যত বার তিনি আসছেন তত বার নতুন নতুন ইস্যুতে আক্রমণ শানাচ্ছেন। আর শেষ বারে এসে জানিয়ে গেলেন বাংলার সমর্থন পেলে বিজেপি একাই ৩০০-র বেশি আসনে জিতবে। এনডিএ-র চেহারাটা হবে আরও অনেক শক্তিশালী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বঙ্গ বিজেপিকে চাঙ্গা করতে এমন আশা জাগানোর পাশাপাশি বললেন, রাজ্যের ফল এবার ইতিহাস মনে করাবে। জরুরি অবস্থার পরে ১৯৭৭ সালে যে ভাবে দেশের তো বটেই পশ্চিমবঙ্গের ফলও সব হিসেব গোলমাল করে দিয়েছিল, সেটা নাকি এবারও হতে চলেছে।
লোকসভা নির্বাচনের সাত দফায় নরেন্দ্র মোদী যতগুলি সভা করেছেন তাতে কমবেশি সব জায়গাতেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। একটা সময়ে এই ভিড়কেও ইস্যু করে নেন তিনি। বলতে থাকেন, দিদির মিটিংয়ে ভিড় নেই তাই দিদি হাঁটছেন। বলেন, মোদীর সভায় ভিড় দেখে ঘাবড়ে যাচ্ছেন দিদি।
শুধু মোদী নন, এর পরে দিলীপ ঘোষ থেকে মুকুল রায় গেরুয়া শিবিরের সবারই বক্তব্যে জায়গা করে নেয় ভিড় ইস্যু। বুধবার টাকি আর ডায়মন্ডহারবার পর পর মোদীর দুই সভাতেই সমাগম ভালো ছিল। আর সেই সমাগাম দেখেই মোদী বলেন, যত বার আসছি তত আশা বাড়ছে। তত প্রেরণা বাড়ছে। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, এই রাজ্যে এবার জরুরি অবস্থার পরে যেমন ফল হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি হবে।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন থেকে ‘৭৭-এর ২১ মার্চ পর্যন্ত চলে জরুরি অবস্থা। এর পরেই ষষ্ঠ লোকসভা নির্বাচনে দেশে প্রথমবার অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন মোরারজি দেশাই। জনতা পার্টি একাই পেয়েছিল ২৯৮টি আসন। আর জনতা জোট পায় ৩৪৫টি। স্বাধীনতার পর থেকে টানা শাসনে থাকা কংগ্রেসের আসন কমে হয়ে যায় ১৫৩।
ইন্দিরা গান্ধী বিরোধী ঢেউ আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গেও। ৪২ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পায় মাত্র তিনটি। জনতা জোটের দখলে যায় ৩৮টি। নির্দল পায় একটি। নরেন্দ্র মোদীর দাবি, এবার সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বঙ্গে। তাঁর কথায় ভেঙে যাতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অহঙ্কার’।
এই রাজ্যে শাসককে চমকে দেওয়া ফল দেখেছে ২০০৯ সালে। একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পৌঁছে যায় ১৯টি আসনে। সেবার স্লোগান ছিল– ‘চুপ চাপ ফুলে ছাপ। এবারও সেই একই স্লোগানকে আরও একটু বড় করেছেন মোদী, ”চুপ চাপ কমল পে ছাপ, বুথ বুথ সে টিএমসি সাফ।” এদিও দুই জনসভায় সেই স্লোগান তুলেছেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে গেরুয়া গর্জন বর্ষণের রূপ নেয় কিনা তার জন্য অপেক্ষা থাকবে ২৩ মে পর্যন্ত।