শিক্ষক তথা সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের সম্পাদকের মহানুভবতায় ঘরহারা অবশেষে ঘরে ফিরে গেলেন।দীর্ঘ আট বছর দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে ঘুরে মানসিক রোগীতে পরিণত হন এই ঘরহারা।অবশেষে পরিজনদের সাথে নিজের বাড়িতে ফিরলেন।
জানা গিয়েছে যে,মধ্যপ্রদেশে অনপ্পু জেলার অমরকন্টক থানা এলাকায় বাড়ি বদ্রীনাথ প্রসাদের।আট বছর আগে মধ্যপ্রদেশেরই আম্বালাক্যান্ট অঞ্চল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয় পুলিশ অনেক খুঁজেও তাঁর সন্ধান পান নি।
ইতিমধ্যেই পেরিয়ে যায় সুদীর্ঘ আটটি বছর!তবুও পরিজনরা তাঁর আশায় পথ চেয়ে ছিলেন।অবশেষে গত কাল উত্তর চব্বিশ পরগণার সীমান্ত শহর বনগাঁ থেকে বদ্রীনাথ প্রসাদ আত্মীয়দের সাথে বাড়ি ফেরার পথে যাত্রা করেছেন।
আরও জানা গিয়েছে যে,এই করোনা আবহের মধ্যেই মাস খানেক আগে তিনি বনগাঁ শহরে ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছান।দীর্ঘদিন যাবৎ অনাহার,অর্ধাহার,অনিদ্রায় তিনি শারীরিক ও মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েন।বনগাঁ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সংবাদপত্র “সীমান্ত বাংলা”-র কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে তিনি শুয়ে ছিলেন।গায়ে নোংরা।তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।মাছি তাঁকে ঘিরে ভনভন করছিল।এই অবস্থাতেই তিনি নজরে পড়েন “সীমান্ত বাংলা”-র সম্পাদক দীপক সিকদারের।দীপকবাবু তৎক্ষণাৎ তাঁর খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।শ্রী সিকদারের আহ্বানে স্থানীয় কয়েকজন সমাজসেবী যুবকরাও এগিয়ে আসেন।সকলে মিলে বদ্রীনাথকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।কয়েকদিনেই উপযুক্ত চিকিৎসা ও সেবায় তিনি দ্রূত আরোগ্য লাভ করেন।ফিরে আসে স্মৃতিও।তারপর থেকে দীপকবাবু তাঁকে নিজের বাড়িতেই রেখে দেন।পাশাপাশি বদ্রীনাথের বাড়ির সন্ধানও চালান।
দীপকবাবু জানিয়েছেন যে,দীপকবাবুর মামা থাকেন মধ্যপ্রদেশের অমরকন্টকেই।তাঁর মাধ্যমেও খোঁজ চলে বদ্রীনাথের বাড়ির।সাহায্য নেওয়া হয় হ্যাম রেডিওর-ও।তারপরই বদ্রীনাথের বাড়ির সন্ধান মেলে।ফোনে বদ্রীনাথের সাথে বাড়ির লোকের কথা বলিয়ে দেন দীপকবাবু।আত্মীয়রা সংবাদ পেয়েই ছুটে আসেন বনগাঁতে।গতকাল (২৫/০৯/২০) বদ্রীনাথ নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।
রওনা হবার আগে বদ্রীনাথ দীপকবাবুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকেন।তাঁর আত্মীয়রাও দীপকবাবুর বদান্যতার জন্য তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানান।
উল্লেখ্য যে,দীপকবাবু স্থানীয় নতুনগ্রাম সুভাষিনী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।তিনি একজন সমাজসেবীও।এবং গত ২৩ বছর ধরে সীমান্ত শহর বনগাঁ থেকেই “সীমান্ত বাংলা” নামে সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘আপোশ নয়,মুখোশ খুলে দেয়’ এই নীতি নিয়েই প্রকাশ করে চলেছেন।তাঁর মাধ্যমেই অনেক যুবক যুবতী সংবাদ জগতে উঠে এসেছেন।তাঁদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক,চিত্রসাংবাদিকও।
বদ্রীনাথকে সুস্থ করে আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে দীপকবাবু বলেন,”এটা এমন কোনো মহৎ কাজ নয়।সামাজিক মানুষ হিসেবে এটা আমার কর্তব্য।অসহায় মানুষদের সাহায্যে প্রত্যেকেরই এগিয়ে আসা উচিৎ।”
সুজিত চক্রবর্তী। (Sujit Chakraborty)