স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গান্ধীজিরপক্ষে ছিল সঙ্ঘ

নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধের (১৮ মে, ২০১৪) শিরোনাম ছিল—‘ইন্ডিয়া: এনাদার ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি’। ‘ভারত থেকে ইংরেজের শাসন এতদিনে পাকাপাকি ভাবে বিদায় নিল’—এরকমই একটা কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল লেখাটি। মোদির জয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতকাল ক্ষমতার কাঠামো উপমহাদেশের সাবেক ইংরেজ শাসনের থেকে বিশেষ পরিবর্তিত হয়নি। ভারতের মানুষ পূর্বপুরুষদের মতোই হাতে গোনা কিছু ইংরেজি জানা শাসকের অধীনে ছিলেন, যাঁরা জনগণের প্রতি কখনও উদার হয়েছেন আবার কখনও শোষণ করেছেন। কিন্তু কখনওই দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেননি। ওই সম্পাদকীয়তে এই বক্তব্যেরই উদাহরণ-সহ বিস্তৃত ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। বিশ্লেষণের অনেকটাই ঠিক। প্রায় সার্ধশত কোটি মানুষের শাসনের যে বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়েছিল, তাতে যেমন কংগ্রেসের রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন, একশ্রেণীর কর্তাভজা আমলা ছিলেন, বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ছিলেন, সংবাদ মাধ্যমের কিছু অতিবামপন্থী কর্তাব্যক্তি ছিলেন। তেমনই ছিলেন কর না-দেওয়া ধনকুবেররাও। ‘কলোনিয়াল হ্যাংওভার’ সাত সাতটা দশক ধরে টিকিয়ে রাখতে এঁদের মতাদর্শগত বিভেদ কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এই বাস্তুতন্ত্রে কুঠারাঘাত করেছেন মোদি। আর শৈশবে স্টেশনে ছুটে ছুটে চা ফেরি করে ফেরা ছেলেটিকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে একটি সংগঠন, রাষ্টীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। তাই বিরোধীদের আসল শত্রু হল আরএসএস।
কিন্তু শত্রুর সমালোচনা করার আগে তাকে ঠিকমত জানতে হয়। তা না-হলে সেটা নিছক বিষোদগার হয়ে ওঠে। যেমন কেউ যদি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের তীব্র বিরোধিতা করেছিল সঙ্ঘ পরিবার’! সেটা অর্থহীন। আজ প্রচার মাধ্যম যাকে বলে ‘সঙ্ঘ পরিবার’, মানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা ভারতীয় জনতা পার্টি এমন বহু সমমনোভাবাপন্ন সংগঠনের যে সমষ্টি তার কোনও অস্তিত্বই পরাধীন ভারতে ছিল না। সঙ্ঘের পরিভাষায় এইসব বিবিধ সংগঠনের জন্ম স্বাধীনতার পরেই। পরাধীন ভারতে কেবল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ আর রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি নামে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ছিল। সে দু’টিই সামাজিক ছিল এবং নীতিগতভাবে রাজনৈতিক গতিবিধি থেকে সংগঠনকে দূরে রাখা হয়েছিল।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘‘হে ভারত এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা; এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা; এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করিবে? এই লজ্জাকর কাপুরুষতা সহায়ে তুমি বীরভোগ্যা স্বাধীনতা লাভ করিবে?” ইংরেজের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সঙ্গে সমধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল সমাজের আমূল সংস্কার। রামকৃষ্ণ মিশনের মতো কিছু সংগঠন সেই কাজকেই নিজেদের ব্রত করে নিয়েছিল। ইংরেজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাত এই সমাজ গঠনের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, সেই ভাবনা থেকেই রাজিনীতি থেকে দূরে থাকা। ভগিনী নিবেদিতার সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সংস্পর্শ ছিল, তাই তিনি ১৯০২ সালের ২৮ জুলাই ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য় বিজ্ঞাপন দিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন ত্যাগ করেছিলেন। তার মানে কি এই দাঁড়ায় যে, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের তীব্র বিরোধিতা করেছিল মিশন?’ বরং উলটো কথাটাই সত্যি। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা বিপ্লবীদের বুকে স্বাধীনতার আগুন জ্বালাত। সেইসঙ্গে ভারতে বা বাইরে সর্বত্রই মিশন হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অন্যতম প্রেরণাস্থল। সঙ্ঘও তেমনভাবেই সাংগঠনিভাবেভাবে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কার্যকলাপের থেকে দূরে থেকেও স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার কলকাতায় ডাক্তারি পড়তে এসেছিলেন। অগ্নিয়ুগে এখানে তিনিও স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যান। পুলিনবিহারী দাসের অনুশীলন সমিতির তিনি ছিলেন সক্রিয় সদস্য। শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’-এ দামোদর নদের বন্যায় রামকৃষ্ণ মিশনের সেবাকাজে হেডগেওয়ার কীভাবে দিনরাত এক করে কাজ করেছিলেন সেই বর্ণনা করেছেন। কলকাতা ছাড়ার সময় হেডগেওয়ার বাংলা আর মধ্য ভারতের বিপ্লবীদের মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন। বিপ্লবী মহলে তাঁর গোপন নাম ছিল ‘কোকেন’। ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর মতো বহু শসস্ত্র বিপ্লবীর সঙ্গে তাঁর নিত্য সম্পর্ক ছিল।
নাগপুরে ফিরে গিয়ে হেডগেওয়ার কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য হিসাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন। হেডগেওয়ার তিলকের একান্ত অনুগামী ছিলেন। গান্ধীজির আহ্বানে সাড়া দিয়ে হেডগেওয়ার ১৯২১ সালে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং উত্তেজক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। হেডগেওয়ার আদালতে কোনও উকিল নিতে চাননি। আদালতে জমা দেওয়া তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনের বয়ান শুনে বিচারক স্মেলি বলেন, “আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য অভিযুক্তের মূল বক্তব্যের থেকেও বেশি রাষ্ট্রবিরোধী”। আদালত তাঁকে মুচলেকা দিয়ে জামিন নিতে বলেন। কিন্তু উত্তরে হেডগেওয়ার যা বলেন তাতে তাঁর একবছরের কারাদণ্ড হয়। ১৯২২ সালে মহাত্মা গান্ধীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হেডগেওয়ার তাঁকে ‘পূজ্যপুরুষ’ সম্বোধন করেন। তিনি বলেছিলেন, গান্ধীজির কথায় ও কাজে কোনও পার্থক্য নেই। সেদিনের খদ্দরের পোশাক আর গান্ধী টুপি পরা যুবকটিই আরএসএস প্রতিষ্ঠা করলেন। ১৯২৫ সালের সেপ্টেম্বরে। তবু স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ আব্যহত ছিল। ১৯৩০ সালে গান্ধীজির ডাকা জঙ্গল সত্যাগ্রহে হেডগেওয়ার যোগ দেন। ’২৯ সালে কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজের ডাকে সাড়া দিয়ে সঙ্ঘের প্রতিটি শাখায় ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালিত হয়। সেই বছর ২১ জানুয়ারি এক চিঠিতে হেডগেওয়ার নির্দেশ পাঠালেন, “কংগ্রেস ঘোষণা করেছে যে পূর্ণস্বরাজ আমাদের লক্ষ্য আর কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি ২৬ জানুয়ারি দেশজুড়ে ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সকলের পরম আনন্দের বিষয় সর্বভারতীয় জাতীয় সমিতি স্বাধীনতার লক্ষ্যের খুবই নিকটে পৌঁছে গিয়েছে।’’
