আলিপুরদুয়ার জেলার ভূটান সীমান্তে থাকা ঐতিহাসিক বক্সা ফোর্ট-কে তার প্রাচীন চেহারা ফিরিয়ে দিতে এবার উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যেই বক্সা দুর্গের সংস্কারের কাজ সম্পুর্ন হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন দুর্গের সংস্কারে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই খুশি পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে আপামর জেলাবাসী।
উল্লেখ্য, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭০০ফুট উঁচুতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দি রাখতে এই বক্সা ফোর্ট তৈরি করেছিল ইংরেজরা। সেই সময় বক্সা বন্দিশিবির এতটাই দুর্গম ছিল যে একে একটা সময় দ্বিতীয় কালাপানি বলা হত। তবে দেশ স্বাধীন হলেও ঐতিহ্যপূর্ণ ফোর্ট-এর সংস্কার তেমন হয়নি বললেই চলে। এবার এক্কেবারে বিশেষজ্ঞ সংস্থার হাত ধরে পুরনো চেহারা ফিরিয়ে দেওয়া হবে ভগ্নপ্রায় মূল ফোর্টটিকে। কাজটি করবে মূলত পিডব্লিউডি। কলকাতার একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা জড়িত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বক্সা ফোর্ট তৈরির সময় আধুনিক সিমেন্ট এর ব্যবহার ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই চুনসুরকি, চারকোনা পাথর ব্যবহার হবে। দুর্গের আগাছা, জঙ্গল, গাছের শেকড় সরিয়ে মূল কাঠামোর ভেঙ্গে পড়া, ক্ষয়ে যাওয়া অংশ ঠিক করা হবে। চুনসুরকির বিশেষ মিশ্রণ ব্যবহার করা হবে।
জানা গেছে, দুর্গের পুরাতাত্ত্বিক কাঠামোর জরিপ ইতিমধ্যেই হয়েছে। মূল দুর্গ ২ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে রয়েছে। কাজ হবে ১ বর্গ কিমি এলাকায়। প্রথমে দুর্গের বাইরের অংশের কাজ করা হবে। এরপর ভেতরে কাজ হবে। দুর্গের ভেতর থাকা বন্দিদের ঘর, ইংরেজ অফিসার, সৈন্যদের থাকার ঘর, অফিস সবকিছুকে আগের চেহারা দেবার চেষ্টা হবে।
আলিপুরদুয়ার জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে বন্দিশিবির। ৫ কিমি পাহাড়ে ট্রেক করে দুর্গে পৌঁছতে হয়। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার সান্তলাবাড়ি থেকে ভিউ পয়েন্ট প্রায় আড়াই কিমি রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করেছে। পর্যটকদের একটি অংশের কাছে বরাবরই দুর্গম হলেও জনপ্রিয় দুর্গটি।বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একটা ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক হতে চলেছে।
গত ৯ আগষ্ট থেকে কাজ শুরু হয়েছে। খুব সতর্ক ভাবে কাজ হচ্ছে। বাঁশের মাচা বেঁধে দুর্গের বাইরের অংশের কাজ চলছে আপাতত। আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা বলেন, “দুর্গের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই ৫ কোটি টাকা পেয়েছি। বক্সা দুর্গ জেলার একটি অন্যতম ঐতিহ্যপুর্ন স্থান।” আবার বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, বক্সা ফোর্ট হিমালয়ের এমন একটা অংশে তৈরি যা ধ্বস প্রবণ। পাহাড়ের মাটি ভঙ্গুর। বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের। কেন্দ্র সরকারের উচিত অবিলম্বে দুর্গটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। রাজ্য সরকার তার সীমিত সামর্থে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ কাজে হাত দিয়েছে।