ভাঙাচোরা সিসিটিভি, একই সময়ে সাতদিনের লম্বা ছুটিতে ২ সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী, ঘনিষ্ঠ কারও মারফত গতিবিধির খবর পাওয়া – টিটাগড়ের বিজেপি (BJP) কাউন্সিলর, যুব নেতা মণীশ শুক্লার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উঠে আসছে একাধিক অসংগতি। জোরাল হচ্ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার গিয়েছে CID’র হাতে। কাজ শুরু করেছে রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থাটি।
জানা গিয়েছে, সাধারণত মণীশ শুক্লার মতো জনপ্রিয় নেতার সঙ্গে সর্বদাই অন্তত ৭ জন দেহরক্ষী থাকতেন, তার মধ্যে ২ সশস্ত্র। কারণ, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘুরে আসা মণীশের জনপ্রিয়তার কারণেই তাঁর শত্রুসংখ্যা নেহাত কম ছিল না। আগেও দু’বার খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল তাঁকে। এ বিষয়ে মণীশের অত্যন্ত নিকটজন বারাকপুরের (Barrackpore) বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং নিজেই জানিয়েছেন, ”ওর নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমি করে দিয়েছিলাম।” সেই নিরাপত্তার কারণেই হয়ত আততায়ীরা আগের দু’বার ব্যর্থ হয়।
তবে তৃতীয়বার সফল হল। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ঝাঁজরা করে দিল মণীশ শুক্লার মাথা থেকে পেট পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গ। কিন্তু এত নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা বিজেপি কাউন্সিলরকে এমন নৃশংসভাবে খুনের সুযোগ কীভাবে পেল দুষ্কৃতীরা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ধন্দে তদন্তকারীরা। জানা যাচ্ছে, মণীশ শুক্লার ২ নিরাপত্তারক্ষীই রবিবার থেকে সাতদিনের ছুটি নিয়েছিলেন। রবিবার সন্ধেয় যখন তিনি টিটাগড়ের পার্টি অফিসে যান, তখন সঙ্গে কোনও নিরাপত্তা রক্ষীই ছিল না। অথচ তা হওয়ার কথা নয়। তাহলে কি ইচ্ছা করেই নিরাপত্তারক্ষীদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করেছিল আততায়ীরা? এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
দ্বিতীয়ত, কে বা কারা বাইক চড়ে এসে তাঁকে গুলি করে, তা চিহ্নিত করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে আতান্তরে তদন্তকারীরা। দেখা গিয়েছে, ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও, ঠিক অকুস্থলের সিসিটিভি ভাঙা। অর্থাৎ তার কোনও ফুটেজই ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। কেন ঠিক ওই জায়গায় সিসিটিভিই ভাঙা হবে? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে তদন্তকারীরা একটি বিষয় প্রায় নিশ্চিত – নাইন এমএম কার্বাইনের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র থেকে শার্প শুটাররা গুলি চালিয়েছিলে মণীশকে। সাধারণ বন্দুক ব্যবহার করা হলে এভাবে শরীর ঝাঁজরা হওয়ার কথা নয়। আর এই বন্দুক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত অনেকের কাছেও থাকে না। তাহলে কি সুপারি কিলারদেরই কাজ? তাঁর দৈনন্দিন জীবনের গতিবিধি খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে তবেই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে? আর তার নেপথ্যে রয়েছেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ কেউ? এমনই নানা প্রশ্ন উসকে উঠছে।