তিনি ছিলেন জীব বিদ্যার জীবন্ত নক্ষত্র। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন অথচ দুলালচন্দ্র সাঁতরা’র (Dulal Chandra Santra) নাম শোনেননি এমন ছাত্র বা ছাত্রী মেলা ভার। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত গোটা পশ্চিমবঙ্গের বাংলা মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থীদের কাছে বামনদেব চক্রবর্তী, সুখেন্দু মাইতি, দেবাশীষ মৌলিক, দুলালচন্দ্র সাঁতরা এই নামগুলি অত্যন্ত সুপরিচিত।
স্কুলে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কাছে এই নামগুলি একপ্রকার বলা যায় নিত্যদিনের সঙ্গী। একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীতে জীববিদ্যার বই বলতে আজও শিক্ষার্থীরা চোখ বন্ধ করে ভরসা করে দুলাল চন্দ্র সাঁতরার বইয়ের ওপর। যে বইয়ের কোনও বিকল্প নেই। ক্লাস সেভেন থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে এমনকী স্নাতক স্তরেও তাঁর লেখা বই অনুসরণ করে চলেছে ছাত্ররা। জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ডাক্তারি পড়তে ইচ্ছুক ছাত্রদের জন্যও বই লিখেছেন তিনি।
আর এই অভিশপ্ত বছরেই সমগ্র ছাত্রসমাজকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন জীববিদ্যায় ভরসা, ও নির্ভরতার অন্যতম মানুষ দুলালচন্দ্র সাঁতরা।নিজের কর্মযজ্ঞ ফেলে রেখেই চলে গেলেন কিংবদন্তি এই শিক্ষক, লেখক। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪। বুধবার সকালেই বেলভিউ নার্সিংহোমে প্রয়াত হয়েছেন তিনি।
স্কুলের শিক্ষকতার মেয়াদ শেষেও থেমে যায়নি তার কলম। বরং একের পর এক বই লিখে চলেছেন পড়ুয়াদের জন্য। নয়ের দশকের গোড়া থেকে আজ অবধি জীবনবিজ্ঞানের স্কুলপাঠ্য বই মানেই সাঁতরাবাবুর বই।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামেই ১৯৪৭ সালের ২০শে ডিসেম্বর জন্ম হয় দুলালচন্দ্র সাঁতরার। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা মেদিনীপুরের স্কুলেই। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য স্নাতক স্তরে কলকাতার সিটি কলেজে এসে ভর্তি হন। স্নাতকোত্তর করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর শুরু হয় তাঁর শিক্ষকতার জীবন। দীর্ঘ ৩৩ বছরের শিক্ষকতার জীবনে চারটি ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর থিতু হন মধ্যমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুল থেকেই ২০০৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন সকলের প্রিয় সাঁতরা স্যার। আর ২০২০ সালে এসে ছাত্র সমাজ থেকে চিরকালের মতো অবসর নিলেন সাঁতরাবাবু। রেখে গেলেন অজস্র স্মৃতি। সমৃদ্ধ করে গেলেন বাংলার শিক্ষা সমাজকে।