারভের এই নৃশংসতা, পাশবিকতায় মোড়া মুন্ডচ্ছেদের এই ঘৃন্য কাজটিকে শুধু তুরষ্ক ও পাকিস্তানের মতো মুসলিম দেশগুলোই সমর্থন করেনি, মুনাব্বর রানার মতো​ ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ,ভদ্র, নরমপন্থী মনোভাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুসলমানরাও খোলাখুলিভাবে এর সমর্থন জানিয়েছেন​।

“জেহাদিস্ট থ্রেট টু ইন্ডিয়া : দ‍্য কেস ফর ইসলামিক রিফর্মেশন বাই অ‍্যান ইন্ডিয়ান মুসলিম” এর রচয়িতা তুফেল আহমেদ, আদর্শগত দিক থেকে যিনি একজন মধ‍্যপন্থী মুসলমান হিসেবে নিজেকে দাবি করেন, তিনি তাঁর এই বইয়ে ভারতবর্ষে ইসলামিক জিহাদের বিষয়ে এক গভীর পর্যালোচনা করেছেন। তুফেল আহমেদ অত‍্যন্ত দৃঢ়তার​ সাথে মুসলিম সমাজের পুনর্গঠনের ব‍্যাপারে নিজের মত প্রকাশ করা। তার সাথে এও জানিয়েছেন যে মুসলিম যুবসমাজ বিশেষ করে ৬-১৪ বছর বয়সী মুসলিম মেয়েদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটানো একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু এতসবের পরেও তিনি বিহারের মাদ্রাসা শিক্ষা, জেএনইউ তে পড়াশোনা এবং বিবিসি-তে কাজের অভিজ্ঞতার​ মাধ্যমে যে পরিচয় লাভ করেছিলেন সেটা যোগী আদিত্যনাথ গনতন্ত্রের নীতি মেনেই উত্তরপ্রদেশের​ মুখ‍্যমন্ত্রী হিসাবে অভিষিক্ত হওয়ার​ পর তিনি ভারতের সবকিছুর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে সেসব জলাজ্ঞলী দিয়েছিলেন।

বলিউডের বিখ্যাত গীতিকার মধ‍্যপন্থী ভাবাদর্শী আর এক তথাকথিত মুসলিম রাহাত ইন্দোরী একসময় দাবি করেছিলেন যে ” এই মাটিতেই সবার রক্ত মিশে রয়েছে। ভারতবর্ষ করো পৈতৃক সম্পত্তি নয়”। কিন্তু তিনি এই দাবি তোলার আগে ভুলে গিয়েছিলেন যে মুসলমানদের​ জন‍্য ইতিমধ্যেই দু দুটি ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরি হয়ে গিয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে কোথাও কখনো কোনো কথা উচ্চারিত হলেই এইসব তথাকথিত সভ্য,ভদ্র নরমপন্থীদের মুখোশ ঘসে পড়ে।

যদিও মুসলমান রাষ্ট্রগুলো ইতিমধ্যেই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে​, এইরকম পরিস্থিতিতে ভারতের নেতৃত্ব অত‍্যন্ত দৃঢ় পদক্ষেপ হিসাবে সরকারীভাবে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইম্মানুয়েল ম‍্যাক্রোঁর ওপর ওঠা সমস্ত অসাংবিধানিক বাক‍্য প্রয়োগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারতের মুসলমানরা কিন্তু ঐ ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর প্রতিই তাদের আনুগত্য প্রকাশ করছে।

মুম্বাইয়ে ভিন্ডি বাজারের রাস্তায় ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইম্মানুয়েল ম‍্যাক্রোঁর পোস্টার লাগিয়ে তাকে অসন্মান করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি মুম্বাইয়ে অন‍্যান‍্য জায়গায় তরুণ কিশোরদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এবার প্রশ্ন হল এইসব বাচ্চারা কি আদৌ জানে তারা কি করেছে? উত্তর হল, না।তারা কিছুই তেমন জানে না। এটা হল শিশু বয়সে করা মগজধোলায়ের বিদ্বেষ মিশ্রিত ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ।

মধ‍্যপ্রদেশের ভূপালে কংগ্রেস সাংসদ আরিফ মাসুদ হাজারখানেক মুসলমান নিয়ে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। অন‍্যদিকে ফারহান জুবেদী’র মতো আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিত সভ‍্য খোলাখুলিভাবে অভিযুক্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। প্রতিবাদের​ নামে এই মর্মে শিরচ্ছেদের হুমকি দিয়েছেন : “যদি কেউ তাঁর (মহম্মদের) বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস দেখান”। সাহারানপুর, শ্রীনগর, লুধিয়ানার মতো জায়গা গুলোতেও​ প্রতিবাদের​ ঝড় উঠেছে।

ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি যখন কট্টরপন্থী মুসলমানদের​ ভেঙে গুঁড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার শপথ নিচ্ছেন তখন ভারতীয় মুসলমান সমাজ যারা কিনা নিজেদের মধ‍্যপন্থী হিসাবে দাবী করেন, তারা ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির​ বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন​। ভারতীয় মুসলিমদের​ চরিত্রের​ সবচেয়ে অমানবিক দিকটি হলো তারা কখনোই ঐ নিরীহ শিক্ষকের মুন্ডচ্ছেদ বা নাইসে একজন চুয়াল্লিশ বছর বয়সী ব্রাজিলের সাম্বা শিল্পী, যিনি তিন সন্তানের মা, জঙ্গিদের​ দ্বারা ছুরিকাহত হয়ে প্রাণ হারিয়ে ছিলেন, সেইসব ঘটনায় কখনো নিন্দায়​ সরব হতে তাদের দেখা যায়নি।

মধ‍্যপন্থী মুসলমানদের কি আদৌ কোনো অস্তিত্ব আছে?

অতীতে ভারত বহুবার মুসলিম আক্রমণের শিকার হয়েছে। ২৬/১১ বা ১৩/৭ এর মত বোমা হামলায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে​। হিসেব কষে দেখতে গেলে এমন অসংখ্য বোমা হামলার ঘটনা পাওয়া যাবে। সীমান্তের ওপারে থাকা জঙ্গী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বরাবরই মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে তথাকথিত এই মুসলিম সমাজ। নওয়াজ শরীফ বা ইমরান খানের মতো জঙ্গি সংগঠনের মদতদাতা, যারা সবসময় ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোর জন্য মুখিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর মতো সদিচ্ছা বা মেরুদন্ডের জোর কোনোটাই এই মুসলিম সম্প্রদায়ের নেই। ১৯৯০ সালে কাশ্মীর উপত্যকায়​ যখন হাজার হাজার হিন্দুদের​ নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, হিন্দু মহিলারা গনধর্ষণের শিকার ও বাদ যায়নি শিশুরাও। যখন এইভাবে অত‍্যাচার করে সম্পত্তি কেড়ে উদ্বাস্তু বানিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল উপত‍্যকা থেকে তখনও কিন্তু এই মধ‍্যপন্থী মুসলমান সমাজ নীরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করেছিল।

এই তথাকথিত মধ‍্যপন্থী মুসলমান সমাজ যারা ব‍্যঙ্গচিত্র কান্ডে নিজেদের মূল‍্যবাদ মতামত প্রকাশের মাধ্যমে তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি করেছে তারা খুব ভালো করেই জানেন যে আমাদের দেশ ও দেশের বহু হিন্দু মন্দির বারবার অপবিত্র এবং ধ্বংস হয়েছে মুসলিম আক্রমণের কারনে। স্বাধীনতার পরেও এই সমস্ত মুসলমানেরা শুধুমাত্র​ মন্দির ধ্বংস বা লুন্ঠন করেই তারা ক্ষান্ত হননি, এর পাশাপাশি ব‍্যাপকহারে গনহত্যা, অত‍্যাচার চালিয়েছে কাশ্মীর উপত্যকায়। কিন্তু মজার ব্যাপার এটাই যে অত‍্যাচারিত এইসব কাশ্মীরে​র অধিবাসীরা প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো চোষ্টাও করেননি কোনদিন। ১৯৪৭-এ পাকিস্তানের মতো ভারতের মাটিতে ইসলাম স্থাপনের জন্য ১/৩ অংশ জমির​ দাবি​ জানিয়েছিলেন ভারতীয় মুসলমান সমাজ। এটা হলফ করে বলা যায় যে তাদের এই দাবি যদি মেনেও নেওয়া হতো তবুও এই মধ‍্যপন্থী মুসলমানরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ঘটা নিন্দনীয় মুসলিম কার্যকলাপে নিজেদের সমর্থন জানাতো। তাই ভারতের জন্য এটাই সঠিক সময় প্রশ্ন করার, মধ‍্যপন্থী মুসলমানদের অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে?

https://ritamdigital.org/postview/2f9ff9d6-175a-433c-81d7-6713222d9de5

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.