১৯৩০-এ লবন সত্যাগ্রহেও হেডগেওয়ার অংশ নেন। গান্ধীজির নেতৃত্বে চলা স্বাধীনতা সংগ্রামের সামাজিক সংগঠন হিসাবে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন স্বয়ংসেবকরা। এত কিছুর পরেও সঙ্ঘ প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশ নেয়নি। কারণ তার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজ সংস্কার ও দেশভক্ত মানুষ তৈরি করা। কেবল কংগ্রেসের নয়, হিন্দু মহাসভার আন্দোলনাত্মক কর্মসূচিকেও সঙ্ঘ সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছে। সঙ্ঘের সরল লোকসংগ্রহ পদ্ধতি বা নির্বিরোধ লাঠিখেলা ইত্যাদির মাধ্যমে লোকসংস্কারের রীতিকে বীর সাভারকারের মতো চরমপন্থী নেতারা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতেন। কিন্তু তাঁরাও সঙ্ঘের আন্তরিক ডাক ফেরাতে পারতেন না। এসব কারণে পুনের একসময়ের সঙ্ঘ অনুরাগী ও পরে হিন্দু মহাসভার কার্যকর্তা নাথুরাম বিনায়ক গডসে আরএসএসের প্রত্যক্ষ সমালোচনা করেন এবং স্বয়ংসেবকদের কাপুরুষ ইত্যাদি বলা শুরু করেন। এসবের উত্তরে পুনের সঙ্ঘচালক ভাওরাও দেশমুখ ৮ এপ্রিল, ১৯৪০ লিখিতভাবে জানান, “প্রথমত, আমি এইসব বিদ্বেষপরায়ণ মতিত্বের জন্য বলতে চাই যে, আরএসএস হিন্দুদের কোনও সামরিক বাহিনী নয় বা হিন্দু মহাসভার জঙ্গি শাখাও নয়। সঙ্ঘ কেবল প্রতিটি হিন্দুকে জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ করতে চায়…”
১৯৩৪ সালে ওয়ার্ধায় সঙ্ঘের এক বড় শিক্ষা শিবির চলছিল। গান্ধীজি দেখতে গেলেন। ডাক্তারজি ছিলেন না। গান্ধীজির সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। আরএসএসের কাজকর্ম নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলেন। সঙ্ঘের এই দর্শন গান্ধীজিকে মুগ্ধ করেছিল—বিশেষত সঙ্ঘের অনুশাসন আর জাতিভেদের বিরুদ্ধে সাফল্য।
‘আরএসএস ১৯৪২ সালে গান্ধীজির ডাকা ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করেছিল’—এটি সত্যের অপলাপ। আজ সঙ্ঘ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন। কিন্তু ১৯৪২ সালে সারা ভারতে সঙ্ঘের বিরাট শক্তি ছিল না। তবুও সাধ্যমতো স্বয়ংসেবকরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪২ সালে চিমুরে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল আরএসএস। সঙ্ঘের চিমুর শাখার মুখ্যশিক্ষক দাদা নায়েককে ইংরেজ মৃত্যুদণ্ড দেয়। হিন্দু মহাসভার এন বি খারে বিষয়টি নিয়ে আদালতে সবরকম সহযোগিতা করেন। ওখানেই আন্দোলন চলাকালে আর এক স্বয়ংসেবক রামদাস রামপুরেকে পুলিস গুলি করে মারে।
‘ব্রিটিশ পুলিস আরএসএসের আচরণে যথেষ্ট সন্তোষ প্রকাশ করেছিল’-এটি নির্জলা অসত্য। ইংরেজের গোয়েন্দা রিপোর্ট, ২৭ এপ্রিল, ১৯৪২, গুরুজি মাধব সদাশিব গোলওয়ালকারের সঙ্ঘ শিবিরে দেওয়া ভাষণের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘যারা স্বার্থপরের মতো এইসময়ে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা করছে গোলওয়ালকার তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেন।’ সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিব গোলওয়ালকারের আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। প্যাটেল গোলওয়ালকারকে অনুরোধ করলেন মহারাজ হরি সিংকে ভারতের পক্ষে রাজি করাতে। ১৯৪৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দিল্লি থেকে গোলওয়ালকর কাশ্মীরে পৌঁছলেন। ১৮ অক্টোবর হরি সিংহের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রস্তাবে রাজি হলেন রাজা। তাই গান্ধীহত্যার মিথ্যা অভিযোগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ করাতে প্যাটেল কষ্টই পেয়েছিলেন।
সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ করা, গুরুজির মতো দেশবরেণ্য মানুষকে গ্রেপ্তার, সারা দেশের হাজার হাজার স্বয়ংসেবককে কারান্তরালে নির্যাতনের ঘটনায় যারা আজও পৈশাচিক আমোদ প্রকাশ করেন, তাঁদের কতগুলি সত্য জেনে রাখা ভীষণ প্রয়োজন। ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ সালে নেহরু সরকার আরএসএসকে নিষিদ্ধ করল। গোলওয়ালকর গ্রেপ্তার হলেন কুখ্যাত ‘বেঙ্গল স্টেট প্রিজনার্স অ্যাক্ট’-এ। ভাগ্যের পরিহাস এই নেহেরুজি নিজেই একসময় একে ‘কালা কানুন’ বলেছিলেন। ১৯৬৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী আবার গান্ধীহত্যা নিয়ে তদন্ত কমিশন বসান। বিচারপতি জে এল কাপুরের নেতৃত্বে ওই কমিশন ১০১ জন সাক্ষী আর ৪০৭টি নথিপত্র দেখে রিপোর্ট দিল, গান্ধীজির হত্যাকারীরা আরএসএসের সদস্য নয়। ’৬৯-এ প্রকাশিত ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, গান্ধী হত্যা তো দূর, আরএসএসের কোনও নেতা গান্ধীজির বিরুদ্ধে কোনও প্ররোচনামূলক ভাষণও দেননি। ওই কমিশনকে দেওয়া বয়ানে আইএএস আর এল ব্যানার্জি বলেন, ‘‘গান্ধী হত্যার আগেও যদি আরএসএস নিষিদ্ধ হতো তাতেও কোনও লাভ হতো না, কারণ হত্যাকারীরা আরএসএসের সদস্য বলে প্রমাণ হয়নি, ওই সংগঠনেরও এই হত্যাকাণ্ডে কোনও হাত ছিল না।’’
স্বাধীনতার পরে আরএসএস গোঁসাঘরে ঢুকে যায়নি। যে লক্ষ লক্ষ নরনারী দেশভাগের জন্য নরকের জীবনযাপন করছিলেন স্বয়ংসেবকরা তাঁদের সেবা করতে ব্যস্ত ছিলেন। কোথাও কোথাও নিজেদের প্রাণ বাজি রেখে এই কাজ তাঁরা করেছিলেন। ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, স্বাধীনতার দিনে লাহোরের মাধব রাও মুলের মতো সঙ্ঘের প্রচারকেরা মানুষের জন্য কী করছিলেন। কলকাতাতেও তৈরি হয়েছিল ‘বাস্তুহারা সহায়তা সমিতি’। দিল্লির নেতারা যখন নতুন ক্ষমতার মধুভাণ্ডে লুটোপুটি খাচ্ছেন তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মন্ত্রিত্ব পায়ে ঠেলে দিয়ে শরণার্থীদের সেবার জন্য প্রাণপাত করছিলেন। গোলওয়ালকার বা শ্যামাপ্রসাদের মতো ক্রান্তদর্শীরা কোটি কোটি মানুষের জীবনে কী কষ্ট আসতে যাচ্ছে তা বুঝেছিলেন। ইংরেজকে কোনওমতে ভারত ছাড়া করে ক্ষমতা বাগিয়ে নিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে না, এটা তাঁরা বুঝেছিলেন। ’৪৬-এ নেহরুজি বলেছিলেন, “ইংরেজ চলে গেলে আর কোনও সাম্প্রদায়িক সমস্যা থাকবে না”।
কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, স্বাধীন ভারতের কাণ্ডারী হবেন সুভাষ আর শ্যামাপ্রসাদ। শ্যামাপ্রসাদের অক্লান্ত প্রয়াস না-থাকলে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ পাকিস্তানের অংশ হতো। কাশ্মীরের সম্পূর্ণ ভারতভুক্তির জন্য তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন। বাংলার এহেন মনীষীকে কোনও বাংলাভাষী যখন কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেন, তখন কবিগুরুর কণিকার ‘স্পর্ধা’ কবিতাটাই বারবার মনে আসে, “হাউই কহিল, মোর কি সাহস ভাই/ তারকার মুখে আমি দিয়ে আসি ছাই! কবি কহে, তাঁর গায়ে লাগে নাকো কিছু,/ সে ছাই ফিরিয়া আসে তোরি পিছু পিছু।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.