শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এবং সংস্কৃত- প্রথম পর্ব

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শ্রীভগবানের শ্রীমুখনিঃসৃত জীবনবেদ। সমগ্র মানবজাতির নানা ধর্ম-মত, ঈশ্বরকে পাওয়ার নানা পথের স্রোত এসে মিশেছে গীতার মহাসমুদ্রে। আঠারো দিনের পরিণতি হয়েছিল যে-ভারতযুদ্ধের, আঠারোটি অধ্যায়ে মহাযোগ শ্রীভগবান
তাঁর একান্ত সখা, অনুরাগী, ঈশ্বর-অভিমুখী, আস্পৃহ এক ব্যষ্টি-আত্মাকে উপদেশ দিয়েছিলেন। জীব-আত্মার
দেহপ্রাণমনবুদ্ধিঅন্তঃকরণে যে- আচ্ছনতার অস্পষ্টতা
ছিল, মিথ্যা ধারণার যে-ব্যামোহজাল অর্জুনের
মনকে অভিভূত করে ফেলেছিল এই উপদেশের
তীব্র শক্তি অর্জুনকে সেখান থেকে সবলে তুলে এনে
সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ছিল। সমগ্র মানবজাতির কাছে আমাদের আবেদন—-জাতি, বর্ণ, ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে ঈশ্বরের শ্রীমুখ-স্ফুটিত যে- বাণী লিপিবদ্ধ তা সকলের হৃদয়-নিঃসৃত ভাষা, বাগ্-বৈভবে অলংকৃত ধ্বনি—- সংস্কৃত ভাষা।

শ্রীগীতার তত্বের গভীরে ডুব দিতে গেলে অবশ্যই নিজের কণ্ঠে, মুখ-গহ্বরে, শ্বাস-প্রশ্বাসে, নাসিকা-মধ্যে, কর্ণে এই সংস্কৃত শব্দরাজির অবস্থান, উৎস ও নিঃসরণ সঠিকভাবে বুঝতে হবে। সঠিক উচ্চারণ বিষয়ের সঠিক ভাববস্তুতে পৌঁছে দেয়

সংস্কৃত শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণের আগে একথা বলা
অপ্রয়োজনীয় হবে না যে সংস্কৃত ভারতীয় ভাষার জননী এবং সংস্কৃত থেকে বিবর্তিত হয়ে পূর্বভারতে যে-
ভাষাগুচ্ছের সৃষ্টি হয়েছিল তার অন্যতম হল মাগধী প্রাকৃত ভাষা। এই প্রাকৃত থেকে যে চারটি আঞ্চলিক
অপভ্রংশের জন্ম হয়েছিল সেগুলি হচ্ছে বাংলা, বিহারী,
উড়িয়া ও অসমিয়া। এই অপভ্রংশিত ভাষা থেকে উপভাষার স্তর পেরিয়ে চারটি ভাষার সৃষ্টি হয়। বাংলা
ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ–তার উচ্চারণ পদ্ধতি, শ্বাসাঘাত, হ্রস্ব-দীর্ঘ স্বরক্ষেপ, ছন্দ ইত্যাদিতে সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে কিছু পার্থক্য আছে। সংস্কৃত পড়ার সময় এগুলি
মাথায় থাকলে ভুল উচ্চারণ হবে না।

*স্বরবর্ণ ‌ :—অ ই উ ঋ
হ্রস্বস্বর(একমাত্রা)
‌ আ ঈ ঊ এ ঐ ও ঔ
দীর্ঘস্বর (দ্বিমাত্রা)
*ব্যঞ্জনবর্ণ :—বাংলার মতই
উচ্চারিত হয়।
বাংলায় রাম উচ্চারিত হয়
রাম্ (শেষে হসন্ত )
সংস্কৃতে রাম(শেষে হস্ নয়)

কিছু বর্ণের ধ্বনিবৈশিষ্ট্য :—
ন উচ্চারণ ন( নাসিকা)
ণ উচ্চারণ(ড়ঁ)(বীণা=বীড়াঁ)
স :জিভ flat থাকে, শ্বাস বের
হবে।(যেমন-সহিত)
শ: জিভ নৌকার মত,শিসের
মত শ্বাস বেরবে (যেমন-
গোশালা)
ষ:জিভ উল্টে তালুতে ঠেকে
জিভের দুপাশ দিয়ে শ্বাস
বের হয় ।(যেমন-বৃষ)
মহাপ্রাণ বর্ণ উচ্চারিত হবে
শ্বাসাঘাতে,বর্গের২য়/৪র্থ বর্ণ
(খ,ঘ,ছ, ঝ,ঠ,ঢ,থ,ধ,ফ,ভ)
উষ্মবর্ণে ভিতর থেকে গরম
হাওয়া বের হয়(হ,শ,ষ,স)
ক্ষ =ক্+ষ~ছ (হিন্দীতে)
ষ~খ(পূর্ব ভারতে)
য/্য :–উচ্চারিত হয় ই+অ
(যেমন: সত্য~সতিঅ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.