ময়দানে ক্রিকেটার বনাম ক্রিকেটার ঝামেলা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সোজা আম্পায়ার বনাম আম্পায়ার বিবাদ, ব্যাপার গড়াচ্ছে একেবারে থানা-পুলিশ পর্যন্ত এ জিনিস কেউ আজ পর্যন্ত কেউ দেখেওনি। শোনেওনি। ভাবা যায়, এক বোর্ড আম্পায়ারের সঙ্গে ঝামেলা এক সিএবি আম্পায়ারের। সেই বিবাদ এতটাই চরমে পৌঁছোচ্ছে যে, সোজা থানায় গিয়ে বোর্ড (BCCI) আম্পায়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে আসছেন CAB আম্পায়ার? তা-ও কখন? না, যখন ময়দানে ক্রিকেট বলেই কোনও বস্তু নেই!
পুরো ঘটনাটা কী? বেশ কিছু দিন ধরে ময়দানের প্রখ্যাত কিছু আম্পায়ার এবং রেফারি মিলে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। উদ্দেশ্যটা ছিল– দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনে খেলাধুলো বন্দি পড়ে থাকার ফলে রেফারি বা আম্পায়াররা যাতে সব ভুলে–টুলে না যান। সেই কারণে তরুণ আম্পায়ার (Umpire) কিংবা রেফারিদের সপ্তাহে ক্লাস নেওয়া হত, পরীক্ষা নেওয়া হত। যাতে ফের খেলা শুরু হলে মাঠে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোনও অসুবিধে তাঁদের না হয়। এবং এই প্রচেষ্টার সঙ্গে উদয়ন হালদার, প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রেফারিরাও জড়িয়ে ছিলেন। ছিলেন সিএবির আম্পায়ারিং কমিটির সদস্য প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কে জানত, সেখানে এ ভাবে দুই আম্পায়ারে খেয়োখেয়ি বেঁধে যাবে!
প্রথম জন– বিজয় সরকার। যিনি সিএবি আম্পায়ার। দ্বিতীয় জন– সব্যসাচী সরকার। যিনি আবার বোর্ড আম্পায়ার।
এবং এই সব্যসাচীর বিরুদ্ধেই থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে এসেছেন বিজয়। কেন? জবাব দিতে গিয়ে ফোনে প্রায় ফুঁসতে শুরু করেন বিজয়, “ও আমাকে নানা ভাবে হেনস্থা করত। আমার নাম করে অচেনা নম্বর থেকে বিভিন্ন ছাত্রদের ফোন করে আমার নামে কুৎসা রটাত। আর কত সহ্য করব? অনেক করেছি। কিন্তু ব্যাপারটা ক্রমাগত হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। যে কারণে আমি থানায় গিয়ে ডায়েরি করে এসেছি! আর আমার অভিযোগ থানা নিয়েওছে।” সোজা কথায়, স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো ঘটনা। দু’জনকেই চেনেন, এমন কেউ কেউ বলছিলেন যে, বিজয় এবং সব্যসাচী– দু’জনের মধ্যে পুরনো বিবাদ ছিল। যার প্রভাব পড়ছে এ রকম একটা সৎ প্রচেষ্টার উপর।
সিএবির আম্পায়ারিং কমিটির সদস্য এবং এই প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “আমি অনেক চেষ্টা করেছি থামানোর। কিন্তু পারিনি। একটা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রুপটা তৈরি করেছিলাম। কী থেকে কী হয়ে গেল!” আর সব্যসাচী– তিনি কী বলছেন? “যা যা অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, সর্বৈব মিথ্যে। আমি কাউকে উত্যক্ত করিনি। বরং আমি বোর্ড আম্পায়ার বলে প্রথম দিন থেকে আমাকে নানা রকম ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ, আমার জনপ্রিয়তা বেশি। আমার নামে থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে শোনার পর আমি আর এ সবে নেই। ওই গ্রুপ থেকে সরে গিয়েছি,” বলে দেন তিনি। সত্য সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই ময়দান!