নির্বাচনে ভরাডুবি, রিপাবলিকান শিবিরে ফাটল স্পষ্ট করে নিকিকে কটাক্ষ জুনিয়র ট্রাম্পের

হোয়াইট হাউস কার্যত দখল করে ফেলেছেন ‘ওল্ড জো’ (Joe Biden)। ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর জয় ঘোষণা এখন আনুষ্ঠানিক পর্বের চেয়ে বেশি কিছু নয়। পরাজয় নিশ্চিত জেনে আইনি ফাঁক খোঁজতে ব্যস্ত ট্রাম্প শিবির। এহেন পরিস্থিতিতে রিপাবলিকান দলের অন্দরে যে ফাটল স্পষ্ট তা বোঝা গেল নিকি হ্যালির (Nikki Haley) বিরুদ্ধে জুনিয়র ট্রাম্পের ক্ষোভপ্রকাশে।

সাউথ ক্যারোলিনার প্রাক্তন গভর্নর নিকি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের অন্যতম মুখ। তাঁর হাত ধরেই ফের ‘সাদা বাড়ি’ দখলের স্বপ্ন দেখছে দল। কিন্তু ভোটগণনায় কারচুপির বিষয়টি নিয়ে বাকি রিপাবলিকানদের মতো পাড়া মাথায় তুলেননি নিকি। গণনা শুরুর পর থেকেই কারচুপির অভিযোগ তুলে আসছে ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবির। আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে ভোট গণনা বন্ধের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন ট্রাম্পপন্থীরা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই বিষয়ে নীরব নিকি। আর তাই গত কাল টুইটারে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে নাম না করে নিকিকে একহাত নিয়েছেন ট্রাম্প জুনিয়র। গণনায় কারচুপি নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরের বিরুদ্ধে কেন সরব হচ্ছেন না নিকি, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্পপুত্র। কেউ এক জন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, রিপাবলিকানদের ভবিষ্যৎ কী এবং গণনায় কারচুপি নিয়ে নিকি এখন ঠিক কী করছেন। তাঁর জবাবেই জুনিয়র ট্রাম্প বলেন, “এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আসলে সবাই এখন দেখছেন, কে কী করছেন। কে এই কারচুপির বিরুদ্ধে আসল লড়াইটা লড়ছেন আর কে পাশে বসে চুপচাপ সব দেখছেন। রিপাবলিকানরা কয়েক দশক ধরে এ বিষয়ে দুর্বল। তাই তো বামপন্থীরা এতটা বাড়াবাড়ির সুযোগ পেয়ে যান। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।” অন্য একটি টুইতে তিনি লেখেন, “২০২৪ সালের পদপ্রার্থীদের (পড়ুন নিকি) এই নিষ্ক্রিয়তা সত্যিই অদ্ভূত। এটাই তো আসল সময় ছিল প্রমাণ করার যে তাঁরা ঠিক কতটা লড়াই করতে পারেন।”

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ এবং সিএনএন–এর খবর অনুযায়ী, অ্যারিজোনা (‌Arizona), নেভাদা (Nevada)‌, জর্জিয়ার (‌‌Georgia)‌ পাশাপাশি পেনসিলভেনিয়াতেও (‌Pennsylvania)‌ এগিয়ে গেলেন বিডেন। সেখানে ৬ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে‌ তিনি। নেভাডা এবং অ্যারিজোনাতেও লিড অনেক বেশি। তবে জর্জিয়াতে এক হাজারের কিছু বেশি ভোটে এগিয়ে বিডেন। অন্যদিকে, একমাত্র নর্থ ক্যারোলিনাতে এগিয়ে ট্রাম্প। ফলে ফের হোয়াইট সব মিলিয়ে ম্যাজিক ফিগার ২৭০ থেকে কিছুটা দূরে রয়েছেন বিডেন। ২৬৪টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঝুলিতে ২১৪টি ইলেক্টোরাল ভোট। অর্থাৎ অনেকটাই পিছিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট। সেখানে আবার হাতছাড়া হল পেনসিলভেনিয়াও। এর ফলে ট্রাম্পের পক্ষে ফের লড়াইয়ে ফেরা কার্যত অসম্ভব, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে, নির্বাচনী ভরাডুবির জেরে ক্রমেই মারমুখী হয়ে উঠছেন ট্রাম্পপন্থীরা। রিপাবলিকান শিবির সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করলেও, বন্দুক হাতে দলের অনেক সমর্থকই প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমেই বাড়ছে ‘স্টপ দ্যা স্টিল’ ক্যাম্পেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বৃহস্পতিবার ‘stop the steal’ নামের একটি ট্রাম্পপন্থী গ্রুপ বন্ধ করে দেয়। সেখানে বন্দুক হাতে ‘কারচুপি’ রুখতে ট্রাম্প সমর্থকদের রাস্তায় নামতে আহ্বান জানানো হচ্ছিল। সব মিলিয়ে আমেরিকায় হিংসার আশঙ্কা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.