নিষিদ্ধ শোভাযাত্রা, আড়ম্বর ছাড়াই দশমীতে মণ্ডপ থেকে সরাসরি ঘাটে যাবে দেবী প্রতিমা

আজ দশমীতে চোখের জলে বিদায় নেবেন উমা। তাতে থাকবে না কোনও আড়ম্বর। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা সরাসরি চলে যাবে ঘাটে। মা দুর্গা ও তাঁর ছেলেমেয়েদের সামনে বাজবে না ব্যান্ডপার্টি। প্রদীপ হাতে নিয়ে লাইন দিয়ে যাবে না পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে সব রকমের শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। এবার প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে নির্ধারিত দিন ও সময় মেনে, এমনই নির্দেশ পুলিশের।

পুজো (Durga Puja 2020) শুরু হওয়ার অনেক আগেই পুজো কমিটিগুলিকে বিসর্জন সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে পালটে গিয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের পদ্ধতি। কলকাতা পুলিশের আওতায় ২৪টি মূল ঘাট-সহ মোট ৩০টি ঘাটে বিসর্জন দেওয়া যায়। মূল ঘাটগুলির মধ্যে রাজাবাগান, নাদিয়াল, গার্ডেনরিচ এলাকায় একটি করে, দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকায় তিনটি ও উত্তর বন্দর এলাকায় ১৮টিতে বিসর্জন দেওয়া যায়। এ ছাড়াও রয়েছে ছ’টি ছোট ঘাট, সেখানও দেওয়া যেতে পারে বিসর্জন। শহরের নির্ধারিত কোনও সরোবর বা পুকুরেও বিসর্জন দিতে পারেন কোনও পুজো উদ্যোক্তা। যদিও বারোয়ারি পুজোর ক্ষেত্রে মূলত গঙ্গায় বিসর্জন পরিকল্পনা করা হয়। এই বছর দশমীতে দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী পুজো কমিটি বিসর্জনের জন্য নিজেদের এলাকায় একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরি করেছে। সেখানে প্রতিমা রেখে জলের জেট স্প্রে করে নিরঞ্জনের ব্যবস্থা করেছে ওই পুজো কমিটি। আগেই লালবাজার উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দিয়েছে, এই বছর প্রতিমা বিসর্জনের সময় কোনও শোভাযাত্রা করা চলবে না। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা লরি বা ট্রেলারে তুলতে হবে। সরাসরি তা নিয়ে যেতে হবে বিসর্জন ঘাটে।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর পর্যন্ত কলকাতায় কার্নিভাল ছাড়াও বহু পুজো কমিটি নিজেদের উদ্যোগে বড় শোভাযাত্রা বের করেছিল। এই বছর পুজোর অনুমতি নেওয়ার সময় প্রত্যেকটি পুজো কমিটিকে পুলিশ জানিয়ে দেয় যে, কে, কখন, কোন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দিতে পারবে। ফলে পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী, উদ্যোক্তাদের নির্ধারিত দিন ও সময়ে নির্দিষ্ট ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রত্যেকটি থানার আধিকারিকরা নিজেরাও খোঁজখবর নিয়েছেন, তাঁদের এলাকার কোন প্রতিমা কবে ও কখন বিসর্জনের জন্য বের হবে। পুজো উদ্যোক্তারা যাতে কোনও শোভাযাত্রা না করেন, সেদিকে নজর থাকবে পুলিশের। এ ছাড়াও পুলিশের বিশেষ নজর থাকবে ডিজের উপর। সাধারণভাবে বিসর্জনের সময় ডিজে নিষিদ্ধ। তবুও চলন্ত গাড়িতে ডিজে বাজিয়ে রাস্তায় শোভাযাত্রা বের করেন কিছু পুজো উদ্যোক্তা। এই ডিজে একদিকে যেমন শব্দ দূষণ তৈরি করে, অন্যদিকে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। তাই কেউ যাতে অল্প সময়ের জন্যও ডিজে বের না করে সেদিকেও থাকবে পুলিশের নজর।

পুলিশ উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দিয়েছে, খুব কম সংখ্যক পুজো কমিটির সদস্য মালবাহী গাড়ির সঙ্গে বিসর্জন ঘাটে যেতে পারবেন। দশমীর দুপুর থেকেই প্রত্যেকটি ঘাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে। কারণ বাড়ির পুজোগুলি দশমীর বিকেলের পর থেকেই বিসর্জন দেওয়া শুরু করে। এ ছাড়াও এদিনই বিসর্জন হয় বেশ কিছু বারোয়ারি পুজো প্রতিমা। লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, ৩০টি ঘাটেই মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত সংখ্যক ডিএমজি কর্মী ও ডুবুরিরা। প্রত্যেকটি ঘাটে থাকবে নৌকা। যদি কোনও অঘটন ঘটে অথবা কাউকে ভেসে যেতে দেখা যায়, সঙ্গে সঙ্গে ডিএমজি কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করবেন। স্থানীয় মাঝিদের সাহায্য নেওয়া হবে। একই সঙ্গে এই চারদিন ওয়াটার জেট স্কি ও স্পিডবোটে জলপুলিশ গঙ্গাজুড়ে টহল দেবে বলে জানিয়েছে লালবাজার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.