পুজো কমিটিকে রাজ্য সরকারের অনুদান দেওয়া নিয়ে মামলা হয়েছিল হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে। আদালত সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিল, পুজো কমিটিগুলোকে টাকা দেওয়ার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই তো!
হাইকোর্টের এদিনের পর্যবেক্ষণ শুনে মামলাকারী দুর্গাপুরের সিটু নেতা সৌরভ দত্ত বলেন,
“আমরা তাকিয়ে রয়েছি মূল সাংবিধানিক প্রশ্নের দিকে। যে, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও সরকার ধর্মীয় উৎসবের পিছনে টাকা খরচ করতে পারে কিনা।” প্রসঙ্গত এদিনের শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকার কি শুধু দুর্গাপুজোর জন্যই টাকা খরচ করছে? নাকি ইদেও দিয়েছিল?
এদিন শুনানিতে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে যে যে প্রশ্ন করেছেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেগুলি হল-
১) সরকার কি শুধু দুর্গাপুজোতেই অনুদান দেয়? নাকি অন্য উৎসবেও দেওয়া হয়? ইদেও কি দেওয়া হয়েছিল? দুর্গাপুজো নিয়ে আমরাও গর্বিত, কিন্তু তাই বলে কি যেভাবে ইচ্ছা টাকা দেওয়া যায়? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কি এই ভেদাভেদ করা যায়?
২) আপনারা (রাজ্য সরকার) বলছেন যে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে মাস্ক, স্যানিটাইজার কেনার জন্য। কিন্তু এগুলো তো সরকার নিজেই কেন্দ্রীয়ভাবে কিনে দিতে পারত। তাতে খরচ অনেক কম হত।
৩) যেখানে করোনা সংক্রমণের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে, সেখানে পুজোর অনুমতি কীভাবে দিল সরকার?
৪) কী কী সুরক্ষা বিধি মেনে চলছে সরকার?
৫) ভিড় নিয়ন্ত্রণের কী ব্লু-প্রিন্ট করা হয়েছে?
৬) সব কাজ যদি পুলিশ করে তাহলে পুজো কমিটিগুলোকে টাকা দেওয়ার কী যুক্তি? এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই তো?
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। একটা কথা বলব দুর্গাপুজো শুধু বাঙালি উৎসব নয়, এটা জাতীয় উৎসব। সমস্ত রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে দুর্গাপুজো হয় সেদিকে আমরা সবাই তাকিয়ে রয়েছি। দুর্গাপুজোতে সংক্রমণ যাতে না বারে তার জন্য সরকার যথেষ্ট সচেতন। ক্লাবগুলো সচেতন। সচেতনতার মধ্য দিয়ে দুর্গাপুজো হচ্ছে, হবে । এটাই স্বাভাবিক।”
২০১৮ সালে প্রথম পুজো কমিটিগুলিকে অনুদান দেওয়া শুরু করে রাজ্য সরকার। সেবার ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। গত বছর তা বাড়িয়ে করা হয় ২৫ হাজার। এবছর তা আরও বাড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। নেতাজি ইনডোর থেকে ঘোষণা করেন, ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
২০১৮ সালেও মামলা করেছিলেন সৌরভ দত্ত। সেই মামলায় হাইকোর্টে বয়ান বদল করে রাজ্য। জানায় যে, ট্রাফিক পুলিশের “সেফ ড্রাইভ- সেভ লাইফ” প্রকল্পে এই টাকা দিচ্ছে সরকার। অবশেষে, মামলায় স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। তারপর তা তুলেও নেওয়া হয়। এরপর সৌরভ দত্ত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। এখনও সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি শীর্ষ আদালতে।
বিরোধীদের অভিযোগ, একুশের ভোটের আগে সরকারি টাকায় খয়রাতি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেদের বক্তব্য, হিন্দুত্ব নিয়ে বিজেপির সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা চালাচ্ছে তৃণমূল সরকার। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, উনিশের লোকসভায় রাজ্যের সংখ্যাগুরু ভোটব্যাঙ্কের অনেকটাই চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে। সেটা ফিরে পেতেই মরিয়া শাসক দল। তাই এই খয়রাতি করা হচ্ছে।
আগামী কাল হাইকোর্টে ফের রয়েছে এই মামলার শুনানি। এখন দেখার হাইকোর্টের প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের তরফে কী বলা হয়।