করোনাভাইরাস অতিমারি পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজো! কিন্তু, মন ভালো নেই কারও। এই পরিস্থিতিতে মহাষষ্ঠীর সকালে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে বিজেপি আয়োজিত দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাচ এবং বাবুল সুপ্রিয়র গান দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তার পর বক্তৃতা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অনলাইন অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাচের অনুষ্ঠান। এরপর রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে দুর্গাপুজোর আবহ তৈরি করে দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে শঙ্খধ্বনি সহযোগে স্বাগত জানানো হয়। পালটা নমস্কার জানান প্রধানমন্ত্রীও। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উদ্দেশে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমেই আপনাদের সকলকে জানাই শ্রীশ্রী দুর্গাপুজো ও শ্রীশ্রী কালীপুজো এবং দীপাবলি উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। মা দুর্গার শক্তি এবং বাংলার মানুষের ভক্তি দেখে আমার মনে হচ্ছে যে আমি বাংলার পুণ্য ভূমিতেই যেন আছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে, দিল্লি নয় কলকাতায় আছি। পুজোর সময় গোটা দেশ বাংলাময় হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, দুর্গাপুজো শুধুমাত্র বাঙালির নয়, সমগ্র ভারতবাসীর উৎসব। এই শুভ দিনে বাংলার মনীষীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজা রাম মোহন রায়, ঈশ্বরচবন্দ্র বিদ্যাসাগর, স্বামী বিবেকানন্দ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, উত্তমকুমারের নাম স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলার মানুষ বরাবরই বুদ্ধিজীবী এবং দেশকে গর্বিত করে তুলেছে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে তাঁরা ভারতকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই করোনা প্রকোপের মাঝে দুর্গাপুজোর মতো বিশালাকারের উৎসবে বাংলার মানুষ প্রবল সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটাই বাংলার চেতনার প্রকাশ, বাংলার মননের পরিচায়ক। এই উন্মাদনা বাংলার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাবধান করে দিয়ে বলেন, পুজোর আনন্দে মাতুন মাস্ক ব্যবহার করুন ও সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় বরাবর সনাতন ধর্ম পরম্পরা বজায় রয়েছে। বাংলার মানুষ চিরকাল দুর্গাকে নিজের কন্যারূপে দেখেছেন। নিজের বাড়িতে তাঁকে মেয়ের মতো সম্মান ও আদরযত্ন করেছেন। নবরাত্রিতে তাঁর পুজো করেছেন। মা দুর্গার পুজো সাক্ষাৎ শক্তির সাধনা। তিনি দুর্গতিনাশিনী। সমস্ত বিপদ থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করেন। মহিষাসুরের দলন যেমন তিনি করেন, তেমনই এই অতিমারী থেকেও আমাদের তিনিই রক্ষা করার শক্তি জোগাবেন।’
বাংলার জনগণের সুবিধার জন্য কেন্দ্রে কাজের কথা উল্লেখও ষষ্ঠীর অনুষ্ঠানে তিনি করেছেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ কবিতাটি দু’কলি পাঠ করে তিনি। আত্মনির্ভর ভারতের পাশাপাশি সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য শেষ করার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিশেষে মা দুর্গা ও মা কালীর কাছে প্রার্থনা করি যেন প্রতি বছর আমরা এই ভাবে মায়ের পুজো ও প্রার্থনা করে যেতে পারি। আমি জানি, আমার বাংলা উচ্চারণে খামতি রয়ে গিয়েছে। তবু বাংলা ভাষার টানেই আমি তা বলার চেষ্টা করি। ভুল হয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করবেন। জয় মা দুর্গা! জয় মা কালী!’