ভাইপোকে নিয়ে দিদির কী প্ল্যান, আন্দাজ করতে চাইলেন অমিত শাহ

পুজোর মধ্যেই দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে একটা মিটিং ছিল। সরকারি মিটিং। সে সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘরোয়া আড্ডা চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। আরও অনেকে ছিলেন। বাংলার ব্যাপার নিয়ে এ কথা সে কথার মধ্যে নাকি প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা ‘ভাতিজার’ কী ব্যাপার?

কাট টু কলকাতার ওয়েস্টিন হোটেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সাংবাদিক বৈঠক চলছে। তৃণমূল, বিজেপি, ৩৫৬, রাজনীতি এসব নিয়ে সাত-সতেরো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে শাহ নিজেই তুললেন ‘ভাতিজা’র’ কথা। জানালেন ভাতিজা’র ব্যাপারে দিদি কী ভেবে রেখেছেন দিব্য আন্দাজ করতে পারছেন তিনি। এবং তাঁর কথায়, “ভাতিজাকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইছেন দিদি।” সে প্রসঙ্গে এও বলেন, বাংলার মানুষের সামনে এখন দুটো চয়েজ রয়েছে—পরিবারতন্ত্র ও অধিকারতন্ত্র। পরিবারতন্ত্র মানে ভাইপো-রাজ। আর অধিকারতন্ত্র মানে উন্নয়ন, বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, সোনার বাংলা তৈরি করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখানেই থামেননি অমিত শাহ। তিনি বলেন, “বাংলায় এখন তিনটে আইন। একটা আইন ভাইপোর জন্য, একটা আইন ভোটব্যাঙ্কের জন্য আর একটা আইন সাধারণ মানুষের জন্য।”

তা হলে মানেটা কী দাঁড়াল?

সেটা স্পষ্ট। অমিত শাহ বাংলা সফরে আসার অনেক আগে থেকেই রাজ্য বিজেপির নেতারা ও দিল্লির পর্যবেক্ষকরা তাঁকে ইনপুট দিচ্ছিলেন ‘ভাতিজা’কে টার্গেট করা হোক। শুক্রবার অমিত শাহর কথা শুনে অনেকেই বুঝতে পারছেন, সেই পরামর্শ মেনে নিয়েছেন তিনি। ভাতিজাকেই টার্গেট করবে বিজেপি।

অমিত শাহকে পাল্টা নিশানা করেছেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। গতকাল বাঁকুড়ায় এক জনজাতি পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ করেছিলেন অমিত শাহ। সে প্রসঙ্গে অভিষেক বলেছিলেন, “মাত্র এক বছরের মধ্যেই বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে তফসিলি উপজাতিদের উপর অত্যাচার চারগুণ হয়ে গেছে। হাথরাসে দলিত মেয়েকে নৃশংস ভাবে ধর্ষণের ঘটনার মর্মান্তিক স্মৃতি এখনও তাজা। অমিত শাহজি এ সব ভাঁওতাবাজির খানাপিনা ছেড়ে কেন সেই সব বিষয়ে কথা বলছেন না যাতে এই জনজাতির প্রকৃত উপকার হয়।” অমিত শাহর বিরুদ্ধে পাল্টা পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। 

ফলে আপাতত এটা স্পষ্ট যে এ হেন শঠে শাঠ্যং আপাতত চলবে ও তা ক্রমশ তীব্রতর হবে।

এখন প্রশ্ন হল, কেন বেছে বেছে ‘ভাতিজা’কে নিশানা করতে চাইছেন অমিত শাহরা? কেনই দিদির প্ল্যান আন্দাজ করে তা জোর গলায় বলছেন।

বিজেপি সূত্রের মতে, এর সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, রাজ্য রাজনীতিতে অনেকেই মনে করেন যে তৃণমূল দলটা এখন চালাচ্ছেন মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনিই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তা নিয়ে শাসক দলে অনেকের মধ্যেই উষ্মা ও অসন্তোষ রয়েছে। মিহির গোস্বামীর মতো প্রবীণ নেতারা কেউ কেউ তা পষ্টাপষ্টি বলেও দিচ্ছেন। দিদি ভাতিজাকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইছেন—এ কথা বাংলার রাজনীতিতে চারিয়ে দিতে পারলে তৃণমূলের মধ্যেই তার প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। অভিষেকের নেতৃত্বের প্রতি যদি কারও অনাস্থা থাকে তা হলে তাঁরা দল ছাড়ার কথাও ভাবতে পারেন। অর্থাৎ শাসক দলে অস্থিরতা তৈরি করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, রাজ্য বিজেপির অনেকেই ‘ভাইপো’র বিরুদ্ধে আকছার দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তাঁদের অনেকের ধারণা হল, সাধারণ মানুষেরও তাঁর সম্পর্কে ধারণা ভাল নয়। ফলে ভোটের পর ‘ভাইপো’ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে এই সন্দেহ বা জল্পনা ছড়িয়ে দিতে পারলে সাধারণ মানুষের অনেকেই ভোটের সময় দু’বার ভাবতে পারেন।
তবে বিজেপি যে এই কৌশল নিতে পারে সেই ধারণা তৃণমূলেরও রয়েছে। বিশেষ করে টুইটে অমিত শাহকে জবাবও দিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন দেখার এই কৌশলকে কোন মাত্রা পর্যন্ত নিয়ে যান অমিত শাহরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.