করোনা রুখতে ভিড় হলেই বন্ধ করা হবে প্রতিমা দর্শন, সিদ্ধান্ত কলকাতার এই ২ পুজো কমিটির

ভিড়ের লড়াই নয়বেশি ভিড় হলে বন্ধ হয়ে যাবে মণ্ডপ, করোনা (Coronavirus) আবহে এমনই সিদ্ধান্ত নিলেন বেশ কিছু পুজো উদ্যোক্তাসন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, দেশপ্রিয় পার্ক। উত্তর-দক্ষিণের দুই পুজোকর্তার সিদ্ধান্ত পাকা। “ভিড় যাতে বেশি না হয়, এবার সে কারণে আমরা ছোট্ট মণ্ডপ করেছি। তার পরেও যদি দেখি ভিড় বাড়ছে, আমরা মাইকে ঘোষণা করে গেট বন্ধ করে দেব”, জানিয়েছেন, দেশপ্রিয় পার্কের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্তকুমার। একই মত সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের সম্পাদক সজল ঘোষের।

প্রতি বছরই উত্তরের এ পুজোয় কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম হয়। সজল ঘোষের ব্যাখ্যা, “সংক্রমণ শুধু মণ্ডপের ভিতরেই ছড়াবে অন্য কোথাও ছড়াবে না তা নয়। আমরা যদি ত্রিশ জন করে মণ্ডপে প্রবেশ করাই সেখানেও মুশকিল। যেখানে আটকাব সেখানেও তো একটা ভিড় তৈরি হবে। তার চেয়ে লাগামছাড়া ভিড় হলে মণ্ডপ বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয়।” এমন ঘোষণাতেই পরিষ্কার প্রতি বছরের ভিড়ের নির্ঘণ্ট এবার উধাও হবে পুজোর মানচিত্র থেকে। এদিকে হেঁটে নয়, ইন্টারনেটে দুর্গা দর্শনের ব্যবস্থা যাতে করা যায় তার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন চিকিৎসকরাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) খোলা চিঠি লিখেছেন চিকিৎসকদের অন্যতম সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম।

ডা. পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ভিড় মানে গণ আত্মঘাতী পরিস্থিতি। স্বাস্থ‌্যসচিব এনএস নিগমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইএমএ-র কর্তারা। তাঁরা পুজোর পর টেস্ট বাড়ানোর আরজি জানিয়েছেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। কোভিডযোদ্ধা চিকিৎসকদের জন্যও সরকারের কাছে কিছু পদক্ষেপের দাবি করেছে আইএমএ। রাজ্যের করোনা হাল খতিয়ে দেখে চিকিৎসকরা চিঠিতে লিখেছেন, মহালয়া ও বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে লক্ষণীয়ভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে! এটাই সময় সাবধানতা অবলম্বনের। তা না করে উৎসব পালনের আবেগকে অধিকতর মান্যতা দিতে গেলে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে। শুধু চিঠিই নয়, আড়ম্বর বাদ দিয়ে উৎসব পালনের জন্য সই সংগ্রহেও নেমেছেন চিকিৎসকরা। শনিবার সন্ধে পর্যন্ত সাড়ে আট হাজার চিকিৎসক সেখানে সই করেছেন। ডক্টরস ফোরামের আবেদনের সমর্থন জানিয়েছেন ডা. কুণাল সরকার।

প্রখ্যাত এই কার্ডিও থোরাসিক সার্জনের কথায়, “যাঁরা মানুষকে ঠাকুর দেখতে না বেরনোর জন্য আবেদন করেছেন তাঁদের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত। ওই চিঠির তলায় আমারও একটা সই থাকল।” বাঙালির দুর্গাপুজো আর ভিড়কে সমার্থক বলে ডা. সরকার জানিয়েছেন, “ঠাকুর দেখা নয়, পুজো মানেই কলকাতায় ধাক্কাধাক্কি আর হুল্লোড়। অন্যান্য বছরের মতো এবার সে সব করতে গেলে সাংঘাতিক বিপদে পড়বে আম জনতা।” বেসরকারি হাসপাতালে তো অবশ্যই, সরকারি হাসপাতালেও বেড ক্রমশ কমছে। স্রেফ আমজনতাকে নয়, স্বাস্থ্যবিধি মানতে পুজো উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে বলেছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের আবেদন, যাঁর মাস্ক নেই তাঁদের মাস্ক কিনে দিক কমিটিগুলি। পুজো করতে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। চিকিৎসকদের পরামর্শ, সরকারি বরাদ্দের ওই টাকা পুজো কমিটিগুলি মাস্ক কেনার জন্য খরচ করুক।

আনলক পর্যায়ে চলতে শুরু করেছে অটো, বাস। পুজোর বাজার এখন ভিড়ের ছবি চোখে পড়ছে। এমতাবস্থায় পুজোর চারদিন মানুষ কি ঘরে আটকে থাকবে? দ্বিধায় চিকিৎসকরাও। প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি সকলে ভার্চুয়ালি ঠাকুর দেখবেন? ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, ভার্চুয়াল দর্শন করতে গেলে সকলের হাতে স্মার্ট ফোন থাকা চাই। কিন্তু অনেকের কাছেই স্মার্ট ফোন নেই। ভার্চুয়ালি তাঁরা কীভাবে ঠাকুর দেখবেন? মণ্ডপে স্যানিটাইজেশন, সামাজিক দূরত্ববিধি যাতে মানা হয় সেটা সমস্ত পুজো উদ্যোক্তার নজর রাখা উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.