রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় আন্তর্জাতিক শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিউইয়র্ক এর স্থানীয় সময় সকাল ন’টা এবং ভারতের স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা নাগাদ রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসভায় সম্প্রচারিত হয় প্রধানমন্ত্রী রেকর্ড করা ভাষণের ভিডিও সংস্করণ। নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রতিবেশীদের প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়ার থেকে পূর্বে তাকাও নীতি। এমনকি এই সব অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহ সর্বত্র ভারত নিজ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সার্বিক মানবিক কল্যাণের জন্য নিরন্তন কাজ করে গিয়েছে। ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব অন্য দেশের দ্বারা প্রভাবিত নয়। তিনি বলেন, করোনা মহামারীর মত এই সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলি বিশ্বের দেড়শোটিরও বেশি দেশে ওষুধ সরবরাহ করেছে। সংকটের দুরহ পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্ববাসীকে আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই ভারতের ওষুধ উৎপাদন এবং সরবরাহ সমগ্র মানবজাতিকে সহায়তা করবে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার জন্য ভারত নিজের কর্তব্য পালন করে যাবে। মানবিকতা, মানবজাতি, মানবিক মূল্যবোধের শত্রুদের বিরুদ্ধে সরব হতে ভারত কখনও দ্বিধাবোধ করবে না। সন্ত্রাসবাদ, আর্থিক জালিয়াতি, অস্ত্র চোরাচালান হচ্ছে সবথেকে বড় মানবিকতার শত্রু। ভারতে তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে আইনের বলে। ভারতের নারী ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মহিলাদের নেতৃত্বস্থানে তুলে আনা এবং উদ্যোগপতি হিসেবে পরিণত করার ক্ষেত্রে ভারতে বিপুল পরিমাণে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। মাইক্রোফিন্যান্স প্রকল্প থেকে সবথেকে বেশি উপকৃত হচ্ছে ভারতীয় মহিলারা। ভারতের প্রসূতিদের ২৬ সপ্তাহে ছুটি দেওয়া হয়। মহামারী উত্তর যুগে এসে দাঁড়িয়ে ভারত আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এর সুফল মিলবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিগত ৭৫বছরে বিভিন্ন দিকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কিন্তু এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আত্মসমীক্ষা করাটা একান্ত প্রয়োজন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ভারত গর্বিত। ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ভারতের ১৩০ কোটি জনগণের মনের কথা তুলে ধরতে এসেছি। বিগত আট থেকে নয় মাস ধরে গোটা বিশ্ব করোনা মহামারীর জেরে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। মহামারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘ কোথায় ছিল? তার সক্রিয় সাড়া কোথায়? রাষ্ট্রসঙ্ঘের অভ্যন্তরে সংস্কারের জন্য ভারতবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের কর্মপদ্ধতি এবং সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। আজও ভারতবাসী রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতি তীব্র ভাবে আস্থাশীল। যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা কি আদৌ কোন দিন যৌক্তিকতা খুঁজে পাবে। এই নিয়ে সন্দিহান ভারতীয়রা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আর কতদিন ভারতকে বাইরে রাখা হবে। ভারত যখন খুব শক্তিশালী, তখন গোটা বিশ্বের কাছে সে বিপদ হয়ে দেখা দেয়নি। ভারত যখন খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল তখনও সে গোটা বিশ্বের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়নি। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে কোনও পরিবর্তন হলে তার প্রভাব গোটা বিশ্বে অনুভূত হয় l সেই দেশকে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে। শান্তি বজায় রাখতে গিয়ে ভারত এমন একটি দেশ যে নিজের বহু সৈনিকের বলিদান দিয়েছে। যখন প্রত্যেক ভারতবাসী রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের অবদানের দিকে তাকায় তখন তারা চায় রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের ভূমিকা আরও বেশি বর্ধিত হোক।
2020-09-27