অপেক্ষার অবসান! ২ নভেম্বরই চালু হতে পারে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন, দাবি গবেষকদের

করোনার (CoronaVirus) সঙ্গে লড়তে কে সবার আগে ভ‌্যাকসিন আনতে পারে? প্রাণঘাতী ভাইরাসকে রুখতে কোন দেশের ওষুধ কাজ করবে সবার আগে? তা নিয়ে গত কয়েক মাসে লড়াই চলছে দেশ বনাম দেশের। এই লড়াইতে বরাবর এগিয়ে ছিল অক্সফোর্ডের (Oxford) ‌‌ভ‌্যাকসিন। সোমবার যখন গোটা ভারত করোনার বিনাশ চেয়ে উমা মাকে বিদায় জানাচ্ছিল, তখনই এল সুখবর। অক্সফোর্ডের ভ‌্যাকসিন আগামী ২ নভেম্বর থেকে ব্রিটেনে সাধারণ মানুষকে দেওয়া শুরু হতে পারে। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ‌্যম খবর করেছে, লন্ডনের একটি বড় হাসপাতালকে ভ‌্যাকসিন দেওয়ার জন‌্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। লন্ডনের ওই হাসপাতালকে বলা হয়েছে, ২ নভেম্বর থেকেই ভ‌্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। ইংল‌্যান্ডে এখন করোনার দ্বিতীয় দফার ঢেউ চলছে। প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই কারণে ব্রিটিশ সরকার আর দেরি করতে চাইছে না। অক্সফোর্ড-অ‌্যাস্ট্রাজেনেকার ভ‌্যাকসিন মাঝে দু’দফা ধাক্কা খেলেও এটা প্রবীণ ও শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না। এমনই রিপোর্ট মিলছে আপাতত। ফলে মারণ ভাইরাসকে রুখে দেওয়ার একটা আশার আলো দেখা গিয়েছে।

ঘাতক ভাইরাসের (COVID-19) ধরন বের করতে গিয়ে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা যা দেখেছেন তা হল, করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপদ প্রবীণদের। সঙ্গে কো-মর্বিডিটি থাকলে প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে কোভিড। কিন্তু এই প্রবীণদের উপরেই দারুণ ভাল কাজ করছে অক্সফোর্ডের টিকা। ইতিমধ্যেই যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের উপর এই টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল‌্য মিলেছে বলে দাবি করা হয়েছে। এমনকী ইয়ং অ‌্যাডাল্টস, অর্থাৎ কিশোর-কিশোরীদের উপরেও ভাল ফল দেখাচ্ছে এই ভ‌্যাকসিন। ফলে রাতারাতি পাশার দান পালটে দিতে পারে এই টিকা, এমনই আশা করছেন চিকিৎসক-গবেষক সকলেই।

অন্যদিকে অক্সফোর্ড সূত্রেও খবর, নভেম্বরের গোড়াতেই সাধারণ মানুষকে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যেতে পারে ব্রিটেনে। সেই কারণে একটি হাসপাতালকে শুধুমাত্র টিকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করে রাখার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। অক্সফোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে কোভিড টিকা তৈরির কাজ করছে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা (AstraZeneca)। সারা বিশ্বে টিকা তৈরির দৌড়ে সবচেয়ে আগে রয়েছে এই টিকা। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ ধাপের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর।

টিকার কাজে যুক্ত দু’জনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এই ফলাফলে উৎসাহিত অক্সফোর্ডের গবেষকরা। করোনা আক্রান্ত প্রবীণদের এই টিকা দিলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাচ্ছে বলে দাবি। তবে এটা প্রাথমিক
ফলাফল। এর সমর্থনে আরও জোরালো তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। খুব শীঘ্রই বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকায় এই সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়নি অক্সফোর্ডের এই টিকা। কিছুদিন আগেই অক্সফোর্ডের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় ব্রিটেনে এক ভলান্টিয়ারের অজানা রোগ দেখা দেওয়ায় সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল এই টিকার পরীক্ষা-প্রক্রিয়া। তবে কয়েক দিন পরেই ফের চালু হয় ট্রায়াল। জুন মাসের রিপোর্ট বলেছে, ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের উপর ভাল কাজ করছে অক্সফোর্ডের টিকা। জুলাই মাসে তাঁদের শরীর থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয় তাতে ‘বিপুল অন‌াক্রম‌্যতা বৃদ্ধির’ ইঙ্গিত মিলেছে বলে সংস্থার তরফে দাবি হয়েছে।

এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ব্রাজিলে এই ভ‌্যাকসিনেরই এক স্বেচ্ছাসেবকের মৃত‌্যু হয়। তবে সেই মৃত‌্যুর সঙ্গে সরাসরি ওই ভ‌্যাকসিনের যোগ রয়েছে কি না সে বিষয়ে সঠিক তথ‌্য মেলেনি। ফলে বন্ধ হয়নি ট্রায়াল প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে আশার আলো ভ‌্যাকসিন-গবেষকদের তরফে। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে সহস্রাব্দের সবচেয়ে কঠিন অতিমারীর মোকাবিলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.