সামাজিক প্রচারমাধ্যমের বিরূপ সমালোচনা ও নজির বিহীন আক্রমণের ফলে বিতর্কিত বিজ্ঞাপণ সরাতে তথা প্রচার বন্ধ করতে বাধ্য হল রত্ন-অলঙ্কার বিপণনী সংস্থা তানিস্ক।
কদিন পরেই দেশে শুরু হয়ে যাবে উৎসব ও বিয়ের মরশুম।এই সময়ে সব ধরণের নির্মাতা ও বিক্রেতা সংস্থাগুলি তাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ানোর জন্য নানা বিজ্ঞাপণ বানায়।প্রচার করে।প্রিন্ট মিডিয়া,ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া এমন-কি বর্তমানে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেই বিপণনী বিজ্ঞাপণগুলি ছড়িয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলি।এর জন্য তারা মোটা অঙ্কের অর্থও বরাদ্দ রাখে।এই বিজ্ঞাপণগুলির পুনঃপুনঃ প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষ আকৃষ্ট হয় পণ্যের প্রতি।তাদের মগজ ধোলাই চলে এই ভাবে।এবং সম্ভাব্য ক্রেতারা পণ্যের গুণাগুন,মূল্য ইত্যাদি সম্পর্কে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন!এমন-কি অন্যকেও তাঁরা প্রলুব্ধ করেন পণ্যটি সম্বন্ধে।হয়ত দ্বিতীয় ব্যক্তির আদৌ পছন্দ নয় পণ্যটি কিম্বা কোম্পানিকে।কিন্তু পরিচিত জনের প্ররোচনায় দ্বিতীয় ব্যক্তিও পণ্যটি হয়ত কিনে ফেলেন।
সুতরাং কোনো বিজ্ঞাপণই হঠাৎ বানানো হয় না।তার পিছনে নতুনত্ব আনয়ন,দীর্ঘদিনের চিন্তা,মূলধন,সম্ভাব্য ক্রেতাদের আর্থিক অবস্থা,সামাজিক রীতিনীতি,শিক্ষা-সংস্কার,ধর্মীয় ভাবাবেগ ইত্যাদি সবকিছুই কোম্পানির ভাবনায় থাকে।সর্বোপরি বিজ্ঞাপণগুলি দর্শক বা পাঠক বা শ্রোতার কাছে আকর্ষণীয় করেও তুলতে হয়।এর জন্য প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলি বিজ্ঞাপণ নির্মাতা সংস্থাকে নিয়োগ করেও থাকে।
বলা যায় যে,এতকিছু বিষয় মাথায় রেখে যে-বিজ্ঞাপণ বানানো হয় তা মোটেই আকস্মিক কোনো ব্যাপার নয়।
সম্প্রতি রত্ন-অলঙ্কার ব্যবসায়ী কোম্পানি তানিস্ক তাদের পণ্যের একটি বিজ্ঞাপণ ইউটিউব-সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচার শুরু করে।বিজ্ঞাপণে দেখানো হয়,তাদের নির্মিত অলঙ্কার পরে এক হিন্দু ধর্মালম্বী তরুণী এক মুসলমান তরুণকে বিয়ে করছেন!
