গত মে মাস থেকে লাদাখ সীমান্তে ভারতের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়েছে চিনের। শুক্রবার চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত বললেন, চিন সীমান্তে যদি গোলমাল চলতে থাকে, বিনা প্ররোচনায় আমাদের ওপরে হামলা চালানো হয়, তাহলে ‘বড় ধরনের সংঘর্ষ’ বেধে যেতে পারে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, চিন ও পাকিস্তান জোট বেঁধে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। তা থেকে যে কোনও সময় বড় অশান্তি শুরু হওয়া অসম্ভব নয়।
এদিন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের এক ওয়েবনারে বিপিন রাওয়াত বলেন, চিনের সঙ্গে পুরোদস্তুর যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। কিন্তু তাঁর মতে, “সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করলে বলা যায়, সীমান্তে যদি ছোটখাটো সংঘর্ষ চলতেই থাকে, চিন যদি আমাদের এলাকায় ঢুকে পড়ে, বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ করে, তাহলে বড় ধরনের সংঘর্ষের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” লাদাখ সীমান্তে বিরোধ শুরু হওয়ার পরে এই প্রথম সরকারের কোনও কর্তা এভাবে সরাসরি চিন সম্পর্কে মন্তব্য করলেন।
চিফ অব আর্মি স্টাফ এদিন বলেন, লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের আশপাশে এখন যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। চিনারা বার বার সীমান্ত লঙ্ঘন করছে। আক্রমণও চালাচ্ছে।
পরে তিনি বলেন, “চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ভারতে হামলা করতে এসে খুব কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। এমন যে হবে তা তারা ভাবতে পারেনি। আমাদের সেনাবাহিনী দৃঢ়ভাবে তাদের প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা চাই লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল যেখানে আছে, সেখানেই থাকুক। তার কোনও পরিবর্তন আমরা চাই না।”
বিপিন রাওয়াতের মতে, করোনা অতিমহামারীর ফলে চিন দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেজন্য তারা হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক। দক্ষিণ চিন সমুদ্র, পূর্ব চিন সমুদ্র এবং তাইওয়ান প্রণালীতে তারা আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। তাঁর কথায়, “আগামী কয়েক বছরে আমরা সম্ভবত দেখতে পাব, চিন দুর্বল দেশগুলিকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শোষণ করতে চাইছে, সামরিক বাহিনীর আরও আধুনিকীকরণ করছে এবং পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে আরও বেশি প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে।”
গত অক্টোবরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেন, ৩০ বছর ধরে ভারত ও চিনের মধ্যে একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তার প্রভাব সীমান্তেও দেখা যাচ্ছিল। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি সেই সম্পর্কে বড় ভাঙন ধরেছে।
জয়শঙ্কর বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকে দু’দেশের মধ্যে একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমেই সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর যত কম সেনা মোতায়েন করা রাখা যায় তত ভাল। সেইমতো কাজও করা হয়েছিল। কিন্তু চিনের আগ্রাসী মনোভাব সেই সম্পর্কে ভাঙন ধরিয়েছে বলেই অভিযোগ বিদেশমন্ত্রীর।
জয়শঙ্কর বলেন, “দু’দেশের মধ্যে নীতি নিয়ে একটা বিস্তারিত আলোচনা ও সেইমতো কাজও হয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি একটা দেশ সেই চুক্তি ও আলোচনা থেকে ক্রমাগত সরে আসছে। লাদাখ সীমান্তে ক্রমাগত চিনা সেনা মোতায়েন থেকে এটাই পরিষ্কার। আর যখন সীমান্তে দু’দেশের সেনা খুবই কাছাকাছি থাকে তখন ১৫ জুনের মতো কিছু ঘটনা ঘটে যায়। তাতে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে যায়।”