সম্প্রতি ফ্রান্সের শিক্ষক-হত্যাকান্ডের হত্যাকারির পাশে দাঁড়ালো ‘মুসলিম পন্ডিত’-দের সংগঠন।যাঁরা বিশ্বব্যাপী শিক্ষাজীবী মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করে।শুধু দাঁড়ানোই নয়,হত্যাকারি যে সর্বতো ভাবে ঠিক কাজ করেছে,দরাজ গলায় তার প্রশংসাও করেছে।’দ্য অর্গানাইজার’ ডিজিটাল সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মুসলিম পন্ডিতদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে,’চেচেন শিক্ষার্থীর উচিৎ ছিল মুসলিম শরিহা আদালতের অনুমতি নিয়ে হজরত মহম্মদের অবমাননাকারিকে হত্যা করা।’
উল্লেখ্য যে,দিন কয়েক আগে জনৈক ফরাসি ইতিহাস শিক্ষক শ্রেনিকক্ষে মহম্মদের একটি বিকৃত ছবি দেখান বলে অভিযোগ ওঠে।এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুসলিমদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই দিনের বেলায় বিদ্যালয়ের সামনেই অভিযুক্ত শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে এক চেচেন-শিক্ষার্থী ধড়-মুন্ড আলাদা করে হত্যা করে।এই অতি ভয়ংকর দৃশ্য দেখে সারা বিশ্ব কেঁপে ওঠে।সংবেদনশীলগণ ব্যথিত হন।আর এই জঘন্য হত্যাকারিকেই সমর্থন করল মুসলিম পন্ডিতরা!এবং এই হত্যাকান্ডকে তারা ‘যথেষ্ট স্বাভাবিক’ বলেই মনে করে।সেই সাথে এটাও মনে করে যে,”নবী মহম্মদের অপমানকারিকে হত্যা করা তেমন ‘গুরুতর বিষয়’ নয়।এই প্রসঙ্গে অনেকেরই মনে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কথা।রাজ্যে পার্কস্ট্রীট বা কামদুনি ধর্ষণ কান্ড হোক,যে-কোনো শিহরণ জাগানো অপরাধ ঘটুক-না কেন তিনি সেগুলিকে ‘সাজানো ঘটনা’ কখনো-রা ‘দুষ্টু’ ছেলেদেএ কাজ বলে থাকেন!অথচ এই সব অতি জঘন্য ঘটনাগুলো রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত করে তোলে।মুখ্যমন্ত্রী অতি কাছের বন্ধুও বলতে পারবেন কিনা সন্দেহ যে,মুখ্যমন্ত্রীকে কোনো অপরাধীকে ধরার জন্য,কড়া শাস্তির জন্য পুলিসকে নির্দেশ দিয়েছেন!
মাস কয়েক আগে আমেরিকায় এক কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে পুলিস রাস্তার উপরেই গলা চেপে ধরে।তাতে তিনি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান।মৃত্যুর আগে তিনি পুলিসকে অনুরোধ করলেও তারা কথা শোনেনি।এই ঘটনা আমেরিকা জুড়ে বিপুল বিক্ষোভ শুরু হয়।লাগাতর আন্দোলন চলে।এই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয় ‘ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার’।এই আন্দোলনের ধাঁচেই ইদানিং শুরু হয়েছে ‘মুসলিম লাইভস্ ম্যাটার’।ব্ল্যাক লাইভ নিয়ে ভারতীয় বামজীবীরা জর্জ ফ্লয়েডকে নিয়ে সোচ্চার হলেও বেচারা স্যামুয়েল প্যাটিকে নিয়ে নীরব!
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলার সংগঠনের প্রধান শেখ আলি আল ইউসুপ একটি তুর্কি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেবার সময়ে বলেন,”নবী মহম্মদের অবমাননাকারির শাস্তি হল মৃত্যু।কোনো মুসলিম দেশের আদালত এই রায়ই দেয়।চেচেন ছাত্রটি সেই কাজ করে কোনো গুরুতর অপরাধ করেনি।’
আল ইউসুপের মতে, “ফ্রান্স-সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে মুসলিমদের উত্থান স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছে।কেন না,ইসলামের ‘উদারপন্থী নীতি আদর্শ’র জন্যই এটা সম্ভব হচ্ছে।আর সে-কারণেই মুসলিম,ইসলামের উপর আক্রমণ নেমে আসছে। বিশেষত নবী মহম্মদেরকে অপমান করা হচ্ছে।এটা কাঁচের মতো স্বচ্ছ যে,এটা ইসলামোফোবিয়া।”
তিনি আরও বলেন,”উত্তরোত্তর মুসলিম উপর আক্রমণের পটভূমি অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছে।ফ্যান্সে ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানগত ভাবে এটা বিগত কয়েক বছর ধরেই হয়ে চলেছে।পশ্চিমী দেশগুলিতে এটা বেশি দেখা যাচ্ছে যে,দেশের সরকারগুলিরও এ-বিষয়ে সমর্থন রয়েছে।এবং শরিহা অনুসারে মহম্মদের অবমাননাকারির মৃত্যুই প্রাপ্য।”
কৌতূহলজনক বিষয় হল যে,বিশিষ্ট কাতারি পন্ডিত আব্দ আল-আজিজ আল-খাজরাজ আল-আন্সারি স্যামুয়েল প্যাটি হত্যা প্রসঙ্গে বলেছেন “এই ঘটনা ফ্যান্সের রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সে-দেশের গোয়ান্দা বাহিনি করেছে মুসলিমদের বদনাম করার জন্যই।তিনি আরও বলেছেন,”নবী মহম্মদের অপমানে কাউকে ছুরিকাঘাতে হত্যা একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।রাষ্ট্রপতি নিশ্চয়ই বলবেন,তাঁর দেশের বাক্ স্বাধীনতা খুবই বোকা।”
ফ্রান্সের মুসলিম থিয়োলজিক্যাল কাউন্সিলের ইমাম হাসান এল-হাউয়ারি বলেছেন,“ফ্যান্সে জঙ্গিবাদ কোনো মসজিদ থেকে আসেনি।এসেছে ফ্রান্সের সরকারি বিদ্যালয়গুলি থেকেই!”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,বছর কয়েক আগে বিশ্বখ্যাত 'শার্লি হেব্দো' পত্রিকার দপ্তরে হামলা চালায় মুসলিম জঙ্গিরা।পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে,তারা নাকি মহম্মদের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল।এই হামলা ছিল সেই 'অপরাধ'-এরই 'সুবিচার'!হামলায় 'শার্লি' সম্পাদক-সাংবাদিক ও অন্যান্য অনেক কর্মি নিহত হন।তারপর থেকে পত্রিকাটি একটি গোপন জায়গা থেকে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।একই অভিযোগে মাস কয়েক আগে 'শার্লি'-র পুরানো ভবনে আবারও আক্রমণ চালায় জঙ্গিরা।কিন্তু জঙ্গিরা জানত না যে পত্রিকা সংশ্লিষ্ট ভবন থেকে প্রকাশিত হয় না।ফলে নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়।ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি দিন কয়েক আগে মোক্ষম একটি কথা বলেছেন যে,"বিশ্বের সব অশান্তির মূলেই মুসলমানরা।"যা অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধান দ্ব্যর্থহীন ভাবে আর বলেন নি।
সুজিত চক্রবর্তী।
ঋণ : দ্য অর্গানাইজার।