ফের শহরে চিকিৎসক নিগ্রহ। বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এমার্জেন্সি বিভাগে কর্তব্যরত ডা. রোহিত কাপুরের গায়ের পোশাক খোলার চেষ্টা করলেন এক যুবক। সোমবার বিকেলের ঘটনায় নিন্দার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা।
রোজকার মতো ওইদিনও ডা. রোহিত কাপুর বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ডিউটি করছিলেন। সেসময় ইমার্জেন্সিতে ভিড় ছিল। চিকিৎসকের কথায়, বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক সন্ধেবেলা নিজের বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন। বৃদ্ধ ভদ্রলোকের ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল। হাতে একটি ব্লাড রিপোর্ট নিয়ে এসেছিল ওই যুবক। সেই রিপোর্ট দেখে ডা. রোহিত কাপুর জানান, “ওষুধের ডোজ বাড়াতে হবে। আমি তো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। যুবককে বলি, আপনি বড়দের কোনও চিকিৎসককে দেখান। তারপর কাল আউটডোরে আমার কাছে আসুন।”
সামান্য এ কথাতেই শুরু গন্ডগোল। অভিযোগ, আচমকাই চিকিৎসকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ওই যুবক। ঘটনার আকস্মিকতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি চিকিৎসক। তাঁর কথায়, “একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে কেন আমি ইমার্জেন্সিতে বসেছি। এটাই ছিল ক্ষিপ্ত যুবকের বক্তব্য। ওই যুবক বলতে থাকে আমি আপনার প্যান্ট খুলে দেব। আমার গায়ে হাত দেয়।” এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসককে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকেন ওই যুবক। দৌড়ে আসেন হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারীরা। বেগতিক দেখে পালিয়ে যান ওই যুবক। আক্রমণকারী ওই যুবকের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে ধন্দ্ব বেঁধে যায়। ইমার্জেন্সি রেজিস্টারে নাম পাওয়া যায়নি ওই যুবকের। তবে ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে, যে নম্বরে ফোন করা হলে উত্তর আসে, “কোথায় বাঘাযতীন হাসপাতাল? আমি তো দিল্লিতে থাকি।”
আক্রান্ত চিকিৎসক
হাসপাতালের সুপার ডা. দেবাশীস মণ্ডলকে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই চিকিৎসক। অনুরোধ করেছেন, দ্রুত যেন হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে আক্রমণকারীকে চিহ্নিত করা হয়। ঘটনার নিন্দায় ফেটে পড়েছেন চিকিৎসক সমাজ। ডা. অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, প্রতিবাদের ভাষা জোরাল না হলে এমন পরিস্থিতির বদল ঘটানো অসম্ভব। সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে রোগীর পরিজনেরা কত প্রভাবশালী, তা জাহির করার একটা প্রবণতা অনেক দিন ধরেই তৈরি হয়েছে। এখন তা দুঃসাহসে পরিণত হয়েছে।
কোভিড আবহে জীবন বিপন্ন করে ডিউটি করছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রতিদিনই তাদের নিগৃহীত হতে হচ্ছে রোগীর পরিবারের হাতে। সম্প্রতি চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কালনা মহকুমা হাসপাতালও। সেখানেও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি রোগীর আত্মীয়রা ভাঙচুর চালায়।