বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে তীব্র জল্পনা তৈরি হয়েছে। অমিত শাহের মন্তব্য, রাজ্যপালের দিল্লি যাওয়া এসবের মধ্যে যখন কৌতূহল বাড়ছে, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতায় আসার পরই ৩৫৬ ধারা জারি নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন বিজেপি-র তাবড় দুই নেতা—মুকুল রায় ও কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
কী বলেছেন কৈলাস?
সর্বভারতীয় বিজেপির এই সাধারণ সম্পাদকের কথায়, রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। রাজ্য পুলিশকে দিয়ে সেই কাজ অসম্ভব। বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ যদি সুনিশ্চিত করতে হয় তাহলে সেনাবাহিনী দিয়েই ভোট করতে হবে।
মুকুলবাবুরই বা কী বক্তব্য?
তাঁর কথায়, “আমি আগেও বলেছি, বাংলায় পুলিশ রাজ চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা পুলিশ সুপারদের অনেকেই তৃণমূলের জেলা সভাপতির মতো কাজ করছেন। এই পুলিশের তত্ত্বাবধানে ভোট হলে প্রহসন হবে।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অনেকে বলছেন, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে তৃণমূল সহানুভূতি পেয়ে যেতে পারে। জবাবে সর্বভারতীয় বিজেপির সহ সভাপতি বলেন, বাংলায় শেষবার রাষ্ট্রপতি শাসন হয়েছিল চল্লিশ বছর আগে। ফের রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে কী হবে তা আগাম বলা কি সম্ভব? রাজ্যের শাসক দল, যে পরিমাণ দুর্নীতি, সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাতে মানুষ অতিষ্ঠ। সহানুভূতি পাওয়ার প্রশ্ন নেই। পুলিশের যষ্ঠি সরে গেলে ওদের দলটাই না ঘরে ঢুকে যায়!
তাহলে কি অমিত শাহের কাছে বঙ্গ বিজেপি ৩৫৬ ধারা জারির দাবি জানাবে?
কৈলাস ও মুকুলবাবু জানিয়েছেন, তা আলবাৎ জানানো হবে। গত দু’মাসে বাংলায় কত জন বিজেপি নেতা কর্মীর প্রাণ গেছে তার হিসাব দেওয়া হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও নিহত বিজেপি কর্মীর মরদেহ ময়নাতদন্ত করা নিয়ে টালবাহানা পুলিশ করেছে তাও জানানো হবে। প্রসঙ্গত, পুজোর ঠিক আগে এ ব্যাপারে দিল্লিতে গিয়ে একবার অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। অমিত শাহকে তিনি বলেছেন, রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁকে কী রকম নাস্তানাবুদ করে রেখেছে। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থা করা হয়েছে যে তিনি আইনজীবীকে ফি পর্যন্ত দিতে পারছেন না। অর্জুনের এ সব অভিযোগ ও বাংলার এ হেন পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে অমিত শাহর।
রাজ্যপালের বক্তব্য কী?
বাংলায় যে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের পরিস্থিতি নেই তা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে জানিয়েছেন। প্রশ্ন হল, সত্যিই বাংলায় ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করতে গেলে তা কীসের ভিত্তিতে করা হবে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পোড়খাওয়া আইনজীবী ধনকড় সেই জমি তৈরি করে রেখেছেন। তিনি গত কয়েক মাস ধরে নিত্য টুইট করে বাংলায় ‘অরাজক পরিস্থিতি’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রেশন দুর্নীতির অভিযোগ, কোভিডের সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ, রাজনৈতিক খুন, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের উপর পুলিশের অত্যাচার, সরকারের আর্থিক অস্বচ্ছতা নিয়ে সরকারকে লম্বা লম্বা চিঠি লিখে রেখেছেন ধনকড়। যার সবকটির জবাব নবান্ন দেয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। সত্যিই ৩৫৬ ধারা জারি করতে হলে এগুলোকেই ভিত্তি করতে পারেন ধনকড়। এমনকি সুপ্রিম কোর্টে তা চ্যালেঞ্জ হলে এই সব চিঠিপত্রকে সে ক্ষেত্রেও দলিল হিসাবে পেশ করা হতে পারে।
রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়াও নাগরিকত্ব আইনের প্রয়োগ নিয়েও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন কৈলাস। তাঁর কথায়, কোভিড পরিস্থিতির কারণে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাস্তবায়িত করা যায়নি। কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত। বাংলায় ভোটের আগেই তা যাতে কার্যকর করা যায় তার বন্দোবস্ত করার চেষ্টা চলছে।