এই বিজ্ঞাপণটিকে নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে বিতর্ক-সমালোচনার ঝড় ওঠে।কুড়ি হাজারের কাছাকাছি ট্যুইটার ব্যবহারকারি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ,ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতেও বিতর্কের সুনামি আছড়ে পড়ে।প্রত্যেকেই বলেন যে,এই বিজ্ঞাপণ ধর্মীয় বিষয়ে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করেছে।"লাভ জেহাদ" তথা জোরপূর্বক বিয়ে,প্রতারণা করে বা ভুলিয়ে বিয়ের ব্যাপারে মদত দিয়েছে এই বিজ্ঞাপণ।অনেকে এ-ও বলেন যে,মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাত করে হিন্দু তরুণীকে মুসলিম যুবককে বিয়ে করতে দেখিয়েছে তানিস্ক।শুধু তাই নয়,বিজ্ঞাপণের তরুণীকে গর্ভবতীও দেখিয়েছে তারা।এতে দেশের মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার পক্ষেও সওয়াল করেছে তানিস্ক--অনেকে এটাও উল্লেখ করেছেন।অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে,হিন্দু-প্রধান ভারতে একজন মুসলমান তরুণী হিন্দু যুবককে বিয়ে করে হিন্দু হয়েছে--এটাও তো বিজ্ঞাপণে দেখানো যেত!কিন্তু তানিস্ক সেটা করে নি।ফলে,পরিকল্পিত ভাবেই হিন্দু আবেগে আঘাত দিয়েছে তানিস্ক।বিষেশত যখন দিল্লিতে মুসলমান তরুণীকে ভালবাসার কারণে হিন্দু তরুণকে নৃসংশ ভাবে পিটিয়ে মেরেছে তরুণীর পরিবারের লোকেরা।
উল্লেখ্য যে,তানিস্কের প্রতিষ্ঠাতা টাইটান কোম্পানি।প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে।পরবর্তীতে তারা রত্ন-অলঙ্কার ব্যবসার দিকে ঝোঁকে।এবং টাটা গোষ্ঠী ও তামিলনাড়ু শিল্পোন্নয়ন নিগমের সাথে হাত মেলায়।১৯৯৬ সালে দেশে প্রথম স্টোরেজ খোলে তানিস্ক।বর্তমানে তারা বিশ্বব্যাপী ব্যবসা করে।হাজার হাজার শ্রমিক-কারিগর কাজ করেন তানিস্কের বিভিন্ন কারখানায়-শোরুমে।লক্ষ লক্ষ ক্রেতা তাঁদের উপর ভরসা রাখেন।প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মুনাফা করে তানিস্ক।
এই রকম একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষত টাটা গোষ্ঠী যেখানে জড়িয়ে আছে,তাদের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বিজ্ঞাপণের জন্য তাই সবাই ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত!বিশেষ এই সময়ে,যখন ভারতে "লাভ জেহাদ","জমি জেহাদ",সন্ত্রাসী কাজের উত্তোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া,হিন্দু নারীর গর্ভে মুসলমানের সন্তান উৎপাদনের জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চলেছে,বিভিন্ন মুসলিম জঙ্গি গোষ্ঠীর নিরন্তর ভাবে যখন ভারতে রক্তগঙ্গা বওয়াতে উদ্যোগী--সেই সময়ে তানিস্কের বিজ্ঞাপণ এই সব অপশক্তিকেই মদত যুগিয়েছে বলে ব্যাপক সংখ্যক নেটিজেন অভিযোগ তুলেছেন।শুধু অভিযোগ তুলেই তাঁরা ক্ষান্ত হন নি।পাশাপাশি তানিস্ককে সামগ্রিক ভাবেই বয়কট করার ডাক দিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই মুসলমান জঙ্গিদের "হিট তালিকা"-য় রয়েছে ভারত।বিশেষত পশ্চিম বাংলায় যেভাবে মুসলিমদের প্রতি নির্লজ্জ পক্ষপাত করে চলেছে মমতার তৃণমূল সরকার,তাতে হিন্দুদের অস্তিত্ব সংকট ঘটতে বেশি দেরি নেই।খাগড়াগড়,ধুলাগড়,বাদুরিয়া,বা আল কায়দা-যোগে মুর্শিদাবাদ থেকে ধরা পড়া মুসলিম যুবকরা--সবই পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের সাথে জুড়ে নেবার এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনারই অংশ।মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের কোনো মুসলিম দেশই আশ্রয় দেয় নি।অথচ পৃথিবীতে পঞ্চাশের বেশি মুসলমান দেশ রয়েছে।ভারত সরকারও তাদের আশ্রয় দিতে রাজি হয় নি।কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তোষণকারি তৃণমূলিরা এরাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রকাশ্যে ঢুকিয়েছে।ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতেরই একটি অঙ্গরাজ্যের শাসক ও শাসকদল সেই নিষেধাজ্ঞা মানে নি।এরা দেশের মধ্যে দুষ্কর্ম করছে।অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।জন বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে চলেছে।আর্থ-সামাজিক পরিবেশের পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তানিস্কের উস্কানিমূলক বিজ্ঞাপণ জনমানসের আতঙ্কে ঘৃতাহূতি দেয়।ফলে তাঁরা একযোগে রুষে ওঠেন।এবং তানিস্ক সেই বিজ্ঞাপণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
সুজিত চক্রবর্তী
(SUJIT CHAKRABORTY)